সমগ্র পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য দেশ রয়েছে। এই সকল দেশ গুলোর মধ্যে অন্যতম জনবহুল একটি দেশ চীন। অর্থনৈতিক ভাবেও সমৃদ্ধশালী দেশটি। বর্তমান সময়ে দেশটির সরকারের দায়িত্ব পালন করছেন শি জিনপিং। তিনি দেশটির আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে বিশেষ ভাবে কাজ করছেন। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন গবেষণা ল্যাব এইডডেটার গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে বর্তমান বিশ্বের প্রায় ১৬৩ দেশ বিভিন্ন ভাবে চীনের ‘কব্জায়’। এই বিষয়ে বিস্তারিত উঠে এলো প্রকাশ্যে।
২০১৩ সালে বেল্ট অ্যান্ড রোড কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে বিশ্বের ১৬৩টি দেশে রাস্তা, সেতু, বন্দর এবং হাসপাতাল নির্মাণে চীন ৮৪৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। বুধবার এক গবেষণায় বলা হয়েছে, চীনের এই উচ্চাভিলাষী বৈদেশিক অবকাঠামো প্রকল্পের অধীনে দরিদ্র দেশগুলিকে ৩৮৫ বিলিয়ন ডলারের ‘লুকানো ঋণ’ এর জালে বেঁধে ফেলেছে চীন। এবং এক তৃতীয়াংশেরও বেশি প্রকল্প দুর্নীতির কেলেঙ্কারি এবং বিক্ষোভের শিকার হয়েছে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন গবেষণা ল্যাব এইডডেটার গবেষণায় বলা হয়েছে যে, চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং-এর প্রধান বিনিয়োগ অভিযান দ্য বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর অধীনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় ব্যাংক এবং কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির ফলে ডজন খানেক নিম্ন আয়ের দেশের সরকার ঋণের জালে আটকা পড়েছে।
২০১৩ সালে ওই কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে আফ্রিকা এবং মধ্য এশিয়ার অনেক দেশসহ ১৬৩টি দেশে রাস্তা, সেতু, বন্দর এবং হাসপাতাল নির্মাণে চীন ৮৪৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। এইডডেটার নির্বাহী পরিচালক ব্র্যাড পার্কস এএফপিকে বলেন, এই অর্থের প্রায় ৭০ শতাংশ রাষ্ট্রীয় ব্যাংক বা চীনা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় অংশীদারদের মধ্যে যৌথ উদ্যোগে ঋণ দেওয়া হয়েছে, যারা ইতিমধ্যেই বেইজিংয়ের কাছে গভীরভাবে ঋণগ্রস্ত ছিল। ‘অনেক দরিদ্র সরকার আর ঋণ নিতে পারেনি,’ পার্কস বলছিলেন, ‘সুতরাং (চীন) সৃজনশীল হয়ে উঠেছে’।
তিনি বলেন যে, ‘কেন্দ্রীয় সরকার ছাড়া অন্যদের ঋণ দেওয়া হয়েছে, তবে সেসব ঋণ পরিশোধে সরকারি গ্যারান্টি আদায় করে নিয়েছে চীন’। তিনি বলেন, ‘চুক্তিগুলি অস্পষ্ট, এবং সরকার নিজেরাই জানে না যে, তারা চীনের কাছে ঠিক কত টাকা ঋণী’। গবেষণায় দেখা গেছে, এমন ঋণের মূল্য প্রায় ৩৮৫ বিলিয়ন ডলার। ভার্জিনিয়ার কলেজ অফ উইলিয়াম অ্যান্ড মেরি ভিত্তিক এইডডেটা, ৪৫টি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের তালিকা করেছে যাদের এখন চীনের কাছে ঋণের পরিমাণ তাদের জাতীয় মোট দেশীয় উৎপাদনের ১০ শতাংশেরও বেশি। দক্ষিণ-পশ্চিম পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের মতো জায়গায়ও উচ্চ মাত্রায় চীনা ঋণ প্রবাহিত হওয়ায় ক্ষোভের উদ্রেক হয়েছে। সেখানকার স্থানীয়রা বলছে তারা সামান্য সুবিধা পায় এবং জঙ্গিরা চীনা বিনিয়োগকে ক্ষুন্ন করার লক্ষ্যে হামলা চালিয়েছে।
পার্ক বলেন, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে আমরা এখন যা দেখছি তা হল ঋণ গ্রহীতাদের অনুশোচনা’। ‘অনেক বিদেশী নেতা যারা প্রাথমিকভাবে বিআরআই ব্যান্ডওয়গনে ঝাঁপিয়ে পড়তে আগ্রহী ছিল তারা এখন ঋণের স্থায়িত্বের উদ্বেগের কারণে চীনা অবকাঠামো প্রকল্পগুলি স্থগিত বা বাতিল করছে’। গবেষণায় বলা হয়েছে, ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে ধাক্কার কারণে গত দুই বছরে বেইজিংয়ের ঋণ দেওয়ার গতি কমে গেছে। চলতি বছরে বৈশ্বিক ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বেইজিংয়ের আধিপত্য মোকাবেলায় গ্রুপ অফ সেভেন (জি-৭) এর ধনী দেশগুলোও প্রতিদ্বন্দ্বী স্কিম ঘোষণা করেছে।এইডডেটার গবেষণায় দেখা গেছে, বেইজিংয়ের ঋণ পরিশোধে অল্প সময়ে উচ্চ সুদও দিতে হয়। পার্ক বলেছেন তাদের গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, বিআরআই ‘জোট গড়ে তোলার জন্য তেমন কোনো মহা পরিকল্পনা নয়’, যেমনটি কখনও কখনও বেইজিং দাবি করে, বরং চীন এর মাধ্যমে ‘সবচেয়ে লাভজনক প্রকল্পের সন্ধান করছে’।
চীন নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে প্রতিবেশী অসহায়দেশ গুলোকে নানা ভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করছে। এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনেক উন্নয়নমূলক কর্মাকান্ডেও মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করছে। আর্ন্তজাতিক এক গবেষনায় জানাগেছে দেশটি বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলিকে ৩৮৫ বিলিয়ন ডলারের ‘লুকানো ঋণ’ এর জালে বেঁধে ফেলেছে। এমনকি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশ গুলো চীনের কাছে ঋণের পরিমাণ তাদের জাতীয় মোট দেশীয় উৎপাদনের ১০ শতাংশেরও বেশি।