বৈঠকের পর ইসিকে তিন বার্তা দিলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন

রাজনৈতিক ক্ষমতার গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) তিনটি বার্তা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

রবিবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সাথে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের উদ্দেশে ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এই তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে রাজনৈতিক ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন কী প্রস্তুতি নিচ্ছে তা আমরা জানতে এসেছি। নির্বাচন কমিশন কী করছে তা আমরা সংক্ষেপে জেনেছি।”

মিলার বলেন, আমি নির্বাচন কমিশনকে মূলত তিনটি বার্তা দিয়েছি। প্রথমত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই দেশের জন্য একটি অন্যতম অংশীদার এবং আমরা এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সময়ে আপনাদের পাশে আছি।

দ্বিতীয়ত তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সঙ্গে তার অংশীদারিত্বকে সকল দিক থেকে আরো শক্তিশালী করতে চায়। এবং আমরা এখানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রয়াসকে সমর্থন করতে এসেছি, যাতে তারা জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে।  

এরপর তৃতীয় বার্তাটি জানাতে গিয়ে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেছি যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করবে। আমরা একটি সুনির্দিষ্ট আর্থিক প্যাকেজের পাশাপাশি আমাদের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা প্রদানের মাধ্যমে সহায়তা করব। এছাড়া বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ চাইলে আমরা নির্বাচন পর্যবেক্ষকও পাঠাবো।


আমরা কেবল সঙ্গে থেকেছি: গণভবন ঘেরাওয়ের সিদ্ধান্ত কাদের জানালেন নাহিদ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কারী নাহিদ ইসলাম বলেন, আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে জনগণের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, “গণভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি আমাদের ছিল না। ঢাকায় এসে জনগণ সিদ্ধান্ত নেয় কী করতে হবে, আর আমরা কেবল তাদের সঙ্গে থেকেছি।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রলীগের বিদ্রোহী অংশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন নাহিদ। তিনি বলেন, “ছাত্রলীগের যে অংশটি বিদ্রোহ করেছে, তারা যদি না বের হতো, তাহলে হলে থাকা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করাটা অনেক কঠিন হতো।”

আন্দোলনের নেতৃত্ব ও সংগঠন সম্পর্কে নাহিদ বলেন, “নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে আমাদের বেশিরভাগ আন্দোলন ব্যর্থ হয়। কিন্তু এবার আমরা শুরু থেকেই সচেতন ছিলাম। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে একটি সমঝোতা ছিল, যার ফলে তারা তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে লোক পাঠায়। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে একটি অলিখিত চুক্তিও ছিল। বিএনপি শুরু থেকেই এই আন্দোলনকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন হিসেবে দেখেছে এবং নৈতিক সমর্থন দিলেও এটিকে নিজেদের আন্দোলন বলে দাবি করেনি।”

আন্দোলনের গতিশীলতা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “এই আন্দোলনের কর্মসূচি ধাপে ধাপে এগিয়েছে। ৩ তারিখে শহীদ মিনারে এক দফা ছাড়া আর কিছু বলার সুযোগ ছিল না, কারণ জনগণের দাবি ছিল একটিই – সরকারের পতন। ৫ তারিখে গণভবন ঘেরাও করার কর্মসূচি আনুষ্ঠানিক ছিল না, কর্মসূচি ছিল ‘ঢাকায় লং মার্চ’। তবে, জনগণ যখন ঢাকায় এসেছিল, তারা কী করবে তা ঠিক করেছিল, আমরা কেবল তাদের সাথেই ছিলাম।”

নাহিদ মনে করেন, আন্দোলনকে ‘মনসুন রেভুলেশন’ বলা হলেও প্রকৃতি সহায় ছিল। তিনি বলেন, “বৃষ্টির মৌসুম হলেও এমন বৃষ্টি হয়নি যে, মানুষ রাস্তায় নামতে পারবে না। এটা অলৌকিক মনে হয়েছে।”

আন্দোলনের নেতৃত্ব কাঠামো সম্পর্কে নাহিদ বলেন, “আমরা কোনও নির্দিষ্ট নেতা নিয়োগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সামনে আনা হবে। তবে বাস্তবতার কারণে একসময় আমাকে মিডিয়ার মুখোমুখি হতে হয়েছে এবং কর্মসূচি ঘোষণা করতে হয়েছে। কিন্তু অনেক তথ্য থেকে নিজেকে সচেতনভাবেই দূরে রেখেছিলাম, যাতে ধরপাকড়ের ক্ষেত্রে আন্দোলন নিরাপদ থাকে।”

সরকার গঠন সম্পর্কে তিনি বলেন, “আসিফ খুব জোরালোভাবে বলেছিলেন যে ছাত্রদের সরকারের প্রতিনিধি হওয়া উচিত, যাতে দাবি বাস্তবায়নের সম্ভাবনা থাকে। আমি তখন একটু দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম, কারণ ক্ষেত্রটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পরে, আসিফ তিন বাহিনীর সাথে আলোচনার সময় সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন।”

নাহিদ বিশ্বাস করেন যে আন্দোলনের সময় বিভিন্ন ঘটনা সত্ত্বেও, নেতৃত্ব এবং কৌশলের কারণে এটি টিকে ছিল।

তিনি বলেন, “যখন আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন তদন্তকারীরা হতাশ হয়ে পড়েন কারণ আন্দোলন সম্পর্কিত আমার কাছে খুব বেশি তথ্য ছিল না। আন্দোলনের সময় বিএনপি বা ছাত্রদল নেতাদের সাথে আমার কোনও যোগাযোগ ছিল না। আসিফই ছিলেন প্রধান যোগাযোগকারী, পরে তাকেও তুলে নেওয়া হয়। তবে মূল লক্ষ্য ছিল আমাকে আটক করা, কারণ আমি দৃশ্যমান ছিলাম।”