Thursday , December 26 2024
Breaking News
Home / Entertainment / বড় ছেলের পর নদীতে ভাসলো ছোট ছেলের লাশ, এটিএম শামসুজ্জামানের বাড়িতে শোকের মাতাম

বড় ছেলের পর নদীতে ভাসলো ছোট ছেলের লাশ, এটিএম শামসুজ্জামানের বাড়িতে শোকের মাতাম

তিনি একজন জাতীয় অভিনেতা। পর্দায় তার উপস্থিতি কোটি কোটি দর্শককে বিনোদন দিয়েছে। কখনো খলনায়ক, কখনো বাবা, কখনো কমেডিয়ান- এটিএম শামসুজ্জামান ছিলেন একজন গুণী অভিনেতা ও সম্মানিত ব্যক্তি। তবে পর্দার জীবনে সফল ব্যক্তিটির পারিবারিক জীবনে কষ্ট, এ সাফল্যের অভাব! অশান্তি, খুন, মৃত্যু তার পরিবারের নিয়তি।

এটিএম শামসুজ্জামানের স্ত্রী রুনি জামান। এই দম্পতির ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ে। যার মধ্যে দুই ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। বড় ছেলে কামরুজ্জামান কবির ২০১২ সালে খুন হন।

আর আজ তার ছোট ছেলে কুশলের লাশ পাওয়া গেছে।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) নদী থেকে এটিএম শামসুজ্জামানের ছোট ছেলে এটিএম খালেকুজ্জামান কুশলের (৪৬) লাশ উদ্ধার করা হয়। বরিশালের মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের নাসিরহাট এলাকার জয়ন্তী নদী থেকে প্রয়াত অভিনেতার ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, লাশের সঙ্গে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে।

তিনি হলেন প্রয়াত অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের ছেলে এটিএম খালেকুজ্জামান কুশল (৪৬)। সেখানে ঢাকার সূত্রাপুর থানার দেবেন্দ্র নাথ দাস লেনের ৪৬ নম্বর বাড়ির ঠিকানা দেওয়া আছে।

২০১২ সালে এই ছেলের হাতেই খুন হন এটিএমন শামসুজ্জামানের বড় ছেলে। সেই মামলা দেশজুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। মামলায় অভিযোগ করা হয়, এটিএম শামসুজ্জামানের বড় ছেলে কামরুজ্জামান কবীর ২০১২ সালের ১৩ মার্চ বিকেলে রাজধানীর সূত্রাপুর থানার দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনের ৪৬ নম্বর হোল্ডিংয়ের নিজ বাড়িতে ছোট ভাই কুশলের ছুরিকাঘাতে খুন হন।

এ ঘটনায় এটিএম শামসুজ্জামান বাদী হয়ে পুত্র হত্যার বিচার চেয়ে সূত্রাপুর থানায় আরেক ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই দিনই কুশলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের ১৩ মার্চ দুপুর আড়াইটার দিকে শামসুজ্জামান শুয়েছিলেন। এ সময় গেটে দু’টি বিকট শব্দ শুনে বের হয়ে দেখেন, তার বড় ছেলে কামরুজ্জামান কবীর এক তালা-চাবিঅলাকে দিয়ে বাড়িতে ঢোকার বিকল্প দরজার তালা ভাঙছেন। ছেলেকে তালা ভাঙার কথা জিজ্ঞাসা করলে কবীর তার বাবাকে কটূক্তি করেন। ছেলের অসভ্যতা সইতে না পেরে তাকে চড় মারেন এটিএম শামসুজ্জামান। কবির সাথে সাথে তার বাবাকে বেধড়ক লাথি মারতে থাকে। ধাক্কা দিয়ে ঘরের ভিতর ফেলে দেয়। বাড়ির দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা লেগে এটিএম শামসুজ্জামানের মাথা ফেটে যায়। এ সময় ছোট ছেলে খলিকুজ্জামান কুশল বাসা থেকে বের হয়ে বড় ভাইকে ছুরিকাঘাত করে। চিৎকার শুনে এটিএম শামসুজ্জামানের ছোট ভাই ইব্রাহিম জামান এসে কুশলকে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। কবিরকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানেই কবির মারা যান।

মামলায় নিহত কবীরকে বদরাগী এবং তার পিতা-মাতাকে মাঝে মাঝেই মারধর করতেন বলে উল্লেখ করা হয়। কামরুজ্জামান কবীরের হত্যা মামলার রায়ে তার ছোট ছেলে এটিএম খলিকুজ্জামান কুশলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে আদালত। একই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় তাকে। এবার সেই ‍কুশলের লাশ মিলল নদীতে। জামিনে বের হয়ে পলাতক ছিলেন তিনি।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে সবকিছুতেই অবদান রেখেছেন প্রখ্যাত অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। এটিএম শামসুজ্জামান ছোট পর্দা এবং বড় পর্দা উভয় ক্ষেত্রেই একজন জনপ্রিয়, স্বনামধন্য এবং সফল অভিনেতা। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই অভিনেতা জীবনের শেষ সময়ে এসেও অভিনয়ের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন। কিন্তু পারিবারিক জীবনে অশান্তি ছিল তার নিত্যসঙ্গী। মৃত্যুর আগে ছেলের হত্যাকাণ্ড দেখে ব্যথিত মন নিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হয় এই অভিজাত অভিনেতাকে। এবার ছোট ছেলেটিও মারা গেল। কোটি মানুষের হৃদয়ে ভালোবাসা জাগানো মানুষটির বাড়ির উঠানে একের পর এক বিষাদের ছায়া। অপমৃত্যুই যেন এটিএম পরিবারের নিয়তি!

About Rasel Khalifa

Check Also

দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মিথিলার দাম্পত্যে ভাঙনের সুর

দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা এবং পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতনামা পরিচালক সৃজিত মুখার্জির দাম্পত্য জীবনে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *