পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ টাকা। মজুরি বৃদ্ধির লক্ষ্যে গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের ৬ষ্ঠ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এ মজুরি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা এ ঘোষণা করছি। ৫৬.২৫ বাড়বে। তা হবে ৮ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। বার্ষিক পাঁচ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট থাকবে।
এর আগে বেলা সাড়ে ১২টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মজুরি বোর্ডের সভাকক্ষে এ আলোচনা শুরু হয়। শ্রমিকদের পক্ষে প্রতিনিধি ছিলেন সিরাজুল ইসলাম রনি। অপরদিকে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি ছিলেন সিদ্দিকুর রহমান।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ, নিরপেক্ষ সদস্য অধ্যাপক ডক্টর মোঃ কামাল উদ্দিন এবং শ্রমিক প্রতিনিধিত্বকারী সদস্য ও জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহমেদ।
এর আগে মজুরি বোর্ডের পঞ্চম বৈঠকে শ্রমিক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার ৩৯৪ টাকা করার প্রস্তাব করেন। অন্যদিকে মজুরি বোর্ডে পোশাক কারখানা মালিকদের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন। উভয় পক্ষই প্রস্তাবে তাদের যুক্তি উপস্থাপন করেছে।
পরে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে বারো হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এদিকে মজুরি ২৫ হাজারে উন্নীত করার দাবিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টার, গার্মেন্ট শ্রমিক ও শিল্প রক্ষা জাতীয় মঞ্চ, গার্মেন্ট ওয়াকার অ্যালায়েন্স, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন বিক্ষোভ করছে।
পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য একটি বাস্তবসম্মত ন্যূনতম মজুরি কাঠামো প্রস্তাব করার জন্য শ্রমিকদের সুনির্দিষ্ট দাবিগুলো হল-
১. গার্মেন্টস শ্রমিকদের মৌলিক মাসিক মজুরি মোট মাসিক মজুরির ন্যূনতম ৫১ শতাংশ করা।
২. পদ ও শ্রেণীবিভাগে গ্রেডিং সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আগের ৭টি গ্রেডের পরিবর্তে ৫টি গ্রেডে বিভক্ত করা।
৩. মূল মজুরিতে ১০ শতাংশের একটি বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হবে।
৪. পরপর দুটি গ্রেডের মধ্যে ন্যূনতম মজুরির পার্থক্য ১০ শতাংশ হতে হবে।
৫. নতুন কর্মীদের জন্য তিন মাস শিক্ষানবিশ সময়কাল হিসাবে বিবেচিত হবে।
৬. সোয়েটার কারখানায় শ্রমিককে গত ৩ মাসের গড় মজুরি/3য় গ্রেডের মৌলিক মজুরি প্রদান বা উৎপাদন না হলে পিস রেট, কাজের আগে নির্ধারিত হার।
৭. যেকোনো সম্প্রদায়ের শ্রমিক ও কর্মচারীরা ৬ মাসের বেশি চাকরির ক্ষেত্রে এক মাসের মূল মজুরি হারে ২টি উৎসব ভাতা পাবেন এবং এর বেশি চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিটি ১৫ দিনের মজুরি হারে ২টি উৎসব ভাতা পাবেন। ৬ মাসের বেশি। শ্রমিকের উৎসব ভাতা ১ মাসের মূল মজুরির কম হবে না।
৮. সংশ্লিষ্ট পোস্ট/গ্রেডে সর্বোচ্চ ২ বছরের চাকরির মধ্যে উচ্চতর গ্রেডে পদোন্নতি নিশ্চিত করতে হবে।
৯. পোশাক কারখানায় গ্রাচুইটি ব্যবস্থা চালু করতে হবে। তবে, অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের হিসাবে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করা শ্রমিকদের জন্য একই হারে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের প্রাপ্ত গ্র্যাচুইটি অবসর গ্রহণের পর একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।
১০. মাতৃত্বকালীন ছুটি সবেতনে ৬ মাস দিতে হবে।
১১. শ্রমিকদের পরিবারের সন্তানদের জন্য শিক্ষা ভাতা দিতে হবে।
১২. নতুন মজুরি নির্ধারণের পর যাতে স্থানীয় পর্যায়ে বাড়ি ভাড়া না বাড়ে, তা তদারকি করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জনপ্রশাসন এবং মালিকপক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিটি করে পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে।
১৩. গার্মেন্টস শ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে (সরকারি ভর্তুকিযুক্ত পণ্য বিক্রয় কর্মসূচিতে পোশাক শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করা)।