বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় সরকার নানা পদ্ধতি অবলম্বন করে চলেছে বিশেষ করে বিদ্যুৎ এর চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন লোডশেডিং দেওয়ার কার্যক্রম চলছে।সেই সাথে মসজিদ এ এসি বন্ধ রাখা এবং সরকারী অফিসের সময় কমিয়ে আনার ব্যপারেও কথা হয়েছে তবে এই সিদ্ধান্তের পর থেকেই আওনেকেই এটির ব্যপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এবং লোডশেডিং এর কারনে বেশ বিড়ম্বনায় পড়েছে সাধারন মানুষ।
বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় সরকার রেশনিং ব্যবস্থা চালু করলে উল্টো পথে হাঁটছে সরকারের একাধিক বিভাগ। অন্তত ১৩টি সরকারি ভবনে সেন্ট্রাল এসি বসানো হয়েছে। এসব ভবনে একজন কাজ করলেও শত শত টনের এসি চলে। ১৩টি ভবনের মধ্যে ৬টিতে মোট ৯,২০০ টন এসি ব্যবহার করা হচ্ছে।
রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় জাতীয় রাজস্ব ভবনে ২ হাজার ৫০০ টন, পান্থপথ পানি ভবনে ২ হাজার ৪০০ টন, সচিবালয়ের অভ্যন্তরে অর্থ মন্ত্রণালয় ভবনে ১ হাজার ৫০০ টন, পুলিশ সদর দফতরে ১ হাজার ২০০ টন। (অ্যানেক্স বিল্ডিং), বিজ্ঞান জাদুঘরে ১ হাজার টন, ন্যাশনাল আর্কাইভস ভবনে ১ হাজার টন এসি ব্যবহার হচ্ছে ৬০০ টন। এছাড়া পর্যটন ভবন, বিডা ভবন, আইসিটি ভবন, নির্বাচন কমিশন ভবন, জাতীয় সংসদ, বিটিআরসি ভবন, সিপিটিইউ ভবনে সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে। এসব ভবনের বেশির ভাগেই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন চিলার এয়ার কুলার বা ওয়াটার কুলার রয়েছে। একটি চিলার কুলার ইনস্টল করতে, আপনাকে কমপক্ষে ১০০ থেকে ১৫০ টন দিয়ে শুরু করতে হবে। এক দম্পতির ভিআরএফ সিস্টেম আছে। এই পদ্ধতিটি শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় কমপক্ষে ১৮ টন দিয়ে শুরু করতে হবে। দেশান্তর অনুসন্ধানে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এসি ডিভাইস স্থাপন ও বিদ্যুৎ বিল তৈরির প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কেউই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছর দুয়েক আগে সচিবালয়ের ২০ তলা ভবনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই ভবনে মোট ১৫০০ টন এসি বসানো হয়েছে। এই উচ্চ ক্ষমতার এয়ার কন্ডিশনার যেমন চিলার এয়ার কুলারের জন্য প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ খরচ হয়। চলতি বছরের এপ্রিলে এ ভবনের বিদ্যুৎ বিল বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে ২৮ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। সারা বছর গড়ে প্রতি মাসে এই ভবনের বিদ্যুৎ বিল আসে ১৭ লাখ ২৭ হাজার টাকা। সরকারের প্রশাসনিক সদর দপ্তর বাংলাদেশ সচিবালয়ে ৩৬টি মন্ত্রণালয়ের জন্য মোট চার হাজার টন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে। আর্থিক ভবনে ১৫০০ টন মেশিন রয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এপ্রিল মাসে শুধু অর্থ ভবনেই ১ দশমিক ৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে। আগারগাঁও এলাকার জাতীয় রাজস্ব (এনবিআর) ভবনে সরকারি অফিসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসি ব্যবহার করা হয়। সেখানে ২৫০০ টন উচ্চ ক্ষমতার এসি ব্যবহার করা হয়েছে। এর সঙ্গে আরেকটি সরকারি ভবন রয়েছে। আগের সব রেকর্ড ভেঙে, পানিসম্পদ মন্ত্রকের অধীনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদর দফতর ‘পানি ভবন’-এ ২ হাজার ৪০০ টন ক্ষমতার এয়ার কন্ডিশনার বসানো হয়েছে। এটি দেশের প্রথম ‘সেন্ট্রাল এসি’ সরকারি অফিস হিসেবে পরিচিত। প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১২ তলা পানি ভবনের বিদ্যুৎ বিল প্রতি মাসে ২৫ থেকে ২৭ লাখ টাকা। সে অনুযায়ী বার্ষিক পরিমাণ দাঁড়াবে ৩ কোটি টাকার মতো। এরপরই রয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরের অবস্থান (অ্যানেক্স বিল্ডিং)। এ ভবনে ১ হাজার ২০০ টন এসি বসানো হয়েছে।
এসব ভবন ছাড়াও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১ হাজার ২০০ টন ধারণক্ষমতার অফিসিয়াল এসি ব্যবস্থা রয়েছে। যদিও বর্তমানে ৮০০ টন এসি ব্যবহার করা হয়। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২৫০ টন এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ৯২০ টন এসি রয়েছে। অনেক মানুষ একটি বিলাসিতা হিসাবে একটি কেন্দ্রীয় এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করার কথা ভাবেন যা প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ করে।
বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এসব ভবনে কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অবাস্তব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শহরের এই উঁচু ভবনগুলিতে, সাত বা আট তলার উপরে, স্বাভাবিকভাবেই যথেষ্ট বাতাস থাকে যে প্রায়শই ফ্যানের প্রয়োজন হয় না। সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনারও এই ধরনের ভবনগুলিতে ইনস্টল করা হয়।
পানিভবনের একজন প্রকৌশলী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ ও পানি মন্ত্রণালয়ের সচিবালয় পরিদর্শনে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকারি অফিস-আদালত নির্মাণের ক্ষেত্রে ঘেরা ভবন নির্মাণ না করে প্রাকৃতিক আলো-বাতাসে যাওয়ার পরিকল্পনা করা। কিন্তু আমাদের পাবলিক বিল্ডিং সহ অনেক অফিসে সেন্ট্রাল এসি আছে। ফলে এসব ভবনে যেই কাজ করুক না কেন, সব ফ্লোরেই এসি চলবে। সিঁড়ি, লবি এবং লিফটের জায়গাতেও এসি ব্যবহার করা হয়।
সরকারী ভবনগুলোতে একাধিক এসি এবং সেই সাথে বিদ্যুৎ এর ব্যবহার নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা চলছে এবং যেখানে দেখা গিয়েছে সরকার বিদ্যুৎ বাচানোর জন্য বিভিন্ন নিয়ম করছে অন্যদিকে সরকারী বিভিন্ন জায়গায় সেটা মানা হচ্ছে না, একাধিক প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার জন্য সিলিং ফ্যান টানা যায় না। সৌন্দর্য রক্ষায় সেখানে এসি বসাতে বাধ্য হচ্ছে। নগরীর সরকারি ভবনগুলোতে কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না বসালে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হতো। এসব ভবনে এসির জন্য যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয় তা দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব।