বিষয়টি অনেকের কাছে বিশ্বাস নাও হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে এটাই সত্য। এখনো পেরুতে পারেননি উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি। আর এরই মধ্যেই শত কোটি টাকার মালিক বোনে গেলেন রাতুল নাম ঢাকা রাজধানীর সিটি কলেজের এক ছাত্র। অনেকদিন ধরেই পুলিশের নজর দাড়িতে ছিলেন তিনি। আর এরই মধ্যে তদন্তে এই তরুনের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর সব সত্য হাতে পেয়েছে পুলিশ।
জানা যায়, অনলাইনে জুয়া খেলার সাইট চালিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করেছে রাতুল। চলাফেরায় আভিজাত্যের ছোঁয়া। যখন সে যা মনে হয়েছে তাই কিনেছে। তার কাছে সিভিক প্রাইভেট কার, প্রিমিওর মতো গাড়ি রয়েছে। আর বাইক আছে কয়েক হালি। আর ফোন যখন যেটা মনে হয়েছে তখন সেটা কিনেছে। আইফোন ১৪ এর সর্বশেষ মডেলটিও তার হাতে। সেই সব বিলাসিতা সে ভোগ করছে। গ্রামের বাড়িতে বাবার জন্য ৪টি ভেকুও কিনেছেন।
অবৈধভাবে কোটি টাকা উপার্জনকারী রাতুলসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত অপর দুজন হলেন মুন্না ও ইয়াসিন। বুধবার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ক্রাইমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মনিরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত তিনজন ছাড়াও আরও দুজন রয়েছেন। তারা হলেন নবাব ও মুকুল। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, সে মেলবেট নামক একটি অনলাইন জুয়ার বাংলাদেশি মূল এজেন্ট। এছাড়াও আরো কয়েকটি জুয়ার সাইট পরিচালনা করে। এছাড়াও আরো বেশ কিছু জুয়া খেলার সাইট পরিচালনা করে। তিনি এইচএসসি পরীক্ষার্থী। বাবা সাধারণ মহুরীর কাজ করেন। কিন্তু তিনি ৫০ লাখ টাকার প্রাইভেট কারে ভ্রমণ করেন। তার কাছে তিনটি R-15 সংস্করণের মোটরবাইক রয়েছে। যার প্রতিটির মূল্য প্রায় ৫ লাখ টাকা। থাকেন ধানমন্ডির একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে। তার ব্যবহৃত পাঁচটি মোবাইলের দাম প্রায় দুই লাখ বা তার বেশি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জুয়াড়ি জানান, পাঁচ বছর আগেও এই অনলাইন বেটিং এই দেশের সমাজের হাতেগোনা কয়েকজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এখন সারা দেশে প্রতিটি শ্রেণী ও পেশার সাধারণ মানুষ অনলাইন বাজির সাথে জড়িত। ফুটপাতের চা বিক্রেতা থেকে শুরু করে সেলুনের দোকানদার, ফেরিওয়ালা, বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী, বিক্রয়কর্মী থেকে ভবঘুরে, বাস-ট্রাকের চালক-হেলপার, সিএনজি চালক, নির্মাণ শ্রমিক, গৃহকর্মী, রিকশাচালক এবং দিনমজুর এখন দিনের দিনের একটা সময় অনলাইনে বাজি ধরতেই ব্যস্ত থাকে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, অনলাইনে বাজি ধরার সময় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রথমে তিন হাজার তারপর পাঁচ হাজার ধরা হয়। এরপর নেশা বাড়লে ১০ হাজার থেকে লাখ টাকায় চলে যায়। আর এভাবেই শেষ হয় টাকা। এই জুয়ার সাইটগুলির বেশিরভাগ রাশিয়া, ফিলিপাইন, ম্যাকাও, ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, আজারবাইজান, বেলারুশ, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে পরিচালিত হয়। বাংলাদেশি এজেন্টরা এসব সাইটে বাংলাদেশিদের ফাঁদে ফেলছে।
এছাড়াও রাতুলের এই প্রতারণার ফাঁদে পরে রীতিমতো নিঃস্ব হয়েছেন অনেকেই। না প্রকাশে অনেকেই সংবাদ মাধ্যমকে জানান, রাতুলের কোথায় বিশ্বাস করে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেও পরবর্তীতে কিছুই পাননি তারা। উঠলো এখন মানুষের কাছে হাত পেতে চলতে হচ্ছে তাদেরকে।