রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি নিয়ে বিতর্ক এড়াতে নির্বাচনের দিন সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানোর কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন। তবে বিষয়টির সঙ্গে একমত নন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে ভোটের দিন সকালে সব ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পৌঁছানো খুবই কঠিন বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এ জন্য তারা আগের রাতেই ব্যালট পাঠানোর পরামর্শ দেন। গতকাল নির্বাচন কমিশনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনও আসেনি বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে ইসি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিরোধী দল নির্বাচনে গেলে তাদের একধরনের প্রস্তুতি থাকবে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। আর না আসলে তারা এক ধরনের প্রস্তুতি নেবেন- এমনটা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন।
এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এর আগে ইসির সঙ্গে পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণের সময় সকালে ব্যালট পাঠানো নিয়ে আপত্তি জানায় পুলিশ। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপ্রতুলতা রয়েছে। অনেক কেন্দ্র দুর্গম এবং সকালে ভোট কেন্দ্রে পৌঁছানো কঠিন ও জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে।
সূত্র জানায়, গতকালের বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন অনেক বেশি দক্ষ (ধারা) বলে জানিয়েছেন। ৫ জানুয়ারী, ২০১৪-এ অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ব্যাহত করার লক্ষ্যে যে নৈরাজ্য ও সহিংসতা চালানো হয়েছিল পুলিশ কঠোরভাবে দমন করতে সক্ষম হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আশ্বস্ত করেছে যে ২০১৪ এবং ২০২৪ সাল একই নয়। তারা বলেন, শুধু সংখ্যার বিচারেই নয়, প্রযুক্তির দিক থেকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক এগিয়ে। যেকোনো ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম। তফসিল ঘোষণায় কোনো সমস্যা নেই। বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে কমিশনকে আশ্বস্ত করতে গিয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান এসব কথা বলেন। এছাড়া ব্যক্তি নিরাপত্তার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বৈধ অস্ত্র মজুদ না করার কথাও জানিয়েছে, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সারাদেশে অভিযান চালাতে হবে, নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো, এবং নাশকতার কোন ঝুঁকি নেই।
অন্যদিকে, বিগত সংসদ নির্বাচনে একজন সশস্ত্র পুলিশের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করলেও এবার দুইজন সশস্ত্র উপ-পরিদর্শকের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় পাহারার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে, যা সভায় ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি আনসার সদস্যের সংখ্যা বাড়তে পারে। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কমিশনকে জানিয়েছে যে তাদের প্রধান কাজ সীমান্ত সুরক্ষিত করা এবং অন্যান্য কাজে মনোযোগ দেওয়া। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করলেও নির্বাচনে সব বিজিবিকে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। তবে বিজিবির যে ৯০০ প্লাটুন বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছিল, এবার সেই সংখ্যা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১১০০ থেকে ১২০০ প্লাটুন দিতে পারবে।
এদিকে বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন-পূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, কোন পদ্ধতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে, নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয় ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়গুলো সভায় আলোচনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তাদের তথ্য উপস্থাপন করেছে, বিভিন্ন বাহিনী প্রধান তাদের সক্ষমতা কী আছে, অতীতে তাদের জনবলকে কীভাবে কেন্দ্রে ও অন্য কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে; দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কীভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে তা তুলে ধরা হয়েছে।
নির্বাচনের আগে এ ধরনের আরও অনেক বৈঠক হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের সচিব আলোচনার বিষয় তুলে ধরে বলেন, হরতাল শেষে একটি বড় রাজনৈতিক দল পূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত পরিবেশ কমিশনের কাছে সন্তোষজনক। তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের দেওয়া বক্তব্য, তাদের প্রতিবেদন- এখন পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজনে বড় কোনো বাধা নেই। গতকালের হরতালের পর বিএনপি তিনদিনের অবরোধ আরোপ করায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে বলে তারা সতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কমিশনাররা বক্তব্য শুনে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এর আলোকে পরে সার্কুলার জারি করা হবে, কেন্দ্রে কীভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে, সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পরে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের যেসব ধাপ রয়েছে, ভোটের তফসিল ঘোষণা থেকে প্রতীক বরাদ্দ, তফসিলের আগে-পরে, ভোটের তারিখ ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার কবে পাঠানো হবে সকালে নাকি আগের রাতে তা নিয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হবে। এখনো অনেক সময় আছে উল্লেখ করে সচিব বলেন, বৈঠক হবে, সার্কুলার জারি করা হবে, কমিশন আলোচনা করে ওই সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।