বাংলাদেশে বর্তমানে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন “চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী,” যিনি ইসকন সমর্থকদের কাছে প্রভু হিসেবেও পরিচিত। তবে, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উসকানির জন্য একজন বিতর্কিত এবং ঘৃণিত ব্যক্তি। সম্প্রতি তার গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে আইন কর্মকর্তাকে হত্যা করার অভিযোগ তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে উঠেছে। এতে করে দেশের মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
চিন্ময়ের পরিচয়:
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আসল নাম চন্দন কুমার ধর। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার করইয়ানগর গ্রামে তার বাড়ি। ১৯৮৫ সালে তার জন্মের ঠিক আগের দিনই তার পিতার মৃত্যু হয়। শৈশব থেকেই পূজা-অর্চনায় আগ্রহী চন্দন তার মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করে হাটহাজারীতে পুণ্ডরিক ধামে চলে যান। সেখান থেকেই তার ইসকন জীবন শুরু হয় এবং পরে তিনি চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী নাম গ্রহণ করেন।
ইসকনের সাথে সম্পৃক্ততা:
চন্দন ইসকনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে, ২০২৩ সালে শিশু নিপীড়নের অভিযোগে তাকে ইসকন থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর ২০২৪ সালে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ইসকন থেকে বহিষ্কার হন। তার উস্কানিমূলক বক্তব্য ও কার্যক্রমের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া:
চিন্ময়ের বিরুদ্ধে জমি দখল থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ করেছেন তার এলাকার লোকজন। তার কর্মকাণ্ডে স্থানীয়রা বিব্রত এবং ক্ষুব্ধ।
সাম্প্রতিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড:
সম্প্রতি চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র হিসেবে সক্রিয় হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উস্কানির অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার ঘটনায় তার সমর্থকদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় তার জনপ্রিয়তা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
সম্প্রীতির প্রতীক করইয়ানগর:
চিন্ময়ের গ্রামের মানুষ, যেখানে মুসলিম, হিন্দু, ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সম্প্রীতির উদাহরণ দেখা গেছে, আজ তার কর্মকাণ্ডের জন্য লজ্জিত। স্থানীয়দের মতে, এই গ্রাম একসময় সম্প্রীতির নিদর্শন ছিল, কিন্তু চিন্ময়ের কর্মকাণ্ড তাদের ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করেছে।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের নাম এখন শুধুই বিতর্কের প্রতীক। তার কর্মকাণ্ড এবং সংশ্লিষ্টতা ভবিষ্যতেও ধর্মীয় সম্প্রীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।