Saturday , November 23 2024
Breaking News
Home / Countrywide / বেতন তার ৩০ হাজার, ব্যাংকে লেনদেন শত কোটি টাকা

বেতন তার ৩০ হাজার, ব্যাংকে লেনদেন শত কোটি টাকা

দুর্নীতি এবং অনিয়ম এর ফলে মানুষ এখন নিজেদের চরিত্র থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদের মালিক বনে যাচ্ছেন রাতারাতি অনেকেই উচ্চপদস্থ কর্মচারী না হয়েও অনেকে গাড়ি-বাড়ি এবং অঢেল টাকা পয়সার জোগাড় করে ফেলছেন এই দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে মানুষ নিজেদের মনুষ্যত্বকে বিসর্জন দিচ্ছে শুধুমাত্র মোটা অংকের অর্থ কামানোর জন্য অসৎ পথে এইসব উপার্জন করে তারা নিজেদের ভোগ বিলাসিতা করছে

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করেন তিনি। নন-এমপিও হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত তৃতীয় শ্রেণির এই কর্মচারী অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রশাসনিক কাজকর্মও করেন। সাকুল্যে বেতন পান তিনি ৩০ হাজার টাকা। এছাড়া অতিরিক্ত কাজের জন্য আরও কিছু ভাতা পান তিনি। কিন্তু তার ব্যাংক হিসাবে একশ’ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন। তাও একটি-দুটি নয়, ৯৭টি ব্যাংক হিসাব পাওয়া গেছে তার। ঢাকায় একাধিক বাড়ি-ফ্ল্যাটের মালিক তিনি, ব্যবহার করেন দামি গাড়িও। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম আতিকুর রহমান খান। স্কুলের ভর্তি বাণিজ্যের মাধ্যমে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থা ও নিজস্ব অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বিপুল এই সম্পদের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে আতিকুর রহমান খান প্রথমে কোনও মন্তব্য করতেই রাজি হননি। পরে নিজেই ফোন করে এই প্রতিবেদককে বলেন, আইডিয়াল স্কুলের চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে থেকেই তিনি ব্যবসা করেন। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক থেকে তিনি প্রায় ১০ কোটি টাকার মতো ঋণও নিয়েছেন। ব্যবসা করেই তিনি সম্পদ গড়েছেন।

আতিকুর রহমান খান ২০০৪ সালে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন। ২০১৫ সাল থেকে তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ আছে, ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তিনি ‘সোনার হরিণ’ হাতে পেয়েছেন। প্রতিবছর স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণিতে অবৈধভাবে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করানোর নামে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। এসব অর্থ দিয়েই গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরের কালিগঞ্জের বাসিন্দা আতিকুর রহমানের বাবা একজন কৃষক। আইডিয়াল স্কুলে যোগ দেওয়ার আগে তিনি কনকর্ড নামে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। আইডিয়াল স্কুলে ভর্তি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আয়কৃত অর্থ দিয়ে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। রামপুরার বনশ্রী মসজিদ মার্কেটে বিশ্বাস লাইব্রেরি রয়েছে, আফতাবনগরে বি ব্লকে বিশ্বাস বাজার নামে একটি প্রতিষ্ঠান, রামপুরা বনশ্রী এলাকার ৫ নম্বর সড়কের ১২ নম্বর প্লটে ভিশন-৭১ নামে একটি রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান, আফতাবনগরে চারটি বাড়ি এবং বনশ্রীতে আরেকটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া বনশ্রী এলাকায় খান ফিলিং অ্যান্ড এলপিজি, আফতাবনগরে ন্যাশনাল ফ্রায়েড কিচেন নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

4
আতিকুর রহমান খানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত
দেশের ১৫টি ব্যাংকে আতিকুর রহমান খানের ৯৭টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যাংকগুলো হলো, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড। এসব ব্যাংকে ২০০৭ সাল থেকে চলতি বছরের ২৮ মার্চ পর্যন্ত ১১০ কোটি ৬৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৯২ টাকা লেনদেন হয়েছে।

এরমধ্যে আতিকুর রহমানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, স্ত্রী নাহিদা আক্তার নীপা, বড় ভাই আব্দুস সালাম খান, ফজলুর রহমান খান ও শ্বশুর নুরুল ইসলামের নামেও লেনদেনও রয়েছে। আতিকুরের বড় ভাই আব্দুস সালাম মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের বাংলা মাধ্যম দিবা শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আতিকুর রহমান খানের মালিকানাধীন ন্যাশনাল ফ্রায়েড চিকেনের নামে সাউথইস্ট ব্যাংকে ২০১৫ সালে একটি হিসাব খোলা হয়। ওই হিসাবে প্রায় সোয়া ২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। কিন্তু সরেজমিন আফতাবনগরে সেই প্রতিষ্ঠানের কোনও হদিস পাওয়া যায়নি। এছাড়া আতিকুর রহমান খানের মালিকানাধীন এইচ কে খান এন্টারপ্রাইজের নামে প্রাইম ব্যাংকের একটি হিসাবে ৮ কোটি টাকার লেনদেন পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় বনশ্রীর মসজিদ মার্কেটের বিশ্বাস লাইব্রেরি দেখা গেছে।

আতিকুর রহমান খানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত
ভর্তি বাণিজ্য করেই বিপুল সম্পদ
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই ভর্তি বাণিজ্য করেই বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন আতিকুর রহমান খান। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শাখা ছাড়াও মুগদা ও রামপুরায় পৃথক দুটি শাখা রয়েছে। এই স্কুলে বাংলা মাধ্যমে প্রভাতী ও দিবা এবং ইংলিশ ভার্সনে প্রভাতী ও দিবা শাখায় প্রতি বছর অন্তত ৩ থেকে ৪ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে থাকে। প্রতিবছরই অর্থের বিনিময়ে এখানে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়ে থাকে। অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য হলেন এই আতিকুর রহমান খান।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিভিন্ন শাখায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। এরমধ্যে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী অর্থের বিনিময়ে ভর্তি করানো হয়েছে। প্রতি শিক্ষার্থীকে ভর্তির বিনিময়ে আতিকুল ইসলাম খান ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা নিতেন। এই প্রতিবেদকের কাছে তিন জন অভিভাবক অর্থের মাধ্যমে ভর্তি করানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এছাড়া একজন দালালের সঙ্গে ভর্তির বিষয়ে আতিকুর রহমান খানের কথোপকথনের কয়েকটি রেকর্ড রয়েছে এই প্রতিবেদকের কাছে।

অর্থের বিনিময়ে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি অস্বীকার করে আতিকুর রহমান খান বলেন, ‘তিনি অবৈধ এই ভর্তি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত নন।’

তবে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি। আতিকুর রহমানের ভাষ্য, ‘অবৈধভাবে যাদের ভর্তি করা হয়েছে তাদের লিস্ট এবং রেজুলেশন স্কুলে আছে। তারা কার সুপারিশে ভর্তি হয়েছে তা খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন। আমি এর সঙ্গে জড়িত নই।’

নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি এবং নিজেদের ভোগবিলাসের জন্য মানুষ প্রতিনিয়ত নানান ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। দূর্নীতি অনিয়ম কিংবা অসৎ পথে উপার্জন করে টাকার পাহাড় গড়ে তুলছে তারা সমাজে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত এবং শুধুমাত্র নিজেদের ভালো থাকার জন্য তারা অন্যকে বিপাকে ফেলে দিচ্ছে

About

Check Also

থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে উল্টো কট ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর

ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনের সাবেক আলোচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমরকে কাঁঠালিয়া থানার একটি মামলায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *