ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় বুড়িগঙ্গা নদীতে মর্নিং বার্ড নামের একটি লঞ্চ ডুবে ৩৪ যাত্রীর প্রয়ানের ঘটনায় আরও সাতজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। রোববার (৩ জুলাই) ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এএইচএম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়ার আদালতে পিয়ন ফকির চাঁন, শাহ আলম, ইসমাইল ও রিতা সাক্ষ্য দেন। তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আগামী ২২ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
বুড়িগঙ্গা নদীতে মর্নিং বার্ড ডুবে ৩৪ যাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় লঞ্চ মালিক মোসাদ্দেক হানিফ সাদসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন সাতজন।রোববার ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এএইচএম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া তাদের পক্ষে সাক্ষ্য দেন। আদালত পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২২ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন। সোমবার আদালতের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সাক্ষীরা হলেন কেরানীগঞ্জের যমুনা ব্যাংকের আগানগর শাখার পিয়ন ফকির চাঁন, শাহ আলম, ইসমাইল ও রিতা। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- দেলোয়ার হোসেন, আবু সাঈদ, সেলিম হোসেন, আবদুস সালাম, শিপন হাওলাদার, শাকিল হোসেন, জাকির হোসেন, আবুল বাশার মোল্লা, সুকানি নাসির মৃধা ও মো. হৃদয়। ২৯শে জুন, ২০২০ তারিখে মর্নিং বার্ড নামে একটি লঞ্চ মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সদরঘাটে পৌঁছানোর আগেই চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ লঞ্চটি ডুবে যায়। দুর্ঘটনায় মর্নিং বার্ডের ৩৪ যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
পরদিন ৩০ জুন সদরঘাট নৌ পুলিশের এসআই শামসুল আলম বাদী হয়ে ঢাকা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মামলায় দুর্ঘটনায় জড়িত লঞ্চটিকে ঠেলে দেওয়ার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ-সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় দণ্ডবিধির ২৮০, ৩০৪ (ক), ৪৩৭ ও ৩৪ ধারায় বেপরোয়া লঞ্চে মানুষ প্রাণনাশ ও ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্ত শেষ করে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শহিদুল আলম ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ সোদসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। ১৮ জানুয়ারি আদালত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।
অভিযোগ অনুযায়ী, লঞ্চের মালিক ময়ূর কোম্পানির ম্যানেজার, সুপারভাইজার, মালিক এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের কিছু কমোড এবং কার্গো, মাস্টার, সুকানি, ড্রাইভার এবং গ্রিজলি আনলোড করার নির্দেশ দেন। যার কারণে ঘাতক লঞ্চের মাস্টার, চালক, সুকানি ও গ্রিজলি দ্রুত মালামাল ডেলিভারির জন্য বোগদাদিয়া ডকিয়াও ছেড়ে টার্মিনালের দিকে এগিয়ে যায়। তাছাড়া সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও লঞ্চ মালিক বা অন্য কর্মকর্তারা যথেষ্ট লোক নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হলো তাদের লঞ্চ মাস্টার বা সুকানি হেলপার দিয়ে চালানো। জরিপ সনদ অনুযায়ী যাদের লঞ্চটি পরিচালনার কথা ছিল তারা লঞ্চে ছিলেন না। অভিযুক্ত আবুল বাশার, জাকির, নাসির, শিপন, শাকিল, লঞ্চের গতিবেগ অনেক বেশি হওয়ায় তাদের হৃৎপিণ্ডের দিক ও লঞ্চটি চলাচলের সময় ভুল ছিল। যেখানে গতি কম হওয়ার কথা, সেখানে সামনের গিয়ারে রেখে দ্রুত ও বেপরোয়াভাবে লঞ্চের গতি বাড়ানো হয়। এটি দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
অপরদিকে লঞ্চটির মালিক মোসাদ্দেক হানিফ সোদ, ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন, সুপারভাইজার আবু সাঈদ, সেলিম হোসেন ও সালামরা ময়ূর কোম্পানির সার্বিক ব্যবস্থাপক। তাদের ভুল নির্দেশনা ও অব্যবস্থাপনার ফলে ৩৪ জন নিরীহ প্রাণ হারিয়েছে। শিকারের লঞ্চ ম্যানিং বার্ড, মাস্টারমাইন্ডদের বারবার সংকেত সত্ত্বেও, অভিযুক্ত লঞ্চ অপারেটররা দ্রুত ডকে পৌঁছানোর আশায় পার হওয়ার চেষ্টা করেছিল। এতে ম্যানিং বার্ডের সাথে সংঘর্ষ হয় এবং লঞ্চটি চোখের পলকে ডুবে যায়।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুন এমএল মর্নিং বার্ড নামের একটি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে সদরঘাটের দিকে যাওয়ার সময় শ্যামবাজারের কাছে ময়ূর-২ লঞ্চের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ৩৪ জন প্রয়াত হয়। লঞ্চ ডুবির ঘটনায় অবহেলায় প্রাণনাশের অভিযোগে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।