বাল্যবিবাহ নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ চলে আসছে বিভিন্ন ধরনের আইন কানুন। কিন্তূ কোনো ভাবেই যেন তা নিয়ন্ত্রনে আসছেনা। এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি দমনে আসেনি তা। প্রচুর কড়া আইন ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন জায়গায় শোনা যায় বাল্য বিবাহের ঘটনা। বাল্যবিবাহেরও তো একটা ধরন থাকা উচৎ! এমনকি শুনেছেন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া বালিকা শিশুর বিয়ে! হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া শিশুর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে ২২ বছরেরেক যুবকের। এমনই একটি ঘটনা ঘটে আমাদের দিনাজপুরে।
মাথায় টুপি আর গায়ে শীতের জামা পরে বিয়ের আসরে উপস্থিত পাত্র রুবেল হোসেন (২২)। বিয়ে পড়াতে কাজী রেহান রেজাও উপস্থিত। ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া বৃষ্টি আক্তারের বিয়ের সকল আয়োজন শেষ। হঠাৎ করেই মেহমান হিসেবে হাজির উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিমল কুমার সরকার। ভূ-দৌড় দেয়া কাজীকে ধরে বাল্য বিয়ে পড়ানোর অপরাধে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। আর পাত্র রুবেল হোসেন কে দুই হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) রাত ১০ টার দিকে দিনাজপুর বিরামপুর উপজেলা খানপুর ইউনিয়নের ন্যাটাশন এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। দণ্ড প্রাপ্ত নিকাহ্ রেজিস্ট্রার (কাজি) মোঃ রেহান রেজা (৪৭) চেংমারী গ্রামের হুমাউন রেজার ছেলে। তিনি খানপুর ইউনিয়নের নিকাহ্ রেজিস্ট্রার কাজি হিসেবে কাজ করছিলেন। পাত্র রুবেল ইসলাম (২২) নবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ ইউনিয়নের সেকেন্দার আলী ছেলে। উপজেলা নিবার্হী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইউএনও পরিমল কুমার সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ভ্রাম্যমান আদালত সুত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে খানপুর ইউনিয়নের ন্যাটাশন এলাকায় ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্রীর বিয়ের আয়োজন চলছে, এমন খবরে থানা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনা স্থলে হাজির হন ইউএনও। বিয়ের জন্য নিকাহ্ রেজিস্ট্রার খসড়া লেখাও শেষ পর্যায়ে। এসময়, ইউএনও উপস্থিত টের পেয়ে কাজি দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করে আর বরের পাশে কণে সেজে মেয়ের ভাবি বসে পড়ে। বিষয়টি ইউএনও’র নজরে আসে।
জানতে চাইলে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইউএনও পরিমল কুমার সরকার বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া বৃষ্টি আক্তার নামে এক ছাত্রীর বাল্যবিয়ের হচ্ছে এমন খবরের সত্যতা পেয়েছি। বাল্যবিয়ের পাত্র বেশে রুবেল হোসেন কে দুই হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। আর নিকাহ্ রেজিস্ট্রার কাজি রেহান রেজাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হচ্ছে।
এত কঠোর আইন ব্যবস্থার মধ্য দিয়েও যেন কিছুতেই থামছে না বাল্যবিবাহ। মানুষ বুঝেও যেন অবুঝ নিজেদের সন্তানের ক্ষতির ব্যাপারে। তাহলে এর নির্মূল কোথায়! কিছু কিছু জায়গায় ধরা পড়ে শাস্তি পায় কিন্তূ কিছু জায়গায় চলমানই থেকে যায়।দরকার আরো বেশি সচেতনতা, আরো কড়া আইন ব্যবস্থা।