নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রায় ৫ ঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পর ঘরের ভেতরে থাকা জিনিসপত্রের তালিকা তৈরি করেন তারা। প্রশাসনিক আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে বাড়িতে বিলাসবহুল কিছু পাওয়া যায়নি, ভিতরের সমস্ত জিনিসপত্র ‘স্থানীয় পণ্য’।
বুধবার (১০ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে জেলা প্রশাসকসহ দুদকের একটি দল ওই বাড়িতে প্রবেশ করে। তল্লাশির সময় সাংবাদিকসহ অন্য কেউ যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বাড়ির প্রধান ফটকে আনসার ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
বিকেল ৫টায় তল্লাশি শেষ হলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শফিকুর আলম বলেন, এটি একটি আবাসিক ভবন। একটা পরিবার থাকলে যেই রকম জিনিসপত্র পাওয়া যায়, সেগুলোই পেয়েছি আমরা । রান্নাঘরে চায়ের কাপ, আসবাবপত্র, টিভি—এই ধরনের জিনিসপত্র আমরা পেয়েছি। এসবের তালিকা আমরা করেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যে আসবাবপত্র পাওয়া গেছে তাও স্বাভাবিক মানের বলে মনে হয়েছে। সবই ছিল স্থানীয় পণ্য। ওয়ালটনের টিভি ও এসি ছিল। কিছু শোপিস, কিছু বই, সোফা সেটও পেয়েছি।
কেন সাংবাদিকদের তল্লাশিতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে এডিসি শফিকুর বলেন, আমরা যাতে সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে পারি, সে কারণেই সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে। অন্য কোনো কারণ ছিল না।
তবে বেনজিরের বাড়ির কিছু জব্দ করা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, তল্লাশিতে পাওয়া মালামাল আমরা জব্দ করব না। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা এখানে যা আছে তার তালিকা উপস্থাপন করব।
জানতে চাইলে দুদক জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মঈনুল হাসান রোশনি বলেন, “এই বাড়িতে যা পাওয়া গেছে তা আমরা তালিকাভুক্ত করেছি। এর আগে ডিজিটাল লক থাকায় এ বাড়িতে ঢুকতে পারিনি। আজ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তালাটি খোলা হয়েছে।
এর আগে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপ্রকাশিত আয়ের মাধ্যমে অর্জিত সাবেক আইজিপির সম্পদ বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেন আদালত। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গত শনিবার বিকেলে জেলা প্রশাসন ও দুদকের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল ওই বাড়িতে অভিযান চালায়। পরে বাড়ির সামনে একটি ‘ক্রোক নোটিশ’ টাঙানো হয়।
পূর্বাচলের দক্ষিণবাগ এলাকার গুতিয়াব মৌজায় পুলিশের আনন্দ হাউজিং সোসাইটির ছয়টি প্লটের ২৪ কাঠা জমির ওপর সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড নামে এ বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে। চারপাশে কাঁটাতারসহ সীমানা দেয়াল দেওয়া রিসোর্টের ভেতরে একটি বিলাসবহুল ‘ডুপ্লেক্স বাড়ি’ রয়েছে। প্রশাসনের সাঁটানো ‘ক্রোক বিজ্ঞপ্তিতে’ রিসোর্টটির মালিক হিসেবে বেনজীরের কন্যা ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীরের নাম উল্লেখ রয়েছে।
শনিবারও সেই প্রচারণার নেতৃত্ব দেন শফিকুর আলম। মইনুল হাসান রোশনিও উপস্থিত ছিলেন।
অভিযান শেষে শফিকুর সাংবাদিকদের বলেন, “ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের নির্দেশে সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড নামের ওই সম্পত্তি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করা হয়েছে। আমরা এই সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছি। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে।