বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম আলোচিত অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নাসির হোসেন। ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও বেশ আলোচনায় থাকেন তিনি। সর্বশেষ চলতি বছরের গত ১৪ ফেব্রুয়ারি অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করে আলোচনায় আসেন এই তারকা। সম্প্রতি ‘পিবিআই’এর দেয়া তথ্যের আলোকে জানা গেছে, ব্যবসায়ী রাকিব হাসানের সঙ্গে বিবাহ থাকাবস্থায় কেবিন ক্রু স্ত্রী তামিমাকে বিয়ে করে করার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় দাখিলকৃত প্রতিবেদনে প্রত্যেক আসামির বিরুদ্ধে একাধিক জামিন অযোগ্য ধারা আছে।
সেক্ষেত্রে আসামিরা আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক জামিন মঞ্জুর করতে পারেন আবার নামঞ্জুর করে কারাগারেও পাঠাতে পারেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দাখিলকৃত প্রতিবেদন অনুযায়ী তামিমার মা সুমি আক্তারের বিরুদ্ধে সর্বাধিক ছয়টি ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার কথা বলেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। ধারাগুলো হলো- বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৬৮, ৪৭১, ৪৯৪, ৪৯৭, ৪৯৮ ও ৫০০ ধারা। যে ধারাগুলোর সর্বোচ্চ শাস্তি ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড। তার মধ্যে ৪৬৮, ৪৯৪ ও ৪৯৭ ধারা জামিন অযোগ্য।
অন্যদিকে তামিমার বিরুদ্ধে পাঁচটি ধারায় অপরাধ প্রমাণ হওয়ার কথা বলেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। ধারাগুলো হলো- বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৬৮, ৪৭১, ৪৯৪, ৪৯৭ ও ৫০০ ধারা। যে ধারাগুলোর সর্বোচ্চ শাস্তি ২৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড। তার মধ্যে ৪৬৮, ৪৯৪ ও ৪৯৭ জামিন অযোগ্য।
আর নাসিরের বিরুদ্ধে চারটি ধারায় অপরাধ প্রমাণ হওয়ার কথা বলেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। ধারাগুলো হলো- বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৯৪, ৪৯৭, ৪৯৮ ও ৫০০ ধারা। যে ধারাগুলোর সর্বোচ্চ শাস্তি ১৬ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড। তার মধ্যে ৪৯৪ ও ৪৯৭ জামিন অযোগ্য।
দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারায় স্বামী বা স্ত্রী বর্তমান থাকাবস্থায় পুনরায় বিবাহ করার অপরাধের জন্য সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, ৪৯৭ ধারায় অপরের স্ত্রী জানার পরও তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে ব্যাবিচারের জন্য পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, ৫০০ ধারায় মানহানি ঘটানোর জন্য দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, ৪৬৮ ধারায় প্রতারণার উদ্দেশ্যে জাল নথি তৈরির জন্য সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, ৪৭১ ধারায় কোনো নথি জাল জেনেও তা সত্য বলে ব্যবহারের জন্য দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ৪৯৮ ধারায় বিবাহিত নারীকে ফুসলিয়ে নিয়ে যাওয়া বা আটক রাখার জন্য দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান আছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে তামিমার অপরাধ সম্পর্কে বলা হয়, তামিমা সুলতানা তার মা সুমি আক্তারের সহযোগিতায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া তালাকের নোটিশ তৈরি করেন। এর পর তা বাংলাদেশ ডাকা বিভাগে পাঠানো হয়েছে মর্মে ভুয়া রশিদ তৈরি করেন মায়ের সহযোগিতায়। তার পর নোটিশ ও রশিদ সত্য হিসেবে প্রতারণার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেন। এরপর বাদী রাকিবের সঙ্গে তার বিয়ে বলবৎ রয়েছে জানার পরও আসামি মো. নাসিরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ও তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন হয়। সর্বশেষ তিনি রাকিবের সঙ্গে তামিমার তালাক, রশিদ ও নাসিরের সঙ্গে বিবাহর বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বাদির মানহানিতে সহযোগিতা করেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে নাসিরের অপরাধ সম্পর্কে বলা হয়, তামিমা সুলতানার সঙ্গে বাদীর বৈবাহিক সম্পর্ক বলবৎ থাকার বিষয়টি জেনে বুঝে তামিমার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে অবন্ধ হন এবং শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। বাদীর স্ত্রী তামিমাকে নিজের হেফাজতে রাখেন এবং সর্বশেষ বাদীর স্ত্রীকে নিজের স্ত্রী বলে সংবাদ সম্মেলন করে বাদীর মানহানি ঘটান।
তদন্ত প্রতিবেদনে তামিমার মা সুমি আক্তারের অপরাধ সম্পর্কে বলা হয়, মেয়ে তামিমা ও রাকিবের মধ্যে তালাকের নোটিশ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করান এবং তা সত্য বলে উপস্থাপন করান। এর পর বাদী রাকিবের সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে বলবৎ থাকাবস্থায় আসামি মো. নাসিরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করান ও তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করান। সর্বশেষ বাদীর স্ত্রীকে নিজের হেফাজতে রাখেন এবং বাদীর স্ত্রীকে আসামির নাসিরের স্ত্রী বলে সংবাদ সম্মেলন করে বাদীর মানহানি ঘটান।
বাদী রাকিবের আইনজীবী ইশরাত জাহান জানান, আদালত অভিযোগটি পিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করিয়েছেন। পিবিআই এর তদন্ত প্রতিবেদনে প্রাথমিকভাবে দ-বধির ছয়টি ধারার অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে মর্মে উল্লেখ আছে। আদালত সব ধারায় অভিযোগ আমলে নিয়েছেন। যার মধ্যে ৩টি ধারা জামিন অযোগ্য। যেখানে আসামিরা সরকারী ডকুমেন্ট জালিয়াতি করে তা সত্য বলে প্রচার করেছেন। তাই আমরা আশা করতে পারি আসামিরা আত্মসমর্পণ করলে তাদের জামিন নামঞ্জুর হবে।
তবে ফৌজদারি আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সজিব বলেন, যে সকল প্রতিবেদন আমলে নেয়া হয়েছে সেসব ধারার মধ্যে দ-বিধির ৪৬৮, ৪৯৪ ও ৪৯৭ ধারা জামিন অযোগ্য। বাকীগুলো জামিনযোগ্য। জামিনযোগ্য ধারায় জামিন পাওয়া আসামির অধিকার। আর জামিন অযোগ্য ধারায় জামিন দেয়া বা না দেয়া আদালতের এখতিয়ার। আদালত জামিন দিতেও পারেন, নাও দিতে পারেন।
চলতি বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি তালাক না হওয়া অন্যের স্ত্রীকে ফুসলিয়ে বিয়ে করার অভিযোগে ক্রিকেটার নাসির হোসাইন এবং তার স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন রাকিব হাসান। সমন কারী করা আদালত মামলার দায়ের হওয়ার দিনই পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
সম্প্রতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ পরিদর্শক শেখ মো. মিজানুর রহমান আদালতে তামিমা, তার মা সুমি আক্তারের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন জমা দেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীম প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ৩১ অক্টোবর আসামিদের আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তাম্মি ও রাকিবের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে তোবা হাসান নামে ৮ বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। তাম্মি পেশায় একজন কেবিন ক্রু। চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাম্মি ও ক্রিকেটার নাসির হোসেনের বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা বাদীর নজরে আসে। পরে পত্র-পত্রিকায় তিনি ঘটনার বিষয়ে জানতে পারেন এবং তিনি হতবাক হন।
এদিকে ইতিমধ্যে জানা গেছে, বিয়ে জালিয়াতির অভিযোগের পাশাপাশি নাসিরের বিরুদ্ধে আরো নানা অভিযোগের তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর এ অভিযোগের আলোকে নাসিরের সর্বোচ্চ ৭ বছরের সাজা হতে পারে বলেও জানা যায়। এদিকে পূর্বের স্ত্রীকে ফিরে পেতে রাজি আসেন বলে সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন রাকিব নিজেই।