‘বিশ্বাসঘাতক ও মীরজাফর কাদের সিদ্দিকী ক্ষমা না চাইলে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হবে না’

সখীপুরে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান সাজু। শনিবার রাতে উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা তালতলা চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সমাবেশে কাদের সিদ্দিকীর সমালোচনা করে শাজাহান সাজু বলেন, “কাদের সিদ্দিকী একজন বিশ্বাসঘাতক ও মীরজাফর। এটা বাংলার মানুষ আগে বুঝতে না পারলেও শেখ হাসিনা প্রথমে তা বুঝে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন। এমনকি তাকে দেশে ফিরতেও দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে দেশে আসার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।”

তিনি আরও বলেন, “কাদের সিদ্দিকী অভিযোগ করেছেন, বিএনপি চাঁদাবাজি করছে। অথচ সখীপুরে স্বাধীনতার পর এমন নিরাপত্তা আর কখনো ছিল না, যা আমরা গত ৫ আগস্টের পর থেকে নিশ্চিত করেছি। আমরা সখীপুরের সব স্থাপনা ও প্রশাসনকে পাহারা দিয়েছি। কাদের সিদ্দিকী যদি তার কথার জন্য ক্ষমা না চান, তাহলে সখীপুরে তাকে কোনো সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। প্রয়োজনে তাকে প্রতিহত করা হবে।”

এদিন সন্ধ্যায় কাদের সিদ্দিকী সখীপুরে তার বাসভবনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের এক বর্ধিত সভায় বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ যে দোষে সর্বহারা হয়েছে, সরকার পতনের পর বিএনপিও একই ভুল করছে। জামায়াত চাঁদাবাজি বা বাজার দখল করেনি। কিন্তু বিএনপি এখন তা করছে এবং চাঁদার হারও বাড়িয়েছে। আগে যেখানে আওয়ামী লীগ চাঁদা নিত, এখন বিএনপি তা করছে।”

কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যের প্রতিবাদে সখীপুরে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তারা বিক্ষোভ মিছিল করে তালতলা চত্বরে সমাবেশ করে। কাদের সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ। সমাবেশে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মীর আবুল হাশেম ও যুবদল নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদও বক্তব্য দেন।

বিক্ষোভের মাধ্যমে উপজেলা বিএনপি কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে আখ্যা দেয় এবং তাকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানায়। অন্যথায় সখীপুরে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়।


শেখ হাসিনা কি আসলেই হিন্দুধর্ম গ্রহণ করেছেন?, যা জানা গেল

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে তিনি ভারতে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছেন। ছবিটিতে দেখা যায়, একজন হিন্দু পুরোহিত শেখ হাসিনার কপালে তিলক এঁকে দিচ্ছেন। এই দাবিটি যাচাই করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ভারতীয় ফ্যাক্ট-চেক সংস্থা লজিক্যালি ফ্যাক্টস, যা নিশ্চিত করেছে যে ছবিটি আসল নয়, বরং এডিট করা।

ভাইরাল ছবিতে দেখা যায়, শেখ হাসিনা একটি অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে আছেন এবং একজন হিন্দু পুরোহিত তার কপালে তিলক এঁকে দিচ্ছেন। কিছু ব্যবহারকারী এই ছবি শেয়ার করে দাবি করেছেন, “বাংলাদেশে মুসলমান আর ভারতে হিন্দু,” যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। তবে ফ্যাক্ট-চেক অনুসারে, এই ছবি সম্পূর্ণভাবে এডিট করা।

মূল ছবিটি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের, যেখানে ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী কেরালার শিবগিরি মঠে এক পুরোহিতের কাছ থেকে তিলক নিচ্ছিলেন। সেই ছবি এডিট করে রাহুল গান্ধীর স্থানে শেখ হাসিনার ছবি বসানো হয়েছে।

২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর, ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআই রাহুল গান্ধীর কেরালা সফরের এই ছবিটি প্রকাশ করে। ছবিতে রাহুলকে মন্দিরে পুরোহিতের কাছ থেকে তিলক নিতে দেখা যায়। কংগ্রেস দলও তাদের এক্স (পূর্বে টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি শেয়ার করে।

অন্যদিকে, এডিট করা ছবিতে শেখ হাসিনার যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসের। ছবিটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের আগে তোলা হয়। ছবিটি ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপি-এর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।

ফ্যাক্ট চেকের ফলাফল
১. রাহুল গান্ধীর ছবিটি এডিট করে সেখানে শেখ হাসিনার ছবি বসানো হয়েছে।
২. এডিট করা ছবিতে দৃশ্যত তিলক আঁকার দাবি করা হলেও এটি সত্য নয়।
৩. শেখ হাসিনার হিন্দু ধর্ম গ্রহণের দাবিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

শেষ কথা
ভাইরাল হওয়া এই ছবিটি একটি মিথ্যা প্রচারণার অংশ। আসল ছবিতে রাহুল গান্ধী কেরালার একটি ধর্মীয় স্থানে পুরোহিতের কাছ থেকে আশীর্বাদ নিচ্ছিলেন। সেটিকে এডিট করে শেখ হাসিনার ছবি বসানো হয়েছে। এমন ভুয়া খবর ছড়ানো থেকে বিরত থাকা উচিত এবং যাচাই-বাছাই ছাড়া এসব খবর বিশ্বাস করা উচিত নয়।