নিরাপত্তা প্রদানকারী যদি হয়ে ওঠে সমস্যার কারন তাহলে এর থেকে দুঃখজনক আর কি হতে পারে। যারা অপরাধ দমনে বদ্ধপরিকর টারাই যদি অপরাধ করে তাহলে মানুষ তাদের নিরাপত্তার জন্য কার কাছে যাবে। ডিবি হলো বাংলাদেশের একটি গোয়েন্ডা সংস্থা। সম্প্রতি জানা গিয়েছে ব্যসায়ীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ডিবির সাত সদস্যের ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের টেকনাফের আব্দুল গফুর নামে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ১৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের মামলায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) থেকে বহিষ্কৃত ৭ জনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) আসামিদের উপস্থিতিতে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে বেলা ১১টায় বিচারক রায় পড়া শুরু করেন। পরে বেলা ১২টার দিকে বিচারক এ রায় ঘোষণা করেন।
মামলার বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক এ রায় দেন। বিচারক ৩৬৫ ধারায় ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ৩৮৬ ধারায় ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। ফলে সাজা ৭ বছর হিসেবে গণ্য হবে।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, এসআই মনিরুজ্জামান (৩৫), এসআই আবুল কালাম আজাদ (৩৯), এএসআই গোলাম মোস্তফা (৩৬), এএসআই ফিরোজ আহমদ (৩৪), এএসআই আলাউদ্দিন (৩২), কনস্টেবল মোস্তফা আজল (৫২) ও কনস্টেবল মো. আমিন (২৬)।
মামলার সূত্র জানায়, প্রয়াতের পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর সকালে একটি মাইক্রোবাসে তল্লাশি চালিয়ে ১৭ লাখ টাকা মুক্তিপণসহ ডিবির ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে সেনা সদস্যরা। কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়ক। গাড়ির কাচ ভেঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার পর জড়িত আরও ১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী গফুর আলম বাদী হয়ে ডিবির ৭ জনকে আসামি করে টেকনাফ থানায় অপহরণ ও চাঁদাবাজির মামলা করেন। গত ২৬ অক্টোবর কক্সবাজারের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেন আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম জানান, ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর ডিবি পুলিশের পরিচয়ে সাদা পোশাক পরা ব্যক্তিরা কক্সবাজার শহরের থানার পেছনের রাস্তা থেকে টেকনাফের ব্যবসায়ী আবদুল গফুরকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তাকে ‘ক্রসফায়ারে’ মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে স্বজনদের কাছে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। আলোচনার পর ব্যবসায়ীর পরিবার ১৭ লাখ টাকা দিতে রাজি হয়। টাকা পৌঁছে দেওয়ার পর পরদিন সকালে আবদুল গফুরকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার প্রায় ১০ মাস পর ২০১৮ সালের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে ডিবির ৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত ৫ সেপ্টেম্বর মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে জামিনে থাকা ডিবি পুলিশের ৭ সদস্যের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। আর কক্সবাজার জেলা দায়রা ও জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল মামলার রায়ের জন্য আগামী ২০ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন।
কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে মামলার চার্জ গঠন ও ২১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এছাড়া সাক্ষীদের জেরা, সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন, মামলায় আসামিদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনসহ সব বিচার প্রক্রিয়া সোমবার শেষ হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিশ্বাস ও নির্ভরযোগ্যতা হলো এমন একটি জিনিস যা একবার হারিয়ে গেলে সেই বিশ্বাস আর কখনই ফিরিয়ে আনা যায় না। বাংলাদেশের ডিবি খুব চৌকুস ও দক্ষ। তারা অপরাধীদের ধরতে খুবই পারদর্শী। কোনো অপরাধী অপরাধ করে কখনই ছাড় পায় না তাদের হাত থেকে কখনো। তবে সাধারণ মানুষ মনে করছে তারা যে কাজটি করেছে সেটা খুবই দুঃখজনক।