ব্রিটেনে বেশ লম্বা সময় ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতায় স্থিতি বিরাজ করছে। সেখানকার অর্থনীতিতেও বড় ধরনের মন্দা দেখা দিয়েছে। যার কারণে দেশটিতে গত ১২ মাসের মধ্যেই তিন তিন জন প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মসনদে শেষ পর্যন্ত যে ব্যক্তি বসলেন তার নাম হলো ঋষি সুনাক। ৪২ বছর বয়সী ঋষি সুনাক এর আগে বরিস জনসনের শাসনামলে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তার পদ থেকে পদত্যাগ করার পর বরিস জনসনের সরকারের পদত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়, তখন তিনি ছিলেন অর্থমন্ত্রী। বরিসও সেই সময়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। সে সময় প্রধানমন্ত্রী পদে লড়াই করে দলীয় নেত্রী লিজ ট্রাসের কাছে হেরে যান তিনি। কিন্তু অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে মাত্র দেড় মাস পর সেই লিজ ট্রাসও পদত্যাগ করেন। আবারও প্রধানমন্ত্রী পদের লড়াইয়ে নামলেন ঋষি। এবার তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন।
এর মাধ্যমে ঋষি ব্রিটেনের ২০০ বছরের ইতিহাস ভেঙে সর্বকনিষ্ঠ এবং প্রথম এশিয়ান প্রধানমন্ত্রী হন।
ব্রিটেনের এই দীর্ঘ অস্থিরতার মধ্যে ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় তিনি এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনায়। অনেকেই তার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানার আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
কিন্তু অনেকের মনেই প্রশ্ন এই ঋষি কে? কোথায় তার ‘শিকড়’?
ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টির এই নেতাকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উচ্ছ্বসিত ভারতীয়রা। ভারতীয়রা তাকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত বলে দাবি করে। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমও একই দাবি করে আসছে।
তবে এবার এই দ্বৈরথে ঢুকে পড়লো পাকিস্তানও। এখন পাল্টা দাবি করা হচ্ছে ব্রিটেনের প্রথম অমুস’লিম প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের ‘শিকড়’ পাকিস্তানে। তাদের দাবি, ঋষির দাদা মূলত পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের বাসিন্দা।
ঋষি সুনকের ‘শিকড়’ কোথায়?
জানা যায় যে ঋষির দাদা, পাঞ্জাবি ক্ষত্রি সম্প্রদায়ের রামদাস সুনাক।, ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির অনেক আগে দেশ ছেড়ে চলে যান। তিনি বর্তমান পাঞ্জাব, পাকিস্তানের গুজরানওয়ালা থেকে চাকরি নিয়ে ১৯৩৫ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে চলে আসেন। প্রসঙ্গত, তিনি দেশ ছাড়ার কয়েকদিন আগে গুজরানওয়ালায় বড় ধরনের গো”ষ্ঠী সংঘ”/র্ষের ঘটনা ঘটে।
রামদাসের স্ত্রী সুহাগরণী অবশ্য সে সময় দিল্লিতে চলে গিয়েছিলেন। ১৯৩৭ সালে তিনি কেনিয়া যান। পরে দুজনেই ব্রিটেন চলে যান।
ঋষির বাবা জসবীর কেনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ব্রিটেনে ডাক্তার ছিলেন। মা উষা ছিলেন একজন ফার্মাসিস্ট। তার পরিবারও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ব্রিটেনে স্থায়ী হয়। এই পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঋষির ‘পাকিস্তান-যোগ’ নিয়ে নানা দাবি-পাল্টা দাবি শোনা যাচ্ছে। ফলস্বরূপ, ঋষি আসলে কোন দেশ থেকে এসেছেন তা নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
তবে তিনি ভারত কিংবা পাকিস্তান যে দেশেরই নাগরিক হোক না কেন তাকে অধিকাংশ সময় ভারতে নিজে ধর্মের সকল ধরনের কার্য সম্পন্ন করতে দেখা গেছে। সেদিক থেকে ভারতের নাগরিকরা দাবি করছেন ঋষি সুনাক প্রকৃতপক্ষে ভারতের নাগরিক। তবে তিনি যেহেতু বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন সেহেতু তার শেকড় কোথায় সে বিষয়েও পরিষ্কার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।