যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমান সময়ে চলমান রয়েছে সয়াবিন উৎপাদনের মৌসুম; অপরদিকে শীতকালে পাম তেলের চাহিদা কমে যায় যার কারনে আন্তর্জাতিক বাজারে এই দুটি ভোজ্য তেলের দাম কমে গেছে অনেক। গেল ৭ দিনের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে এই দুইটি ভোজ্যতেলের দাম প্রতি টনে কমেছে ৭০০০ টাকার ও অধিক। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও দেশের বাজারে এই দুটি নিত্যপ্রয়োজনীয় তেলের দামে কোনো প্রভাব নেই। দাম কমার বদলে বরং বাড়ছে। এ অবস্থায় ক্রেতারা প্রশ্ন তুলেছেন: বাংলাদেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কবে কমবে? একই ধরনের প্রশ্ন করছেন পাইকারী বিক্রেতারাও। আন্তর্জাতিক বাজারে যেহেতু এই দুটি ভোজ্যতেলের দাম কমে গেছে তাই পাইকাররা ইতিমধ্যেই আমদানিকারকদের দাম কমানোর জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।
তবে আমদানিকারকরা বলছেন, দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমতে আরও সময় লাগবে। কারণ এখন যে তেল আসছে, তা আগে বাড়তি দামে বুক করা হয়েছে। বর্তমান দামে তেল বুক হতে আরও দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে।
অর্থনৈতিক সূচক এবং আর্থিক বাজারের তথ্য সরবরাহকারী ট্রেডিংইকোনমিকস ডটকমের তথ্যানুসারে, গত ৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন পাম তেল বিক্রি হয়েছে এক লাখ চার হাজার ৯৬৬ টাকা। এক সপ্তাহ পর গত মঙ্গলবার সাত হাজার ১০৭ টাকা ৯৪ পয়সা কমে প্রতি টন পাম তেল বিক্রি হয়েছে ৯৭ হাজার ৮৫৮ টাকায়। কিন্তু দেশীয় বাজারে পণ্যটির দাম কমার পরিবর্তে এই এক সপ্তাহে মণপ্রতি বেড়েছে ৪৫০ টাকা।
গত মঙ্গলবার খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ পাম তেল বিক্রি হয়েছে পাঁচ হাজার ৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ছিল চার হাজার ৬০০ টাকা।
একইভাবে এক সপ্তাহ আগে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে প্রতি টন এক হাজার ৪০০ ডলার, বর্তমানে তা কমে এক হাজার ১৮০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। এ সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম টনপ্রতি কমেছে ২২০ ডলার।
গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে মণপ্রতি সয়াবিন তেলের বুকিং মূল্য ছিল পাঁচ হাজার ২৭৬ টাকা। এক সপ্তাহ পর ৭৬৫ টাকা কমে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে চার হাজার ৫১১ টাকায়। তবে অভ্যন্তরীণ বাজারে মণপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৪৬০ টাকা। খাতুনগঞ্জে বর্তমানে প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে পাঁচ হাজার ৪৬০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে যা বিক্রি হয়েছে পাঁচ হাজার টাকায়।
মালয়েশিয়ান পাম অয়েল কাউন্সিলের (এপিওসি) রিজিওনাল ম্যানেজার (বাংলাদেশ-ভারত) এ কে এম ফখরুল আলম বলেন, সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর—এই সময়টা যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিনের মৌসুম হওয়ায় বাজারে তেলের সরবরাহ পর্যাপ্ত। আবার শীত আসায় এশিয়ার দেশগুলোয় কমেছে পাম তেলের চাহিদা। এর ফলে পাম তেলের স্টক বেড়েছে। দেওয়ালির কারণে ভারতে ভোজ্য তেলের যে বাড়তি চাহিদা ছিল, তা-ও এখন নেই। চীনের স্থানীয় উত্পাদনও কিছুটা বেড়েছে। সব মিলিয়ে ভোজ্য তেলের দাম কমছে। তবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ভোজ্য তেলের বাজারে।
ফলে ভোজ্যতেলের দাম প্রত্যাশার চেয়ে ধীরগতিতে কমছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসের দিকে যে তেল বাংলাদেশে আসবে সেটার জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে এখন অর্থাৎ বর্তমানে বুকিং প্রদান করা হচ্ছে। এই তেল বাংলাদেশে পৌঁছানোর জন্য অন্তত:পক্ষে ২ মাসে মতো সময় লাগবে। এর আগে তেলের দাম কমার কোনো ধরনের সম্ভাবনা নেই।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের যে পরিমান চাহিদা সেটার পরিমান ২০ লাখ টনেরও ওপরে। এই পরিমান তেলের বেশির ভাগই বাইরে থেকে আমদানি করা। ভোজ্যতেল সাধারণত আমদানি করা হয়ে থাকে দক্ষিণ আমেরিকা (ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা সহ আরো বেশ কয়েকটি দেশ), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মালয়েশিয়া। যেহেতু দূরের দেশ থেকে আমদানি করা হয় তাই তেলের দামে একটু বেশি খরচ পড়ে। এদিকে আরো বেশ কিছু কারণে চলমান বছরের ফেব্রুয়ারি মাস হতে দেশীয় বাজারে ভোজ্যতেলের দাম ৬ দফা বাড়ানো হয়েছে।
বিশ্বজিৎ সাহা যিনি সিটি গ্রুপের পরিচালক (কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) হিসেবে রয়েছেন তিনি দেশের একটি অন্যতম সংবাদ মাধ্যমে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের যে দাম কমেছে বলে দাবি করা হচ্ছে সেই ধরনের কোনো তথ্য এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে নেই।