শরীয়তপুরের ডামুড্যায় বিয়ের দাবিতে স্কুল শিক্ষকের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন দুই সন্তানের জননী এক প্রবাসীর স্ত্রী। স্কুল শিক্ষক আক্তার হোসেনের সঙ্গে ওই নারীর প্রায় আট মাস ধরে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। ওই নারী জানান, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বেশ কয়েকবার শারীরিক মিলন করে বিয়ে না করায় তিনি স্কুল শিক্ষকের বাড়িতে থাকেন।
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার ধানকাঠি ইউনিয়নের চরপাতালিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আক্তার হোসেন কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, চর হাওলাদার, ৫৫ নং বাহের এবং চরপাতালিয়া গ্রামের হাসান আলী মাস্টারের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, ওই নারীর সঙ্গে আক্তার হোসেনের দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্ক ছিল। গত রমজানে সবাই যখন তারাবির নামাজ পড়ত, তখন তারা আক্তার হোসেনের ঘরে বসে গল্প করত।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হালেম খান জানান, কয়েকদিন আগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি নিয়ে বসেন। কিন্তু আক্তার হোসেন না আসায় আমরা কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারিনি। গত রমজানে আমি তাকে সতর্ক করে দিয়েছিলাম ওই মহিলার সাথে সম্পর্ক না করার জন্য। কিন্তু তিনি আমাদের কথা শোনেননি।
আক্তার হোসেনের বাড়িতে থাকা ওই নারী বলেন, আমি আক্তার হোসেনকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই সম্পর্কের জন্য সে আমার বাবার বাড়িতেও গিয়েছিল। আমার স্বামী প্রবাসী। গত জানুয়ারিতে আমার স্বামী বিদেশে যাওয়ার পর আক্তার হোসেন আমার স্বামীকে আমার ছেলেকে তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। তার কথামতো ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করানো হয়। সে স্কুল থেকেই আমার সাথে সম্পর্ক করার চেষ্টা করে। প্রথমে রাজি না হলেও তিনি রাজি হলে একপর্যায়ে রাজি হয়ে যাই। এরপর বাড়ির জন্য একটি নতুন টিভি কিনে আক্তার হোসেন। তিনি আমাকে টিভি দেখতে যেতে বললেন। আমি আক্তারের বাড়িতে গেলে সে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও রেকর্ড করে রাখে। তিনি আমাকে সেই ভিডিও দেখাতেন এবং নিয়মিত তাঁর বাড়িতে আসতে বলতেন। বাড়িতে এলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সেক্স করত। এরপর সে আমার বাড়িতে এসে পড়ালেখার নামে আমার সন্তানদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করত।
তিনি আরও বলেন, আক্তার হোসেন কিছুদিন আগে আমাকে বিয়ে করার জন্য ঢাকায় নিয়ে যায়। সেখানে আক্তার আমাকে তার ভাই জব্বার হোসেনের বাড়িতে রেখে আসেন। পরে জব্বার হোসেন আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। আমার স্বামীর বাড়ির লোকজন এ ঘটনা জানতে পেরেছে। আমার স্বামী আমাকে ডেকে বললেন যে তিনি ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছেন। এখন স্বামীর বাড়ি, বাপের বাড়ি কোথাও যেতে পারি না। তাই বিয়ের দাবিতে আক্তার হোসেনের বাড়িতে আসি। হয় আমি আক্তারকে বিয়ে করব, নয়তো আখতারের ঘরেই মরব। এই বাড়ি ছাড়া আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই।
আক্তার হোসেনের মা ফাতেমা বেগম বলেন, আমি কিছু জানি না। ওই মেয়েটি আমার ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে দাবি করে বাড়িতে আসে। আমি মেয়েটিকে বুঝিয়ে বললাম, সে যেন ঢাকায় চলে যায়, গার্মেন্টসে কাজ করে এবং ছেলে মেয়েকে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু সে আমার কথা শোনেনি, আমার মর্যাদা নষ্ট করেছে। আমার ছেলে আক্তার হোসেন এখন কোথায় আছে জানি না।
বাহের চর হাওলাদার কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বশির আহমেদ জানান, তিন দিনের ছুটি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিনি বিদ্যালয়ে আসেননি। শিক্ষা অফিস থেকে শুনেছি আক্তার হোসেন ১৫ দিনের ছুটি নিয়েছেন। আমি মানুষের মাধ্যমে জানতে পেরেছি এমন কিছু হলে তা অবশ্যই নিন্দনীয়। একজন শিক্ষক এটা করতে পারেন না।
ধানকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মাওলা রতন বলেন, আক্তার হোসেন ও ওই নারীর বিষয়টি নিয়ে আমরা বসেছিলাম। মেয়েটি ছেলেটিকে বিয়ে করবে কিন্তু ছেলেটি বিয়েতে রাজি না হওয়ায় আমরা সমাধান করতে পারিনি। এখন বিয়ের দাবিতে আক্তার হোসেনের বাড়িতে অবস্থান করছেন ওই নারী।
ডামুড্যা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন জানান, অসুস্থতার কারণে আক্তার হোসেন ১৫ দিনের ছুটি নিয়েছেন। তার নামে নৈতিক স্খলনের একটি বিষয় জানতে পেরেছি। কেউ অভিযোগ করলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। একজন শিক্ষক মানুষ তৈরির কারিগর, একজন প্রকৃত শিক্ষক এ ধরনের কাজ করতে পারেন না।