রূপগঞ্জের আনন্দ হাউজিংয়ে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ডুপ্লেক্স বাড়িটি এখন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের দখলে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশে শনিবার বিকেলে বাড়িটি জব্দ করে জেলা প্রশাসন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শফিকুল আলম, দুদকের উপ-পরিচালক মঈনুল হাসান রোশনি, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান মাহমুদ রাসেল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইমন সরকার প্রমুখ।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শফিকুল আলম জানান, বেনজীর আহমেদের মেয়ের নামে সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সে অনুযায়ী সম্পত্তিটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে।
দুদকের আঞ্চলিক পরিচালক মইনুল হাসান রোশনি বলেন, বাড়িতে তালা থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। তবে একটি কমিটি করে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোরশেদ আলমের হেফাজতে আগামী ৩ দিনের জন্য রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে এর ভেতরে থাকা মালামালসহ সবকিছু জব্দ তালিকা করব।
তিনি আরও বলেন, দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ জুন আদালত তৃতীয় দফায় বেনজিরের বিপুল পরিমাণ সম্পদ জব্দ করেন। সেই তালিকায় এই বাংলোও রয়েছে।
জানা গেছে, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের দক্ষিণবাগ চোরাবো মোড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেন বেনজির। আনন্দ হাউজিং নামীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের গড়া আবাসন কোম্পানিতে ২৪ কাঠা জমিতে গড়ে তুলেছেন আলিশান বাড়ি। যেখানে সাধারণের প্রবেশ রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। বেনজীর এ বাড়িতে যেদিন এবং যতক্ষণ অবস্থান করতেন বন্ধ রাখা হতো এখানকার রাস্তা। পুলিশ পাহারায় এক আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হতো সেখানে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হামিদ জানান, লেকের পাশে ২৪ কাঠা এলাকায় বেনজিরের লাল রঙের বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়িটি রয়েছে। এটি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। কিন্তু কেউ ভেতরে ঢোকার সুযোগ পাননি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আট বছর আগে প্রয়াত প্রেমানন্দ সরকারের সন্তানদের কাছ থেকে ৫৫ শতাংশ জমি ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় কিনেছিলেন বেনজির। পরবর্তীতে তিনি ২০১৯ সালের দিকে এই বিলাসবহুল বাড়িটি তৈরি করেন। তবে তার বাড়িটিকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে অনেক গল্প ও রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, বেনজিরের অবৈধ সম্পদের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর এই বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক আবদুল্লাহ ভিতরের মালামাল সরিয়ে নেন। প্রায় প্রতিবারই পুলিশের সাইরেন বাজিয়ে গাড়ির বহর নিয়ে বাড়ি ফিরতেন বেনজির। পুলিশের কড়া নিরাপত্তার কারণে বাড়ির পাশের সড়ক দিয়ে মানুষের চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। পরিচিত-অপরিচিত সুরকার এবং নাটক-সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা মাঝে মাঝে বেনজিরের সঙ্গে আসতেন। সে সময় বাড়িতে গানের আসর বসত।গানের উচ্চ শব্দে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটত স্থানীয়দের, তবুও ভয়ে কখনো কেউ মুখ খুলতেন না।