সম্প্রতি এক স্কুল শিক্ষিকার সাথে অপ্রত্যাশিত কাণ্ড ঘটালেন তারই সহকারী শিক্ষকরা মিলে। শতশত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তাকে কান ধরে উঠবস করতে বাধ্য করে। যে ঘটনায় সম্প্রতি যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহীর একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
ভুক্তভোগী শিক্ষক রাজশাহী মহানগরীর হরগ্রাম রায়পাড়া এলাকার বাসিন্দা। ২০০৮ সাল থেকে তিনি হারুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। ২০০৬ সাল থেকে শিক্ষকতায় যোগ দেন। ঘটনার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি।
এই শিক্ষিকা জানান, প্রতিদিনের মতো বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি বিদ্যালয়ে আসেন। এদিন প্রধান শিক্ষিকা নাজমা ফেরদৌসী তার স্বামী সরকারি স্কুলের শিক্ষককে নিয়ে বিদ্যালয়ে আসেন। অন্য শিক্ষকরাও ছিলেন। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাও ছিল।
ফে/ সবুকে ছবি শেয়ার করায় প্রধান শিক্ষক তাকে সবার সামনে তিরস্কার করেন। এরপর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির বাবা ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল আজিজকে ডাকা হয়। আব্দুল আজিজ তাকে কান ধরে বসতে বাধ্য করেন। এর আগে, তিনি তাকে অপমান করেছিলেন এবং তাকে মারতে বলেছিলো।
তিনি অভিযোগ করেন, লজ্জাজনক ঘটনার পরও প্রধান শিক্ষক ও তার শিক্ষক স্বামী প্রতিবাদ করেননি। উল্টো ঘটনা ঘটলে তিনি বদলি বা বরখাস্তের হু/মকি দেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষিকা জানান, এ ঘটনায় তিনি অত্যন্ত অপমানিত বোধ করেন। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। ঘটনার পর তিনি সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রুনা লায়লাকে বলল। স্কুল ছুটির পর তিনি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে গিয়ে প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু অফিস বন্ধ থাকায় অভিযোগ করা যায়নি।
ক্ষুব্ধ শিক্ষকের দাবি, তিনি মূলত বোতাম মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। তার একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনও রয়েছে। এতে ফে/ সবুক আইডি ব্যবহারে তিনি অভ্যস্ত নন। ওই ফোন বাড়িতেই আছে। এতে শিশুরা গেম খেলে, ছবি তোলে। তার অজান্তেই, শিশুরা তাদের মোবাইলে সমস্ত ছবি দিয়ে টিক টক ভিডিও তৈরি করে। কিন্তু যখন তিনি জানতে পারেন, তিনি সেগুলি মুছে ফেলেন।
জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, শনিবার রাতে প্রধান শিক্ষক তাকে তার বান্ধবীর সঙ্গে তোলা একটি ছবি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠান। ওই সময় ফোন ছিল তার বোনের কাছে। অসাবধানতাবশত, ছবিটি ফে/ সবুকে চলে যায়।
রবিবার সকালে তিনি স্কুলে যান। ওই দিন প্রধান শিক্ষক নাজমা ফেরদৌসী ছুটিতে ছিলেন। প্রধান শিক্ষকের ছবি ফে/ সবুকে শেয়ার করায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন আরেক সহকারী শিক্ষক ইসমত আরা শিউলি। তিনি অসাবধানতাবশত বিষয়টি উল্লেখ করে ক্ষমতা চান।
তারপরও ইসমত আরা শিউলি প্রধান শিক্ষককে জানিয়েছেন। আরেক সহকারী শিক্ষিকা জেসমিন সুলতানা ববিকে তার বাড়িতে পাঠিয়ে জোরপূর্বক মোবাইল ফোন নিয়ে আসেন। রোববার পর্যন্ত ফোন ছিল তাদের কাছে।
তবে প্রধান শিক্ষক নাজমা ফেরদৌসী শিক্ষিকাকে কান ধরে বসানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি পাল্টা বলেন, ওই শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে তার ফেসবুকে তার ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার করছেন। তিনি টিক টক ভিডিও করে ফেসবুকে প্রচারও করছিলেন। বারবার সতর্ক করেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও জানানো হয়েছে।
জানতে চাইলে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোসাঃ অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেন। রুনা লায়লা। তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক তাকে আগেই জানিয়েছিলেন। পরে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক মো. ঘটনাটি তার কাছে দুই শিক্ষকের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধের ফল বলে মনে হয়েছে। দুই পক্ষকে বসানো হবে বলে জানান এই শিক্ষা কর্মকর্তা।
শিক্ষককে কান ধরে বসিয়ে দেওয়ার ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, বুধবার দুপুরে প্রধান শিক্ষিকা তার মোবাইল ফোনে সমস্যার কথা জানান। তবে বিষয়টি তিনি প্রকাশ করেননি। তাছাড়া ভুক্তভোগী এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেননি। বিষয়টি সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাও জানাননি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি জানেন না বলে জানান। আবদুস সালাম অবশ্য তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোন প্রকার ব্যবস্থা নেয়া হয়নি সহকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। এছাড়া প্রধান শিক্ষক এ বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ জানায়নি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা। তবে এ ঘটনায় মানহানির মামলা করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়।