Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / বিদেশ ভ্রমণে বাংলাদেশ সরকারের নিষেধাজ্ঞায় যারা পড়তে চলেছে

বিদেশ ভ্রমণে বাংলাদেশ সরকারের নিষেধাজ্ঞায় যারা পড়তে চলেছে

সরকার মানি লন্ডারিং, হুন্ডি ও স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। নগদ ডলার ও সোনা পাচার রোধে কাজ শুরু হয়েছে। বিদেশ থেকে বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি কমানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। একটি চক্র বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের বাইরে এসব পাচার করতে প্রায়ই বিদেশে যাচ্ছে। তাদের পারিবারিক অবস্থা তেমন ভালো নয় এবং বিদেশে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম নেই। আমদানি করা সোনায় তাদের নিজস্ব কোনো বিনিয়োগ নেই। একটি শক্তিশালী গডফাদার চক্রের সহায়তায় তারা পেশা হিসেবে বারবার বিদেশ ভ্রমণের নামে নগদ ডলার দেশের বাইরে পাচার করছে।  প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স নিয়ে স্বর্ণ কিনে দেশে আনছেন। সেই স্বর্ণ বিক্রির টাকায় ডলার কিনে ফের বিদেশ যাচ্ছে। এসব বন্ধে ঘনঘন বিদেশ সফরকারীদের তালিকা তৈরি শুরু করেছে সরকার। অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে কেউ যাতে বিদেশ ভ্রমণ করতে না পারে সেজন্য ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসব চক্রের তালিকা পাঠানো হয়েছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, অর্থ পাচার, চোরাচালান ও হুন্ডির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে শতাধিক ব্যক্তিকে পর্যায়ক্রমে বিদেশ যেতে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২৫ জনের পাসপোর্টের ফটোকপি ও ছবি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে পাঠানো হয়েছে। আরো শতাধিক অভিবাসনের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। এভাবে একের পর এক টাকা পাচারকারীদের তালিকা চলে যাবে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে। আটক বা গ্রেফতারের পর গডফাদারদের নাম প্রকাশ করা হবে।

জানা গেছে, গত এক বছরে বিদেশে যাওয়া সন্দেহভাজনদের তালিকা চেয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশকে চিঠি দিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া মানি লন্ডারিং ও স্বর্ণ চোরাচালান রোধে বিমানবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ১২ সদস্যের ৪টি নজরদারি দল গঠন করেছে। একজন যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে চার শিফটে তারা বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালন করবেন।

ঢাকা কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মিনহাজ উদ্দিন বলেন, বিশ্বব্যাপী এখন ডলার সংকট চলছে। আমাদের এখানেও আছে। এসব কারণে মুদ্রা পাচারের ঘটনা বেশি ঘটছে। এসব রোধে আমরা কাজ করছি। এ ইউনিটের তৎপরতায় বিমানবন্দর হয়ে ডলার পাচার থেকে শুরু করে সব ধরনের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ হবে বলে আমরা আশা করছি। নতুন এসব প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে ডলার পাচার ও স্বর্ণের চোরাচালান বন্ধ করে একদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো হবে, অন্যদিকে দেশে নগদ ডলারের প্রবাহ বাড়ানো হবে। চলমান তীব্র ডলার সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিমানবন্দর কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে কেউ কেউ ঘন ঘন বিদেশে যাচ্ছেন। তারা বেশিরভাগই যাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ও সিঙ্গাপুরে। ২/১ দিন থেকেই আবার দেশে ফিরে আসছেন। এভাবে এক মাসের মধ্যে তিন-চারবার বিদেশ সফরের নজিরও রয়েছে। তাদের বিষয়ে গোয়েন্দারা খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, তারা খুব সাধারণ মানুষ। আর্থিক অবস্থাও ভালো না। বিদেশে ব্যবসায়িক কোনো কর্মকাণ্ডও নেই। নিজের টাকায় বিদেশ ভ্রমণ করার সক্ষমতাও নেই। মূলত তারা পাচারকারী গডফাদারদের ক্যারিয়ার হিসাবে এসব সফর করছেন। হুন্ডিবাজরা স্বর্ণ কিনে ক্যারিয়ারের মাধ্যমে দেশে পাঠায়। এখন থেকে ক্যারিয়ারের স্বর্ণ কেনার অর্থের উৎসের বিষয়ে কড়াকড়িভাবে হিসাব নেওয়া হবে। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ যারা ঘন ঘন বিদেশ যান তাদের প্রথমে শনাক্ত করা হবে। এরপর তাদের গডফাদারদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হবে। ফলে দেশ ও প্রতিবেশী দেশে হুন্ডির টাকায় স্বর্ণসহ মূল্যবান পণ্য বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে। এ কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হলে হুন্ডির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমবে এবং রেমিট্যান্সের হার বাড়বে।

গোয়েন্দা তদন্তে দেখা গেছে, বিদেশে যাওয়ার সময় ভ্রমণ কোটা অনুযায়ী ১২ হাজার ডলার নিয়ে যাচ্ছেন এসব ব্যক্তি। খরচ করছেন ১০০ ডলারেরও কম।বাকি ডলার বিদেশে পাচার হচ্ছে। তিনি বিদেশ থেকে আসার সময় ব্যাগেজ নিয়মে ১১৭ গ্রাম ওজনের সোনার বার নিয়ে আসছেন। প্রবাসীদের রেমিটেন্স দিয়ে এসব স্বর্ণ বিদেশ থেকে কেনা হচ্ছে। দেশে তাদের স্বজনদের কাছে টাকা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনো বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসেনি। এভাবে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসায় প্রবাসীদের ডলার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। আবার বিদেশে যাওয়ার সময় ডলার নিয়ে যাচ্ছে। এর বাইরেও অনেকে বিদেশ থেকে প্রবাসীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে তা নগদ ডলার আকারে এনে দেশের কার্ব মার্কেটে তা বিক্রি করে দিচ্ছেন চড়া দামে। ওইসব ডলারও বিদেশ চলে যাচ্ছে। ঢাকায় ডলারের কার্ব মার্কেটগুলোয় নতুন বান্ডিল আকারে ডলার পাওয়া যাচ্ছে। যেগুলো দেখলে মনে হবে ব্যাংক থেকে তোলা। বিদেশ থেকে নগদ ডলার সংগ্রহ করে দেশে পাঠিয়ে খোলা বাজারে বিক্রি করা হয়।

ঢাকা কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে সন্দেহভাজনরা কতবার বিদেশে গেছে তা জানতে গত সপ্তাহে বিশেষ পুলিশ সুপারকে (ইমিগ্রেশন) চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘রাজস্ব সুরক্ষা, চোরাচালান ও মানি লন্ডারিং রোধ করে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে ঢাকা কাস্টম হাউস। তার বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকি, বিদেশ থেকে নিষিদ্ধ ও সীমাবদ্ধ পণ্য পরিবহনসহ চোরাচালানের অভিযোগ রয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এসব যাত্রীর মাধ্যমে অবৈধ পরিবহন ও বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের ঝুঁকি রয়েছে। সন্দেহজনক পাসপোর্টধারী যাত্রীদের বিদেশ ভ্রমণের সময় বিমানবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে জানাতে অনুরোধ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এক বছরে কতবার কোন কোন দেশে ভ্রমণ করেছেন তা জানাতে যাত্রীদের অনুরোধ করা হয়। সরকারের রাজস্ব রক্ষা, বৈদেশিক মুদ্রা পাচার ও অর্থ পাচার রোধে বিষয়টি জরুরি।

প্রসঙ্গত, ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির মতে, দেশ থেকে অস্বাভাবিক হারে মানি লন্ডারিং বেড়েছে। বাংলাদেশ থেকে চারভাবে অর্থ পাচার হচ্ছে। ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। প্রতি বছর গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। বিশ্বের শীর্ষ ৩০টি মানি লন্ডারিং দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ।

About Nasimul Islam

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *