জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রী খাদিজাতুল কুবরার জামিনের আদেশ কারাগারে পৌঁছানোর পরেরদিন আপিল বিভাগে ব্যাখ্যা দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, সন্ধ্যার পর আসামিদের মুক্তি দেওয়ার নিয়ম নেই, তাই রোববার আদেশ পেয়েও খাদিজাকে কারাগার থেকে ছাড়া করা যায়নি। পরে সোমবার সকাল ৯টার দিকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযুক্ত জবি শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা ১৫ মাস পর সোমবার (২০ নভেম্বর) কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তবে রোববার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আপিল বিভাগ থেকে তার জামিনের আদেশ কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায়।
এ বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চান আপিল বিভাগ।
কাশিমপুর মহিলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট মো. শাহজাহান মিয়া জানান, রোববার কারাগারে আসার পর জামিনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। আসামিকে রাতে মুক্তি দেওয়ার নিয়ম না থাকায় সোমবার সকালে তাকে কারাগার থেকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পরিবারের কোনো সদস্য না আসায় তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাননি। পরে তার বোন এলে সকাল ৯টার দিকে তাকে কারাগার থেকে ছাড়া হয়।
তিনি আরও বলেন, খাদিজাতুল কুবরাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিনে চেম্বার আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ পরবর্তীতে আপিল বিভাগ বাতিল করেছে। একই সঙ্গে জামিন বাতিল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। ফলে হাইকোর্টের দেওয়া তার জামিন বহাল রয়েছে। এ আদেশের ফলে খাদিজার মুক্তির পথে আর কোনো বাধা রইল না।
গত বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ খাদিজার মামলার এ আদেশ দেন। আদালতে খাদিজার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী বিএম ইলিয়াস কচি ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুল আলম
এর আগে গত ১০ জুলাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুই মামলায় জগন্নাথের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার জামিন শুনানি চার মাসের জন্য মুলতবি করেন আপিল বিভাগ।
২০২০ সালের অক্টোবরে, অনলাইনে সরকার বিরোধী বক্তব্য ছড়ানো এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে পুলিশ কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় খাদিজাতুল কুবরা এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করে।
নিউমার্কেট থানার মামলায় এসআই খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘২০২০ সালের ১১ অক্টোবর সকাল ৬টা ২৫ মিনিটে মোবাইলফোনে মেজর (অব.) দেলোয়ারের ইউটিউব চ্যানেলে তিনি একটি ভিডিও দেখতে পান। ‘হিউম্যানিটি ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামে ওই ভিডিওর সঞ্চালক খাদিজাতুল কুবরার উপস্থাপনায় দেলোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে বাংলাদেশের বৈধ গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতে বিভিন্ন নির্দেশনা দেন। পরে মামলাটি রেকর্ড করা হয় সকাল ৮টা ১০ মিনিটে। মামলার এজাহারের সঙ্গে তিন পাতার স্ক্রিনশট ও ভিডিওসংবলিত সিডি সংযুক্ত করা হয়।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, খাদিজাতুল কুবরা ও দেলোয়ার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের বৈধ সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী, বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বানোয়াট, আজগুবি, মিথ্যা ও মানহানিকর অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আসা”মিরা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন স”ম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, বি”দ্বেষ ও বিভেদ সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
নিউমার্কেট থানায় মামলা করার আট দিন পর কলাবাগান থানায় আরেকটি মামলা করেন এসআই আরিফ হোসেন।
কলাবাগান থানার মামলার এজাহারেও উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর রাত ৯টা ১৫ মিনিটে মোবাইলফোনে ইউটিউব দেখার সময় দেলোয়ার হোসেনের ইউটিউব চ্যানেল দেখতে পান। ওইদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি থানায় মামলা করেন।
দুটি মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিলের পর নিউমার্কেট থানা পুলিশ খাদিজাকে তার মিরপুরের বাসা থেকে ২৭ আগস্ট ২০২২ সালে গ্রেপ্তার করে। তখন থেকেই তিনি কারাগারে রয়েছেন। আর দেলোয়ার বিদেশে পলাতক রয়েছে।