Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / বৃটেনের হাতে রয়েছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ

বৃটেনের হাতে রয়েছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ

বাংলাদেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে ব্রিটেনের কাছে। কোনো জবাবদিহিতা ছাড়াই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে বলে মন্তব্য করেছে দেশটি। সম্প্রতি ব্রিটিশ ফরেন অফিসের বার্ষিক কান্ট্রি পলিসি অ্যান্ড ইনফরমেশন নোটের বাংলাদেশ বিভাগে এই মন্তব্য করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, পুলিশ বাহিনীতে ব্যাপক দুর্নীতি রয়েছে। দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা কোনো জবাবদিহিতা ছাড়াই মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে। এর নিশ্চিত প্রমাণ রয়েছে।

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় ঘুষ ও দুর্নীতি ব্যাপক, ব্রিটিশ তথ্য নোটে সংক্ষিপ্তভাবে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করছে। আর নিম্ন আদালতে তা বেশি হচ্ছে। এসব কারণে বিচার কার্যক্রমে ধীর গতি দেখা দেয় এবং মামলা জট লেগে থাকে।

বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিকদের কার্যকর নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। তবে এটা সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা এবং বিশেষ করে সরকারি দলের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়।

বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী কিংবা যাদেরকে সরকার বিরোধী মনে করা হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে বৃটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের নোটে বলা হয়েছে।

পুলিশ বাহিনীর সমালোচনা করে ব্রিটিশ নোটে বলা হয়, পুলিশের মধ্যে দুর্নীতি ও ঘুষের প্রচলন রয়েছে। পুলিশ বাহিনীকে বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সরকারের সঙ্গে এই বাহিনীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। সরকার বিরোধী ও ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার হিসেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ব্যবহার করে।সরকার দাবি করছে, পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা এবং বিশ্বাস উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অধিকতর জনবান্ধব হওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই পুলিশকে বিশ্বাস করেনা। তারা দুর্নীতি এবং সহিংসতার জন্য পুলিশকে দায়ী করে থাকে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ ফরেন অফিসের নোটে বলা হয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিশেষ করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), ডিবি পুলিশ এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক, অবমাননাকর আচরণ ও শাস্তির মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে থাকে। তাই তাদের কোনো জবাবদিহি করতে হয়না।

বলা হয়েছে, বিশেষ করে যাদের বিরোধীদলের সমর্থক মনে করে আটক করা হয় তাদের রিমান্ড কিংবা শাস্তি দেবার হাতিয়ার হিসাবে শারীরিক এবং মানসিক দুই ধরনের নির্যাতনই করে থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের তথ্যমতে, ২০২২ সালে কারা হেফাজতে ১০, ২০২১ সালে ৮ এবং ২০২০ সালে ১৯ জন লোকের মৃত্যু হয়েছে। প্রায়ই এসব ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

পুলিশের বেআইনি গ্রেপ্তারের বিষয়ে নোটে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার ও আটকে পুলিশ তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। পুলিশ বেআইনি গ্রেপ্তার করে, বেশিরভাগ রিপোর্ট থেকে বোঝা যায় যে এই গ্রেপ্তারগুলি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বড় ধরনের বিক্ষোভের সময় পুলিশ এ ধরনের গ্রেপ্তার করে। এসব বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবৈধ গ্রেপ্তার ও আটকসহ অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে।

গুমের বিষয়ে নোটে বলা হয়, বাংলাদেশে একের পর এক গুমের ঘটনা ঘটছে। এসব গুমের শিকার অধিকাংশই রাজনৈতিক বিরোধী কর্মী ও সমালোচক। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আগস্ট ২০২১-এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি নিয়মিতভাবে স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী অন্তর্ধানের সাথে জড়িত। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ রয়েছে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে অন্য যে কোনো বাহিনীর চেয়ে গুমের জন্য র‌্যাব বেশি দায়ী। র‌্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর গুম কমেছে। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো নিখোঁজের বিষয়ে রিপোর্ট করে যাচ্ছে। গুমের শিকার অনেকেই সরকারের সমালোচক।

এতে বলা হয়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ৬১০ জন নিখোঁজ হয়েছে।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের নোট অনুযায়ী, পুলিশ, ডিবি পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এবং র‌্যাবসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একে ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ এবং পাল্টা হত্যা বলে চালিয়ে দেয়। এটা করা হয় খুনের দায় থেকে দোষীদের বাঁচানোর জন্য। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের মতে, ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

বিচার বিভাগের সমালোচনা করে নোটে বলা হয়, আইনে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিধান থাকলেও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এই স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করেছে। নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয়েছে।

About Nasimul Islam

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *