Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / বিদেশ যাওয়ার জন্য খালেদা জিয়াকে দরখাস্ত করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানালেন আইনমন্ত্রী

বিদেশ যাওয়ার জন্য খালেদা জিয়াকে দরখাস্ত করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানালেন আইনমন্ত্রী

বিএনপি সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা কখনো কিছুটা ভালোর দিকে, আবার কখনো খারাপ হচ্ছে, এমনটাই জানিয়েছেন তার চিকিৎসকেরা। তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ প্রদানের জন্য খালেদা জিয়ার পরিবার এবং বিএনপির নেতাকর্মীরা সরকারের নিকট দাবি করে আসছে। তাকে বিদেশ নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার লক্ষ্যে কয়েকবার বেগম জিয়ার ছোট ভাই সরকারের নিকট আবেদন করেন। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে জানানো হয়, একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার নজির নেই। কয়েকদিন আগে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা, আইন মন্ত্রীর নিকট চিকিৎসা বিষয়ে একটি স্মারকলিপি জমা দেন। খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে আইন বিশ্লেষণ করে আইন মন্ত্রনালয় থেকে মতামত পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু ইতিবাচক কোনো ফলাফল আসেনি।

এবার দুর্নীতিতে দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে তাকে কীভাবে দরখাস্ত করতে হবে- সেই প্রক্রিয়া আবারো জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। মন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া যদি বলেন- আপনারা আমাকে যে শর্তযুক্ত (শর্তে) ছেড়ে দিয়েছেন, এটা আমি মানি না। আমাকে জেলে নিয়ে যান, আমি আবার দরখাস্ত করব। তখন উনি আবার দরখাস্ত করতে পারেন।’

বুধবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) বার্ষিক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এখানেও বলছি, সংসদেও বলেছি। শর্তযুক্ত শর্তে তিনি সাজা স্থগিতে যে মুক্তি পেয়েছেন, সেটি যদি না মেনে পুনরায় জেলে যেতে চান, সেটাও হতে পারে।’

‘এই অবস্থায় ফৌজদারি কার্যবিধিতে কোথাও নেই যে তাকে আমরা আগের দরখাস্তের বিবেচনায় বিদেশ যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারব। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কাউকে বিদেশ যেতে দেওয়া যাবে না, এটা আমি কখনো বলিনি। একবার নিষ্পত্তিকৃত কোনো দরখাস্ত আবার পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় নেই।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আইনে আছে শর্তযুক্ত, শর্তমুক্ত। খালেদা জিয়ার দরখাস্ত নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। সরকারকে আইনের মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। এই দরখাস্ত সেটি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। আমার কথা হল, আমি যেটা বারবার বলে আসছি, একটা নিষ্পত্তি করা দরখাস্ত, আইনে পুনর্বিবেচনা করার ক্ষমতা আমার নাই। এখন খালেদা জিয়া ‘নতুন করে’ একটি আবেদন করলে তার ওপর আলোচনা হতে পারে।’

এভার কেয়ার হাসপাতাল তার (খালেদা জিয়ার) জন্য সর্বশেষ প্রযুক্তিতে চিকিৎসা করছে উল্লেখ করে আনিসুল হক জানান, ‘আমি যতটুকু খবর পেয়েছি, কিছুটা তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এখানে তিনি (খালেদা জিয়া) যতটুকু সম্ভব সুচিকিৎসা পাচ্ছেন। এইটুকু আমি আপনাদের বলতে পারি। সেখানে সরকারের কোনো হাত নেই। তাদের ইচ্ছেমতো তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং পাচ্ছেন।’

৭৬ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বহু বছর ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। অসুস্থতার জন্য টানা ২৬ দিন ওই হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ৭ নভেম্বর বাসায় ফেরেন তিনি। এর ছয়দিনের ব্যবধানে খালেদা জিয়াকে আবার ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির পর ১৪ নভেম্বর দিবাগত রাতে তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে সিসিইউতে নেওয়া হয়।এখন তার ‘পরিপাকতন্ত্রে’ রক্তক্ষরণ এবং লিভার সিরোসিসের কথা জানান চিকিৎসকরা।

তার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

এর আগে গত এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন খালেদা জিয়া। পরে করোনা পরবর্তী জটিলতায় ২৭ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি হন। সে সময় এক মাসের বেশি সময় হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি ছিলেন। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে ১৯ জুন বাসায় ফেরেন। পরে করোনার টিকা নিতে তিনি দুই দফায় মহাখালীর শেখ রাসেল ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে যান।

উল্লেখ্য, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেওয়াটা এখন খুব জরুরী হয়ে পড়েছে। তিনি কিছু খেলে সেটা ব’মি করে বের করে দিচ্ছেন। তার চিকিৎসা বোর্ড আরো জানায়, বেগম জিয়ার এ অবস্থা চলতে থাকলে তার শারীরিক অবস্থা যেকোনো সময় আশ’ঙ্কার দিকে যেতে পারে। বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়াকে মুক্তি চাওয়ার মাধ্যমে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবি তুলে সভা-সমাবেশ এবং প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাকে দেশে থাকতে হবে এমন শর্ত দিয়ে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়া হয়েছে। তিনি হাসপাতলে বেশ ভালো চিকিৎসা পাচ্ছেন, এমনটাই জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

 

 

About

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *