২০১৮ সালের আজকের এই দিনে, বাংলা ব্যান্ড সংগীত জগতের অন্যতম নক্ষত্র আইয়ুব বাচ্চু তার রূপালী গিটার ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন বহু দূরে। তার প্রয়ানের ছয় মাসের মাথায় ঢাকার মগবাজারে তার মিউজিক স্টুডিও এবি কিচেন ছেড়ে দেওয়া লাগে যেটার কারন ছিল অর্থাভাব। সেই এবি কিচেনে রয়েছে আইয়ুব বাচ্চুর রেখে যাওয়া অনেক স্মৃতি। আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রী ফেরদৌস আক্তার চন্দনার কণ্ঠে যেন তার স্বামীর এই সকল স্মৃতি রক্ষা এবং তার সকল আশা নি:শেষ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে আক্ষে’পের কোনো শেষ নেই।
‘গিটার জাদুকর’ ছাড়া তার পরিবার এ পর্যন্ত বেশ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে। চন্দনা বলেন, আইয়ুব বাচ্চুর যারা ভক্ত তাদের জন্য ‘সারপ্রাইজ’ আসছে। তিনি বলেন, এটা শুধু ভক্তদের জন্য নয়, এটা আমাদের জন্যও একটি বড় ধরনের সারপ্রাইজ।
তার ভাষ্য, ‘কিচেন মানে রান্না। রান্নার মতো করেই বাচ্চু গান নাড়াচাড়া করতো দেখে মজা করে সে-ই এ নামটা রেখেছিল। কিচেনটা এখন নাই। আমার পক্ষে চালানো সম্ভব হয়নি। ছয় মাস পর্যন্ত আমি টানতে পেরেছিলাম। এরপর ছেড়ে দিতে হয়েছে। যে মানুষটা সেখানে বসে গান তৈরি করতো, সেখানে হাল ধরার মতো কেউ নেই। তার সন্তানরা সেভাবে গান করে না। যেহেতু ভাড়া বাসায় এটা ছিল তাই এক পর্যায়ে আমাকে ছেড়ে দিতে হয়েছে। তার অনেক গিটার। সেগুলো বাসাতেই রেখেছি। সেগুলো নিয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করছি। বিষয়টি আপাতত সারপ্রাইজ আছে।’
তবে সেই সারপ্রাইজটা গো’পন রাখলেন না আইয়ুব বাচ্চুর সহধর্মিণী। তিনি জানান, এবি কিচেনে ছিল আইয়ুব বাচ্চুর ৪০টি গিটার। যেগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে দেশ-বিদেশের নানা স্থান থেকে। ইচ্ছে ছিল, এগুলো দিয়ে জাদুঘর তৈরি করবেন। আর সেটাই এবার বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। ‘আইয়ুব বাচ্চু মিউজিয়াম’ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে তার পরিবার।
তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, গিটারগুলো ওপেন করে দিতে। জাদুঘর করতে। আইয়ুব বাচ্চুও এটাই চাইতেন। তবে এখানে প্রচুর টাকার বিষয় আছে। যেতে হবে অনেক জায়গায়। দেখি কতটা পেতে পারি। সরকারি বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে হোক- অনেকেরই এখানে যুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে।’
উল্লেখ্য, বাচ্চু এলআরবি-র সঙ্গে এবং একক শিল্পী হিসেবে বেশ কয়েকটি অ্যালবাম প্রকাশ করেন যেগুলো খুব জনপ্রিতা পায়। এলআরবি’র এ পর্যন্ত ছয়টি মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার, একটি সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন এবং ২০০৪ সালে সেরা পুরুষ ভোকাল বিভাগে বাচসাস পুরস্কার জিতেছেন। ২০১৭ সালে তিনি টেলি সিনে আজীবন সম্মাননা পুরস্কারে ভূষিত হন।
ছয় বছর ধরে ফুসফুসের অসুস্থতায় ভোগেন। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে বাচ্চু ঢাকায় তার নিজ বাসভবনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে চলে যান না ফেরার দেশে। তার প্রয়ানের দুই দিন আগে তিনি রংপুর শহরে তার শেষ পারফরম্যান্স করেন। চট্টগ্রামের চৈতন্য গলিতে তার মায়ের সমাধির পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।