দশটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান তৈরি পোশাক রপ্তানির আড়ালে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছে। এসব রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯১৮ মার্কিন ডলার পাচারের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। বাংলাদেশি মুদ্রায় টাকার পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।
এর মধ্যে ঢাকায় সাতটি, গাজীপুরে দুটি ও সাভারে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- সাভারের প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেড, গাজীপুরের পিক্সি নিট ওয়্যারস ও হংকং ফ্যাশনস লিমিটেড, ঢাকার ফ্যাশন ট্রেড, এম ডি এস ফ্যাশন, থ্রি স্ট্রার ট্রেডিং, ফরচুন ফ্যাশন, অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড, স্টাইলজ বিডি লিমিটেড ও ইডেন স্টাইল টেক্স।
সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক মোঃ শামসুল আরেফিন খান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জালভাবে তৈরি পোশাকের চালান বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, যার কারণে পণ্যের দাম বা বৈদেশিক মুদ্রা ফেরত যাচ্ছে না, অভিযোগের ভিত্তিতে কাজ শুরু করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিল অব এক্সপোর্ট ঘেটে সংস্থাটি জানতে পারে, তারা জালিয়াতি করে অন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানি করেছে এবং বিল অব এক্সপোর্টের ২৪ নম্বর কলামে নমুনার কোড ২০ ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে কোনো অর্থ দেশে প্রত্যাবাসিত না হয়ে পুরো রপ্তানি মূল্য বাবদ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে।
তদন্তে দেখা গেছে, ১০টি রপ্তানিকারক কোম্পানি বিভিন্ন সময়ে ১ হাজার ২৩৪টি চালানে এ ধরনের প্রতারণা করেছে। রপ্তানি সম্পন্ন হওয়া এসব চালানের বিপরীতে পণ্যের পরিমাণ ৯ হাজার ১২১ মেট্রিক টন, যার সম্ভাব্য পরিমাণ প্রত্যাবাসনযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ ৩,৫৩,৬৬,৯১৮ মার্কিন ডলার বা প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।
প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলো ইউনাইটেডের মতো দেশে টি-শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস, ট্রাউজার, বেবি সেট, পোলো শার্ট ইত্যাদি পণ্য রপ্তানি করে অর্থ পাচার করেছে। প্রতারণার মাধ্যমে আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব ও নাইজেরিয়া।
ওই ১০টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মূলত বিল অব এক্সপোর্টে ন্যাচার অব ট্রানজেকশনের কোড ২০ ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচার করেছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১০টি প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি বিল পর্যালোচনা করে রফতানি বিল ও এক্সপিপিতে উল্লেখিত তথ্যের মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। রপ্তানি বিলে উল্লেখিত সাউথ ইস্ট ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ওই ১০টি প্রতিষ্ঠানের কোনোটিই ওই ব্যাংকের কাছে লেনদেন নয়।
এছাড়া উক্ত ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সাথে সম্পর্কিত নয়। ফলে ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানির বিলে উল্লেখিত বিক্রয় চুক্তি বা এক্সপের রপ্তানি মূল্য ফেরত দেওয়া হয়নি বা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।