গত রোববার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট এলাকায় ডিসি পার্কের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান বেসরকারি চাকরিজীবী রায়হান উদ্দিন (৩০)। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তাঁর পেছনে বসা সহকর্মী মুবিনুল ইসলাম (২৮)। তিনি এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে ওপরের বিবরণ জানান রায়হানের বন্ধু মো. আল আমিন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম জানান, দুর্ঘটনায় নিহত রায়হানের কেবল মাথা ও হাতে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাঁর মাথার সামনে ও পেছনের হাড় ভেঙেছে। ভেঙেছে হাতের কবজিও। আর আহত মুবিনুলের চোয়াল ও বুকের হাড় ভেঙেছে।
রায়হান উদ্দিন হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া এলাকার মৃত নাজিম উদ্দিনের ছেলে। আজ সোমবার দুপুরে জানাজা শেষে তাঁকে বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। পরিবারের বড় ছেলে রায়হান তাঁর মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে নিজ বাড়িতে থাকতেন। তাঁর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন মা, ছোট ভাই ও স্বজনেরা।
নতুন জীবনের অপেক্ষায় ছিলেন রায়হান উদ্দিন। গত শুক্রবার পারিবারিকভাবে চট্টগ্রামের বাসিন্দা সানজিদা হোসেনের সঙ্গে তাঁর আক্দ সম্পন্ন হয়েছে। দুই দিন না যেতেই স্বামী হারালেন সানজিদা।
দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় রায়হানকে। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন সানজিদা। স্বামীর পরা সোয়েটার বুকে জড়িয়ে বিলাপ করতে থাকেন তিনি। কেবল বলছিলেন, ‘আল্লাহ কেন এমন করল!’ এ সময় তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন স্বজন ও বন্ধুরা।
সানজিদা যখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন, তখনো তাঁর হাতের মেহেদির রং পুরোনো হয়নি।
স্বজনেরা জানান, শুক্রবার পারিবারিকভাবে আক্দ সম্পন্ন হয় রায়হান ও সানজিদার। দুজন অনেক খুশি ছিলেন। সামনে তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠানের কথাবার্তা চলছিল। নতুন জীবন শুরু করার আগেই তাঁদের এই পরিণতি হলো।
নিহত রায়হান উদ্দিন চট্টগ্রামের পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তাঁর মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশতাধিক প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী রায়হানকে শেষবার দেখতে ছুটে যান তাঁর গ্রামের বাড়িতে। জানাজার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁরা।
জানাজা শেষে কথা হয় রায়হান উদ্দিনের বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের বন্ধু আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই তো গত শুক্রবার সবাই মিলে তাঁর আক্দ শেষে ছবি তুললাম, গল্প করলাম। দুই দিন পর সবাই মিলে এলাম তাঁর জানাজা পড়তে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাঁর বন্ধু পার্থ প্রতিম নন্দী বলেন, ‘রায়হানের আক্দে সবাই যেতে পারিনি। ইচ্ছা ছিল সবাই মিলে তাঁর বিয়েতে যাব। কিন্তু দুর্ঘটনা সব কেড়ে নিল।’
সোমবার সকালে রায়হানকে শেষবারের মতো দেখতে ছুটে আসেন পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান জুয়েল দাশ। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার শিক্ষকতা শুরু হয়েছে রায়হানদের ব্যাচ দিয়ে। তার এভাবে চলে যাওয়া কেউ মেনে নিতে পারছে না।’