খুলনার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের আত্মহননের ঘটনায় এক ছাত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জানা গেছে, ওই ছাত্রী ঐ ছাত্রের আত্মহননের প্ররোচনায় অভিযুক্ত হয়েছেন। নর্দান ইউনিভার্সিটি সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগে পড়তেন ওই ছাত্র। তার নাম প্রমিজ নাগ। এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত প্রেমিকা সুরাইয়া ইসলাম মিম ঘটনার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
শনিবার (২৫ জুন) খুলনা মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মোঃ আল আমিন আসামি মিমের জবানবন্দি রেকর্ড করে তাকে কারাগারে পাঠান।
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার সহকারী কমিশনার মোঃ আতিক মাহমুদ চৌধুরী আসামির বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শুক্রবার (২৪ জুন) দুপুরে নড়াইল জেলার মাসুমদিয়া এলাকা থেকে মিমকে গ্রে”প্তার করে র্যাব। রাতেই তাকে থানায় সোপর্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিলেও তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। পরদিন রাতে সাক্ষ্য দিতে রাজি হওয়ার পর শনিবার (২৫ জুন) সকাল ১০টার দিকে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর ৩ ঘণ্টা আদালতে ঘটনার কথা জানান মিম। তবে আত্মহননের প্ররোচনার জন্য মীম দায়ী বলে পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই হরসিৎ মন্ডল বলেন, ২০২০ সালে নর্দান ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয় প্রমিজ। এক পর্যায়ে তার সাথে এক সেমিস্টারের বড় মিমের পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে প্রেম, তারপর সম্পর্ক গভীর হয়। মিম প্রায়ই প্রমিজের মেসে সময় কাটাতেন। অনেকক্ষণ থাকার পর সেখান থেকে বেরিয়ে নিজের ভাড়া বাড়িতে চলে যেতেন। তদন্তে জানা যায় তাদের মধ্যে শারীরিক স”ম্পর্ক ছিল। তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, প্রমিজ যেদিন আত্মহননের ঘটনা ঘটায় করেন সেদিন দুপুরে মিম বাসায় ছিলেন।
মিম দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। এদিকে আত্মহননের প্ররোচনার মামলায় প্রমিজের কাকাতো ভাই এজাহারে উল্লেখ করেন, মিম প্রায়ই প্রমিজকে বিয়ের জন্য চাপ দিত। তবে, যেহেতু তিনি একজন মুসলিম তাই প্রমিজ তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। এরপর থেকে মীম মাঝেমধ্যেই টাকার জন্য প্রয়াত বাবাকে ফোন করতো।
এরপর ২০ জুন বিকেল সোয়া ৫ টার দিকে বাবার নিকট টাকা চাওয়ার বিষয়টি জানতে মিমকে মেসে ডাকে প্রমিজ। অবস্থানের এক পর্যায়ে প্রেমিকা মিম ক্ষি”প্ত হয়ে ল্যাপটপ দিয়ে প্রমিজের মাথায় আঘাত করে। তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগা”লাজ করে ওইদিনই মেস থেকে বের হন মিম। প্রেমিকার এমন আচরণে মানসিকভাবে হতা”শ প্রমিজ।
এরপর ঘটনার দিন ২২ জুন আবারও প্রমিজের বাসায় আসেন মিম। এ সময় প্রমিজের রুমের দরজা বন্ধ দেখে পাশের রুমে থাকা সোহান ও বিপ্লবকে ডেকে রুমের দরজা ভাঙতে বলেন মিম। ঠিক সেই মুহূর্তে মিমের কথামতো দুজনে প্রমিজকে ডাকতে শুরু করলেও উত্তর না দিয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখেন প্রমিস ফ্যানের হুকের সঙ্গে ঝুলছে। দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রয়াত ঘোষণা করেন। এদিকে প্রমিজের আত্মহননের পর মিম কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পা”লিয়ে যায়।
গত শনিবার (২৫ জুন) খুলনা মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মোঃ আল আমিন আসামি মিমের জবানবন্দি রেকর্ড করেন এবং পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, প্রমিজ নাগের আত্মহননের প্ররোচনার ঘটনায় অন্য কোনো সাক্ষী রয়েছে কি-না সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। তবে ঠিক কি কারণে প্রমিজ নাগ এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সে বিষয়টি প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মিম তাকে আত্মহননের প্ররোচনার জন্য দায়ী।