সম্প্রতি একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাকে প্রহার করার ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার ঘন্টা না পেরোতেই গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা উঠে আসে। ঘটনা সুত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়িতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাকে পিটিয়ে আহত করেছে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
গত মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। আহত প্রধান শিক্ষিকা মৌসুমী ত্রিপুরা মহালছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত। অভিযুক্ত সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার শুভায়ন খীসা খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে কর্মরত।
আহত প্রধান শিক্ষক জানান, সকালে বিদ্যালয়ের নড়বড়ে গেট মেরামতের আবেদন নিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে গেলে শুভায়ন খীসা আমার সাথে কথা বলেনি। অভদ্র আচরণ করে। এক পর্যায়ে তিনি আমাকে গালিগালাজ করেন। পরে সে আমাকে ঘুষি মেরে আহত করে। সহকর্মীরা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। এই শিক্ষক আরো দাবি করেন, গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষা কর্মকর্তা শুভায়ন খীসা আমাকে বিয়ে করেন। কিন্তু চিনতে পারছে না। স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে আমাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। আজ আমাকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মিথিলা বড়ুয়া জানান, আহত মৌসুমী ত্রিপুরার মাথায় আঘাত লেগেছে। তার চোখের নিচেও সেলাই দিতে হয়েছে। তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন, একটি সিটি স্ক্যানের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন।
তবে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার শুভায়ন খীসা হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি অফিসে দাপ্তরিক কাজ করছিলাম। এরই মধ্যে প্রধান শিক্ষিকা ফাইল নিয়ে আমার রুমে আসেন। ও আমার হাত ধরে কথা বলছিল। অভদ্র আচরণ করার জন্য তার সাথে আমার ঝগড়া হয়েছিল। একপর্যায়ে দরজায় ধাক্কায় তিনি আহত হন। সহকর্মীরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তবে এই কর্মকর্তা শিক্ষককে বিয়ে করার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, এটা মিথ্যা ও বানোয়াট।
বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি খাগড়াছড়ির সভাপতি অজিন্দ্র কুমার ত্রিপুরা জানান, ঘটনার পর প্রধান শিক্ষক সমিতির নেতা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অভিযুক্ত শুভায়ন খীসার সঙ্গে কথা বলেন। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার কণিকা খীসা মনসুমী ত্রিপুরায় বিদ্যালয়ের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকলেও তিনি কেন মিস্টার শুভায়নের কাছে গেলেন? আমি সেটা বুঝতে পারছি না। যতদূর জানি তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এটা হয়তো অনেকেই জানেন। আহত শিক্ষিকা এখন স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি পেতে চান। কিন্তু অফিস চলাকালীন এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা দুঃখজনক। তবে প্রধান শিক্ষিকাকে বিয়ে করার বিষয়টি অস্বীকার করছেন শিক্ষা কর্মকর্তা।
আহত প্রধান শিক্ষককে হাসপাতালে দেখতে যান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন। তিনি বলেন, কিভাবে ঘটনাটি ঘটেছে তা এখনো জানি না। ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এখনো ওই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর অনেকেই দুঃখ প্রকাশ করেছেন। যদিও ওই শিক্ষিকা দাবি করছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তার স্বামী। তবে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় বাড়িতে সীমাবদ্ধ রেখে বিদ্যালয়ে শালীনতা বজায় রাখা উচিত ছিল বলে মনে করছেন অনেকে।