অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, দেশের ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা চলে গেছে। সেগুলো ব্যাগে বহন করে তো আর নিয়ে যায়নি। কোনো না কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। কোনো অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। বেনামে গেলেও অ্যাকাউন্টের তথ্য ব্যাংকগুলোর কাছে আছে। ১০ লাখ টাকার ওপরে লেনদেন হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে রেকর্ড রয়েছে। তারা চাইলে টাকা কোথায় গেল তা খুঁজে বের করতে পারে। কারণ সব তথ্যই ব্যাংকিং ব্যবস্থায় লিপিবদ্ধ থাকে। টাকা কোথায় গেছে, কার কাছে সবই জানা যায়।
গতকাল ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম উপস্থিত ছিলেন। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এটা অনেক পুরোনো ব্যবস্থা। সে কোথায় টাকা নিয়ে গেছে এটা জেলগেটে গিয়ে কেন জিজ্ঞাসা করতে হবে।
ব্যাংক চাইলে তার লেনদেনের সব তথ্য বের করতে পারে। তিনি কোথায় টাকা পাঠিয়েছেন সব জানা সম্ভব। তিনি বলেন, কানাডার বেগমপাড়া, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থপাচারের তথ্য আমরা শুনি। যেখানে আমরা শুনি-জানি সেখানে ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিগুলো অবশ্যই জানে কিন্তু বলে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, যেকোনোভাবে অর্থপাচার হোক না কেন তা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতি অর্থাৎ অর্থপাচার হলে দেশের ক্ষতি হবে। আগে শুধু আমদানি-রপ্তানিতে দাম কমবেশি দেখিয়ে অর্থপাচার হতো। এখন অর্থপাচারের অনেক মাধ্যম সৃষ্টি হয়েছে। যে যেভাবে সুযোগ-সুবিধা পায় সে সেভাবেই পাচার করে। অর্থপাচার বাড়লে রেমিট্যান্স কমে যাবে। তিনি বলেন, যারা দুর্নীতি করে অর্থ উপার্জন করছে তারা যদি মনে করে দেশে এ অর্থ রাখা নিরাপদ নয়, তাহলে তারা যেকোনো কৌশলে অর্থপাচার করবে। এখন অনেকে দ্বৈত নাগরিক হওয়ার জন্য বিদেশে অর্থ নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, অর্থ পাচারের আরেকটি সহজ মাধ্যম হল অফশোর ব্যাংকিং। এখন অনেক ব্যাংক বিদেশে অফশোর ব্যাংকিং শুরু করেছে, যার মাধ্যমে ইচ্ছা করলে অর্থ পাচার করা যায়। কারণ অফশোর ব্যাংকিং শাখায় কত টাকা জমা হচ্ছে তার কোনো হিসাব নেই। তারা নিজেদের মতো টাকা সংগ্রহ করে নিজেদের মতো করে রাখে।
আর ব্যাংকের মালিকদের কোনো হিসাব নেই। প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্স বাড়ানো সম্ভব নয় উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, রেমিটেন্স বাড়াতে বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আশানুরূপ রেমিট্যান্স আসছে না। আর আসবেও না। হার বাড়িয়ে রেমিট্যান্স আনা যাবে না। কারণ বিদেশে অর্থের চাহিদা যদি না কমে তাহলে কোনোভাবেই চোরাচালান ঠেকানো যাবে না। যাদের টাকা নেওয়া দরকার তারা যে কোনো উপায়ে টাকা নেবে।