নারীর দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে মানুষ নানা ধরনের অপরাধ মূলক কর্মকান্ড করে থাকে। তারই প্রমান কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের একটি ঘটনা। হোটেলের এক কর্মচারী মতিউর রহমান ওরফে মতি মিয়া (৫৫) হ/ ত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই। এ ঘটনায় হোটেল মালিক মো. হারিছ মিয়া (৫০) গ্রেফতারের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হ/ ত্যার বর্ণনা দেন।
গত বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাদ্দাম হোসেন হারিছ মিয়ার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। স্বীকারোক্তিতে তিনি বলেন, তার বিধবা বোনকে কর্মচারী মতিউর রহমান ওরফে মতি মিয়া বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেও অন্যত্র বিয়ে করেন।
এছাড়া ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়ে লোকসানের অজুহাত দেখান। এতে হারিছ মিয়া রেগে যায় এবং ঘুমের ওষুধের সাথে কোকেন মেশানো খায় এবং এই ঘটনাটি নরু/শাং/সভায় ঘটায়। দুই তু/কারো লা/শের একটি অংশ একটি কবরের পাশে স্থাপন করা হয় এবং অন্য অংশটি কাঁথা দিয়ে মুড়িয়ে বস্তায় নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। নিহত মতিউর রহমান ওরফে মতি মিয়া উপজেলার গুন্ধার ইউনিয়নের সুলতাননগর গ্রামের মৃত তাহের উদ্দিনের ছেলে। অপরদিকে ঘাতক মো. হারিছ মিয়া একই গ্রামের মৃত আব্দুল হাফিজের ছেলে। পাশের মারিচখালী বাজারে তার একটি ভাতের হোটেল রয়েছে।
নিহত মতি ওই হোটেলে কাজ করতেন। পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন পিপিএম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত ২৬ মে দুপুরে সুলতাননগর গ্রামের একটি কবরের পাশ থেকে মতি মিয়ার কোমর থেকে বিকৃত লাশের উপরের অংশ উদ্ধার করা হয়। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পিবিআইয়ের কিশোরগঞ্জ জেলার ক্রাইম সিন ইউনিট। তারা ছায়া তদন্ত অব্যাহত. এ ঘটনায় নিহত মতিউর রহমানের ছেলে মো. রমজান বাদী হয়ে করিমগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মামলাটি পিবিআই তফসিলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ সাখরুল হক খানকে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ জিম মার্কেট এলাকায় সন্দেহভাজন মো. হারিছ মিয়াকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। পরে তাকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে আদালতে পাঠানো হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ সাখরুল হক খান জানান, নিহত মতিউর রহমান হারিছ মিয়া হোটেলের কর্মচারী হলেও তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ধারণা করা হয়, মতিউর রহমানের স্ত্রী ৫-৬ বছর আগে মারা গেছেন। এরপর থেকে দিনে হোটেলে কাজ করে রাতে হারিছ মিয়ার সঙ্গে হোটেলের ঘরে ঘুমাতেন। ১৩ তারিখ ফাল্গুন মতি মিয়া তার ছোট মেয়ের পরিবারের জন্য আসবাবপত্র কেনার জন্য হারিছ মিয়ার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নেয়। 24 মে হত্যাকাণ্ডের 3-4 দিন আগে মতি মিয়া তার বড় মেয়ের জামাইকে বিদেশে পাঠানোর জন্য আবার হারিছ মিয়ার কাছ থেকে 50,000 টাকা ধার নেন। মতি মিয়া টাকা নিয়ে সিলেটে যান এবং সিলেট থেকে ফেরার পর ২৪ মে সকালে মতি মিয়া হারিছ মিয়াকে জানান, তার ৫০ হাজার টাকা ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। এছাড়া হারিছ মিয়ার বিধবা বোন রেজিয়াকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মতি মিয়া। কিন্তু তিনি তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন এবং 21শে মে দোলেনা নামে আরেক নারীকে বিয়ে করেন।
টাকা ধার করে টাকা হারানোর অজুহাতে ক্ষিপ্ত হয়ে হরিশ তার বিধবা বোনকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তিনি জানান, গত ২৪ মে রাত সাড়ে ৮টার দিকে হারিছ মিয়া দোকানে গেলে মতি মিয়ার সঙ্গে কেক-রুটি খাওয়ার পরিকল্পনা করেন। কোকের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে মতি মিয়াকে খাওয়ান। এরপর রাত ১২টার দিকে হারিছ মিয়া ঘুমন্ত মতি মিয়াকে ধারালো ছুরি দিয়ে কুপিয়ে তার শরীরের দুই টুকরো করে ফেলে। পরে মতি মিয়া লাশ লুকানোর জন্য সুলতাননগর গ্রামের ছেলেমান্নেছার কবরের পাশে বিকৃত লাশের একটি অংশ ফেলে রাখে। অন্য অংশ কাঁথায় মুড়িয়ে বস্তায় নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, অনেক প্রাচীন ও আধুনিক ধর্ম ও সমাজে বিধবার জীবন খুবই অমানবিক। কেবলমাত্র তারা বিধবা হওয়ার কারণে, তাদের এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয় যা বর্ণনা করা কঠিন। উদাহরণ স্বরূপ, হিন্দু ধর্মে সতীদাহ প্রথার উল্লেখ করা যেতে পারে। যদিও এই প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে, তবুও সমাজে এখনও অনেক কুসংস্কার রয়েছে যা একজন বিধবাকে নিপীড়ন করে এবং তাকে তার স্বাভাবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে।