দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রাক্তন ব্রিটিশ নগরমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সম্পদ হস্তান্তরের জন্য জাল নথি ব্যবহার করার অভিযোগ এনেছে। টিউলিপ তার বোন আজমিনা সিদ্দিকের নামে সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে ঢাকার পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে নিজের এবং তার পরিবারের জন্য সরকারি প্লট দখলের অভিযোগ রয়েছে। টিউলিপ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জমি বরাদ্দ থেকে অবৈধভাবে এই সম্পদ অর্জন করেছিলেন। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস এই সংবাদ সহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে যে টিউলিপ তার বোনকে সম্পদ পাইয়ে দিতে নথিতে জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। পরিবার এবং নিজের জন্য ঢাকার পূর্বাচলের নিউ টাউনে প্লট পেতে অবৈধ পথ অবলম্বন করেছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক।
বৃহস্পতিবার দুদক কর্তৃক প্রকাশিত একটি নথিতে বলা হয়েছে যে তার বোন আজমিনা সিদ্দিককে একটি পৃথক ফ্ল্যাট প্রদানের জন্য জাল নথি ব্যবহার করা হয়েছিল। যেখানে অন্য ব্যক্তির স্বাক্ষর জাল করা হয়েছিল। চার্জশিট এখন আদালতে জমা দেওয়া হবে। কারণ, মামলাটি বিচারের জন্য আনার জন্য আদালতের অনুমতি প্রয়োজন। টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এটাই প্রথম নয়। এর আগে ফিনান্সিয়াল টাইমসের একটি প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কথা প্রকাশ করা হয়েছিল। ফলস্বরূপ,শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হন টিউলিপ সিদ্দিক। তার খালা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির কাছ থেকে উপঢৌকন গ্রহণ করেছিলেন তিনি। যে খবর প্রকাশ হওয়ায় বিশ্ব জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অভিযোগ অস্বীকার করলেও শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।
দুদক বাংলাদেশে টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করছে। সংস্থাটি জানিয়েছে যে তারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ সম্পর্কিত দুর্নীতির অভিযোগের বিস্তৃত তদন্তের অংশ হিসাবে টিউলিপ এবং তার বেশ কয়েকজন আত্মীয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। সংস্থাটি দাবি করেছে যে হাসিনা এবং তার আত্মীয়রা নিয়ম-কানুনকে তোয়াক্কা না করেই রাষ্ট্রীয় সম্পদ দখল করেছেন। দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন ফিনান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন যে এটি তাদের দুর্নীতির একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী এবং তার পরিবারের ব্যাপক দুর্নীতি সহ আরও অনেক অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ বছর ধরে কর্তৃত্ববাদী পদ্ধতিতে বাংলাদেশ শাসন করেছিলেন, যা গত বছরের আগস্টে শেষ হয়েছিল। হাসিনার ক্ষমতা রক্তাক্ত বিদ্রোহের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। বিভিন্ন কমিশনের তদন্তে ইতিমধ্যেই হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অবৈধ জমি দখল এবং অর্থ পাচারের বেশ কয়েকটি অভিযোগ উঠে এসেছে। দুদকের দাবি, ঢাকার উপকণ্ঠে পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে ৬০ কাঠা জমি অবৈধভাবে হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বরাদ্দ করা হয়েছিল। তদন্তকারীরা অভিযোগ করেছেন যে অবৈধভাবে সম্পদ গ্রহণে ঢাকায় আরেকটি ফ্ল্যাট নিয়েছেন টিউলিপ। যেটা পাওয়ার জন্য তিনি অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা প্রধান রিয়েল এস্টেট প্রবেশাধিকার পেতে নিয়মকানুনের ধার ধারেনি। এক্ষেত্রে তারা সরকারি লটারি, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং সরকারি কর্মচারীদের জমি পাওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতার মানদণ্ড উপেক্ষা করেছেন।
এই বৃহত্তর তদন্তের অংশ হিসেবে, দুদক অভিযোগ করেছে যে টিউলিপ ঢাকার গুলশান এলাকায় তার বোন আজমিনা সিদ্দিকের জন্য একটি ফ্ল্যাট পেতে একটি নথিতে জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করেছিলেন। তদন্তে দেখা গেছে যে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী সিরাজুল ইসলামের স্বাক্ষর জাল ছিল। আইনজীবী বলেছেন যে নথিতে তার স্বাক্ষর জাল। তিনি এর কোনওটিই প্রদান করেননি। যদিও সিলে তার স্বাক্ষর রয়েছে, তিনি বলেছেন যে নথিতে উল্লিখিত স্বাক্ষরের সাথে তার স্বাক্ষরের মিল নেই। গাজী সিরাজুল ইসলাম তদন্তকারীদের বলেছেন যে তিনি কেবল তার নিজের চেম্বারে নথিপত্র নোটারি করেছিলেন। এই ক্ষেত্রে, টিউলিপ বা আজমিনা সিদ্দিকীর সাথে তার কোনও পূর্ব পরিচিতি ছিল না। বিতর্কিত নথিটি একটি হেবা নথি। এটি সম্পদ উপহার দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত একটি ইসলামী আইন। নথিটি ২০১৫ সালের। সেই সময়, টিউলিপ লেবার পার্টির এমপি ছিলেন। তবে, তিনি এখনও কোনও মন্ত্রী পদ পাননি। দুদকের অভিযোগ, জাল নোটারি তৈরি করে সম্পদের আসল মালিকানা গোপন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমারের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মিত্র টিউলিপ জানুয়ারিতে বলেছিলেন যে তিনি মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করছেন কারণ এটি সরকারকে বিভ্রান্ত করতে পারে। নতুন অভিযোগ সম্পর্কে মন্তব্যের জন্য অনুরোধের জবাবে টিউলিপ সিদ্দিক তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি।