বিএনপি সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতার কারনে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে ভুগছেন এমনটা জানার পর তার চিকিৎসা দিতে অবিলম্বে বিদেশে পাঠানো দরকার,বলে জানান চিকিৎসকেরা। তার পরিবারের পক্ষ থেকে, বেগম জিয়ার ছোট ভাই গেল ১১ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদনপত্র জমা দেন যেটাতে বিএনপি নেত্রীকে উন্নততর চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া সম্ভব কিনা সে বিষয়ে সরকার আইনি বিকল্প খুঁজছে, এমনটাই জানান আইনমন্ত্রী।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণের উৎস বের করতে ‘ক্যাপসুল এন্ডোস্কোপি’ করা হয়েছে। গত সোমবার চিকিৎসকরা এ পরীক্ষা করে তাঁর ক্ষুদ্রান্ত্রের নিচে রক্তক্ষরণের নতুন উৎস দেখতে পান। তবে শারীরিক জটিলতার কারণে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এন্ডোস্কোপি করতে পারছেন না চিকিৎসকরা। এ কারণে রক্ত বের হওয়ার উৎসও বন্ধ করা যায়নি। মেডিক্যাল বোর্ডের একজন সদস্য গতকাল জানিয়েছেন, দুই দিন ধরে থেমে থেমে তাঁর রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
এর আগে গত ২৩ নভেম্বর এন্ডোস্কোপি ও কোলনস্কোপি করে রক্তক্ষরণের কিছু উৎস বন্ধ করা হয়। ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী ওই সময় জানিয়েছিলেন, সব উৎস বন্ধ করা যায়নি।
চিকিৎসক ও পারিবারিক সূত্র জানায়, বড় ধরনের রক্তক্ষরণের ঝুঁকি এড়াতে খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে। তার পরও থেমে থেমে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এতে রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে রক্ত দিয়ে ভারসাম্য আনা হয়। কিডনির সমস্যা থাকায় ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে শরীরের ব্যথা ‘অসহনীয়’ পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।
ক্যাপসুল এন্ডোস্কোপির বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এক চিকিৎসক বলেন, এটি ক্যামেরাযুক্ত ক্যাপসুল, মুখে খাওয়ানো হয়। ওই ক্যাপসুল শরীরের ভেতরে প্রবেশ করেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থিরচিত্র তুলতে থাকে, যা কম্পিউটারে দেখতে পান চিকিৎসকরা।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ জে এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘চিকিৎসকরা তাঁকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। তাঁর যে ধরনের চিকিৎসা দরকার, সেই প্রযুক্তি আমাদের দেশে নেই। তাই তাঁকে দ্রুত বিদেশে পাঠালে সুচিকিৎসা সম্ভব।’
এদিকে আইনমন্ত্রীর নিকট খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের একটি টিম স্মারক লিপি দেন যেখানে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আইনগত দিকটি খতিয়ে দেখার জন্য সময় চান। এরপর আইন মন্ত্রনালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি স্বরাস্ট্র মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হলে সে বিষয়ে স্বরাস্ট্র মন্ত্রী বলেন, বেগম জিয়ার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার আইনগত কোনো সুযোগ নেই। তাই অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়টি।