ডলার সংকটের মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ও সুদ পরিশোধ চাপ বাড়াচ্ছে। এক বছরের ব্যবধানে শুধু সুদ পরিশোধ দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। শুধু জানুয়ারিতেই বিদেশি ঋণের ৮০ শতাংশের বেশি অর্থ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঋণ পরিশোধ বৃদ্ধির এই ধারা আগামী বছরগুলোতেও অব্যাহত থাকবে। পর্যাপ্ত ঋণের অভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাধা তৈরি করবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় যেমন কমেছে, উল্টো বাংলাদেশে বৈদেশিক ঋণ ও সুদের চাপ অনেক বেড়েছে। ইআরডির হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে দেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৪৩৯ মিলিয়ন ৮৪ মিলিয়ন ডলার রাইট অফ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৮৫ মিলিয়ন ৬৭ ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে। আর গত জানুয়ারি মাসে বৈদেশিক ঋণ ছাড় ছিল ৩৩ কোটি ৪৬ লাখ ডলার এবং পরিশোধ করতে হয়েছে ২৮ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশকে সুদসহ আসল পরিশোধ করতে হয়েছে ১৮৫ কোটি ডলার।
বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২০ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। অথচ গত বছরের একই সময়ে পরিশোধ করতে হয়েছিল ১২৮ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। পরিশোধ করা মোট ঋণের মধ্যে সুদই রয়েছে ৭৬ কোটি ডলার, দেশি মুদ্রায় তা ৮ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে তা ছিল, ৩৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, দেশি মুদ্রায় তা ৩ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে শুধু সুদ পরিশোধের চাপই বেড়েছে প্রায় আড়াইগুণ।
এদিকে বৈদেশিক ঋণ মওকুফ কমে গেলেও ঋণের প্রতিশ্রুতিও অনেক বেড়েছে। জানুয়ারির শেষে, বিদেশী ঋণদাতারা ৭.১৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গত বছরের একই সময়ে প্রতিশ্রুতি ছিল $১৭৬.৬৭ মিলিয়ন।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, অর্থবছরের প্রথম দিকে সাধারণ উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় কম হয়। বেশ কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বৈদেশিক সাহায্য বরাদ্দের ১০ শতাংশেরও কম ব্যয় করেছে। বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দের একটিও ব্যয় করতে পারেনি। তবে আর্থিক বছর শেষে আর্থিক ব্যয় বাড়বে।
এদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, বৈদেশিক ঋণ ও সুদ পরিশোধ অনেক বেড়ে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতি চাপের মুখে রয়েছে। তিনি বলেন, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে কিছুটা চাপ রয়েছে। খুব বেশি চাপ আছে এমনটা নয়। ঋণ পরিশোধের জন্য আমরা কি মরে গেছি?