Sunday , November 24 2024
Breaking News
Home / Countrywide / বড় বোন স্বামীর ঘর না করায়, করতে হবে ছোট বোনকে, সালিসে রায়

বড় বোন স্বামীর ঘর না করায়, করতে হবে ছোট বোনকে, সালিসে রায়

৪ মাস আগে ছেলে ও মে ( May )য়ের উভয় পরিবারের সম্মতির মাধ্যমে ( May ) বেশ জমকালো আয়োজনে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বিয়ের কিছুদিন পর আখি (ছদ্মনাম) তার বাবার বাড়ি বেড়াতে আসে। তাকে তার শশুর নিতে আসলে স্বামীর সাথে সংসার করবে না বলে জানিয়ে দেয়। স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার বিষয়ে পীড়াপীড়ি করলেও তিনি বেঁকে বসেন। এ নিয়ে মে ( May )য়ের গ্রামে ( May ) গ্রাম্য মাতব্বরদের উপস্থিতিতে একটি সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে ছেলের পক্ষ থেকে আঁখির সাথে বিয়ের যাবতীয় খরচ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দাবি করা হয়।

ছেলের বিয়েতে যে খরচ হয়েছে তা মে ( May )য়ের পরিবার শোধ করতে না পারায় ছোট বোনকে বড় বোনের স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়েছে সালিশকারীরা।
ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের উজিরপুর ( Wazirpur Barisal ) উপজেলার হারতা ( Loser ) ইউনিয়নের লাতারকান্দি গ্রামে ( May )। এ বছরের ২৩ মে ( May ) এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটলেও সম্প্রতি বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এ ঘোষণার পর হারতা ( Loser ) ইউনিয়নের লাথারকান্দি ( Latharkandi ) গ্রাম ও স্বরূপকাঠি উপজেলার বলদিয়া ( Baldia ) ইউপির ডুবি গ্রামে ( May ) তোলপাড় সৃষ্টি হয়। দুই পক্ষের ভিডিও ও অডিও বক্তব্য দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমে ( May )র কাছে সংরক্ষিত আছে।

এদিকে তথ্য নিতে ছেলের বাড়িতে হাজির হওয়ার পরপরই তার বর্তমান স্ত্রী সপ্তম শ্রেণিপড়ুয়া শিক্ষার্থীকে নাজিরপুর উপজেলার কলারদোনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এমএলএসএস মোজাম্মেলের বাসায় দ্রুত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, আঁখি লাতারকান্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। স্বরূপকাঠি উপজেলার শাহাদাত হোসেন ওরফে উকিলের ছেলে সৈকতের (১৯) সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কয়েকদিন আগে তার স্ত্রী আঁখি তার বাবার বাড়িতে যায়। আঁখি প্রায় চার মাস ধরে তার বাবার বাড়িতে ছিল।

সালিশে যা হয়েছে
চলতি বছরের ২২ মে সৈকতের বাবা ছেলের স্ত্রী আঁখিকে আনতে লাথারকান্দি বেয়াইবাড়িতে যান। সঙ্গে ছিলেন সৈকতের ভগ্নিপতি হাচান। তাদের সঙ্গে স্বামীর বাড়িতে আসতে অপারগতা প্রকাশ করেন আঁখি। এমনকি তিনি তার শ্বশুরকেও বলেছিলেন যে তিনি আর যাবেন না।

এরপর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ছেলের বিয়েতে খরচ করা টাকা দাবি করেন সৈকতের বাবা। ওই রাতেই আঁখির বাড়িতে স্থানীয়দের সঙ্গে সালিশ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক চলে গভীর রাত পর্যন্ত। এ সময় মেয়ের বাবা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ সময় সৈকতের বাবা শাহাদাত হোসেন ক্ষতিপূরণ হিসেবে আঁখির ছোট বোনকে সৈকতের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তখন উপস্থিত সালিসকারীরা এমন প্রস্তাবে রাজি হন। আঁখির ছোট বোন তখন রুমে ঘুমাচ্ছিল। পরদিন ২৩ মে সকালে সালিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছোট বোনকে স্বরূপকাঠির সৈকতের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

যা বললেন সালিসকারীরা
বিষয়টি নিয়ে লাথারকান্দি গ্রামের মোহাম্মদ আলী ব্যাপারীর বাড়ির সালিশকারী রুহুলের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ছেলের বাবা ও শ্যালক সবার সামনে মেয়ের বাবা ও মায়ের কাছে দাবি করে- টাকা দাও না মেয়েকে দাও। বিষয়টি আমার পছন্দ না হওয়ায় রাত ৯টায় মিটিং থেকে বেরিয়ে যাই। তারপর শুনলাম ওই বাড়ি থেকে ছোট মেয়েটিকে ওরা স্বরূপকাঠিতে নিয়ে গেছে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আরেক সালিশকারী হুমায়ুনের স্ত্রী লুৎফা বেগম। তিনি বলেন, ছেলের বাবা শাহাদাত ও বোনজামাই মো. হাচান সভায় উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সকলের উপস্থিতিতে সৈকতের বিয়ের খরচ দাবি করেন তারা। একপর্যায়ে তারা বলে, সৈকতের বিয়ের খরচ না দিতে পারায় তারা ছোট মেয়েটিকে সৈকতের বউ হিসেবে দেয়।

একই কথা বারবার বলছিলেন সৈকতের বাবা শাহাদাত। আমি এমন সিদ্ধান্তে রাজি না হয়ে চলে আসি। লুৎফা আরো জানান, একই গ্রামের মোবারেক ডাকুয়া সেখানে সালিস হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আমরা চলে গেলেও পরে জানতে পারি শাহাদাত ও হাচানের দাবিকৃত টাকা পরিশোধ করতে না পারায় সোমবার সকালে স্ত্রী হিসেবে ছোট মেয়েকে স্বরূপকাঠি নিয়ে গেছে।

যা বলছে দুই পরিবার
সৈকতের বাবা শাহাদাত হোসেন মুঠোফোনে বলেন, চার মাস আগে ছেলের বিয়েতে যে টাকা খরচ হয়েছে তা সবার সামনে চাই। অথবা ছেলেটিকে মেয়ের পরিবারের কাছে পুনরায় বিয়ে দেওয়ার দাবি জানাই। এ সময় মেয়ের বাবা টাকা দিতে না পারলে আমরা ছোট মেয়েকে সৈকতের সাথে বিয়ে দেওয়ার দাবি জানাই। তখন উপস্থিত সালিসকারীরা আমাদের প্রস্তাবে রাজি হন। পরদিন সকালে সালিশের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ছোট মেয়েটিকে নিয়ে স্বরূপকাঠি আমাদের বাড়িতে আসে।

সৈকতের মা জানান, তার স্বামী শাহাদাত হোসেন ছেলের বউকে আনতে লাথারকান্দি বেয়াই বাড়ীতে যান। পরের দিন আমার স্বামী ও মেয়ে জামাই বউকে নয়, লাথারকান্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী বউয়ের ছোট বোনকে সৈকতের বউ হিসেবে নিয়ে আসেন।

আঁখির বাবা-মা জানান, ছেলের বাবার দাবি অনুযায়ী টাকা দিতে পারলে ছোট মেয়েকে সেখানে পাঠাতে হতো না। আমরা গরিব মানুষ, টাকা দিতে আমাকে বাড়ি বিক্রি করতে হবে। তাই বাড়ি হারানোর ভ”য়ে আমি টাকার বদলে আমার ছোট মেয়েকে আমারা সৈকতের স্ত্রী হিসেবে পাঠিয়েছিলাম।

সৈকতের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ত‌বে নাজিরপুর উপজেলা কলারদোনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিয়ন মোজাম্মেলের বাসায় অবস্থান কর‌ছেন সৈক‌তের শ্যা‌লিকা।

মোজাম্মেলের মোবাইল ব্যবহার করে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেন সংবাদ প্রতিনিধি। মেয়েটি প্রতিনিধিকে বলে, “আমার বাবা-মা আমাকে সৈকতের বাড়িতে বেড়াতে যেতে বলে।” সে মোতাবেক আমাকে বাবার সাথে সৈকত দুলাভাইয়ের বাসায় পাঠিয়েছে। এই বাড়িতে এসে জানতে পারলাম আমার বড় বোন সংসার করবে না সৈকতের সাথে। এ জন্য সৈকতকে বিয়ে করেছি। কাজি এখনো বিয়ে পড়াননি, কারণ আমার বয়স হয়নি।

এদিকে জানা গেছে, ২৩ মে ছোট বোনকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ না করলেও ২৫ মে বিকেলে বড় বোনের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় তার। ডিভোর্স লেটার লেখা কাজি হারতা ইউপির সত্তার মিয়া বলেন, ২৫ তারিখ আমার অফিসে ডিভোর্স লেটার লেখা হয়। ছোট বোনের বয়স বেশি না হওয়ায় আমি তাকে বিয়ে না করতে বলেছি।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক পর্যায়ে কোন ধরনের বিচার চাওয়া হয়নি। বিষয়টি কিছুটা স্পর্শ-কাতর হওয়ায় ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা করে সেখানকার বিশিষ্ট জনেরা। যেহেতু ঘটনাটি এখন সংবাদমাধ্যমে তাই এটি প্রশাসন পর্যন্ত যেতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

About Rasel Khalifa

Check Also

সংস্কারের নামে ভয়াবহ দুর্নীতি-লুটপাট

সংস্কার ও উন্নয়নের নামে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় দেখিয়ে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *