স্থানীয় পর্যায়ে এক তরুনীর সাথে পরিচয়ের মাধ্যমে বন্ধুত্বের সম্পর্ক। সেই বন্ধুত্বের সম্পর্কের মাধ্যমেই আস্তে আস্তে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে তারা দুজনেই বিয়ে করেন। বিয়ের কথা জানিয়েছেন ভুক্তভোগী তরুনী, তবে প্রেমিক এই বিয়ের কথা শিকার করেননি। অভিযুক্তের বাড়িতে অনশন করার পর থেকেই প্রেমিক পালতক রয়েছেন।
বিয়ের দাবিতে পাঁচ দিন ধরে নিপুণ রায় (২৩) নামে এক যুবকের বাড়িতে অবস্থান করছেন এক তরুণী। এ অবস্থায় শিক্ষকের মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যায় ওই যুবক। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের নয়নী বকডোকরা বাবুপাড়া গ্রামে। নিপুণ রায় ওই গ্রামের বাবু ভূপেশ চন্দ্র রায়ের ছেলে। সে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্র। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই বাড়িতে থাকা কিশোরীর (২১) বাড়ি সদর উপজেলায়। গত ১৯ জুলাই থেকে বিয়ের দাবিতে প্রেমিক নিপুনের বাড়িতে অবস্থান করেন তিনি। তবে টাকার বিনিময়ে মেয়েকে বাড়ি যেতে বলেনি ছেলের পরিবার। এদিকে ২৩ জুলাই রাতে প্রেমিক নিপুন বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের এক শিক্ষকের মেয়েকে (২২) বিয়ে করে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। স্থানীয়রা জানান, এক প্রেমিকাকে বাড়িতে রেখে অন্য প্রেমিককে বিয়ে করা অসম্মানজনক। ঘটনা জেনেও কিভাবে নিপুনকে মেয়ের সাথে বিয়ে দিলেন এক শিক্ষক? তার মেয়ের মতো আরেকটি মেয়ে নিপুনের বাসায় অবস্থান করছে। যে মেয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসার পর যে পজিশন নিল, সে তার মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে।
নিপুনকে বিয়ে করে পালিয়ে যাওয়া মেয়েটির বাবা বলেন, আমি সব ঘটনা জানি। কিন্তু আমার মেয়ে যে এমন খারাপ কাজ করতে পারে তা আমার ধারণা ছিল না। শুনেছি ওরা বিয়ে করেছে এবং এখন রংপুরে আছে। কিন্তু আমি ছিলাম। বিয়ের সময় সেখানে নেই। নিপুনের বাড়িতে থাকা ওই তরুণী বলেন, পাঁচ বছর আগে নীলফামারী কলেজে নিপুনের মামা কনকের সঙ্গে পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক সময় আমরা দুজনেই পড়াশোনার সুবাদে ঢাকায় চলে যাই। ৩ জানুয়ারী, ২০১৯ আমরা দুজনেই ঢাকার লোকনাথ মন্দিরে বিয়ে করি। বিয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন নিপুনের বান্ধবী ও তার স্বামী। বিয়ের পর আমরা নিপুনের এক বন্ধুর বাসায় এক সপ্তাহ ছিলাম। এরপর থেকে আমরা স্বামী-স্ত্রী হয়ে বিভিন্ন জায়গায় রাত কাটাই। তিনি আরও বলেন, ‘নিপুন আমাকে চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখতে বলেছিল। তবে কিছুদিন আগের মতো যোগাযোগ ছিল না তার। তাই তাকে ফোন করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার বাসায় যাই। এখানে আসার পর নিপুনের মোবাইল নম্বরে কল করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। বাড়ির লোকজন ভালো ব্যবহার করলেও আমার ফোন রেখে দেয়।
মেয়েটির দাবি, নিপুনের পরিবার চায় আমি এখান থেকে চলে যাই। তারা আমার পরিবারকে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমার পরিবার রাজি হয়নি। শুনেছি সে অন্য প্রেমিককে বিয়ে করেছে। আমি জানি না এটা সত্যি কি না। কিন্তু অন্য মেয়েকে বিয়ে করলেও আমাকে তার স্ত্রীর মর্যাদা দিতে হবে। স্ত্রীর মর্যাদা না পেলে আত্মহনন ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। ঢাকায় নিপুনের বান্ধবী শাহনাজ বেগম বলেন, দুজনেই স্বামী-স্ত্রী হয়ে এক সপ্তাহ আমার বাসায় ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিপুনের বাবা বাবু ভূপেশ চন্দ্র রায় বলেন, মঙ্গলবার থেকে মেয়েটি আমার বাড়িতে রয়েছে। সে জানায় নিপুন তাকে বিয়ে করেছে। অন্যদিকে স্থানীয় এক মেয়ের সঙ্গে ছেলের বিয়ের কথা শুনেছি। তবে মঙ্গলবার থেকে ছেলের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই।
নিপুনের মামা জগদীশ চন্দ্র বলেন, আমি নিপুনকে বাড়িতে আসতে বলেছি, যদিও সে অন্য মেয়েকে বিয়ে করার কথা স্বীকার করেনি। মেয়ের বাড়িতে থাকার বিষয়টি সত্যি হলে আমরা তাকে নিপুনের সঙ্গে বিয়ে দেব। রোববার (২৪ জুলাই) বোড়াগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রিমুন জাগো নিউজকে বলেন, আমি ঢাকায় ছিলাম। শুনলাম নিপুন আরেক মেয়েকে বিয়ে করেছে। আজই বিষয়টি মিমাংসা হবে। মিমাংসা না হলে মামলা হবে। ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ উন নবী জাগো নিউজকে বলেন, এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিনের পরিচয়ের মাধ্যমে নিজেদের ভিতরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে পরশুনার তাগিদে দুজনই ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকার এসে তারা দুজনে মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করে তাদের এক পরিচিত ব্যাক্তির বাসায় বেশ কয়েকদিন স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ছিলেন। এর পরে প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে একসাথে সময় কাটাতেন। কিন্তু এখন প্রেমিক সেই বিয়ে এবং তাদের ভিতরে কাটানো মূহুর্তের কথা অস্বীকার করছেন।