কর দেশের জাতীয় আয়ের একটি অন্যতম এবং প্রধান উপায়। তাই কর ফাঁকিকে একটি বড় ধরনের অপরাধ হিসেবে ধরা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট প্রণয়ন শুরু হয়েছে। এবার এই বাজেটে করের ওপর বিশেষ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যাদের বিদেশে সম্পদ রয়েছে তাদেরকে করের আওতায় এনে কর ফাঁকি দেওয়া ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনার প্রস্তাব রাখা হচ্ছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে দেশের করদাতাদের কোনো প্রশ্ন ছাড়াই আয়কর রিটার্নে বিদেশে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দেখিয়ে দেশে আনার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। যাকে অর্থ পা”চারের দায়মুক্তি বলা হয়। গত ৯ জুন সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করার সময় অর্থমন্ত্রী এ সুযোগ দেন। এবার বাজেট পাসের সময় বিদেশে যাদের সম্পদ রয়েছে তাদের শাস্তির উদ্যোগও নিচ্ছে সরকার।
জানা গেছে, যদি কোনো ব্যক্তির বিদেশে সম্পদ থাকে এবং তিনি তার আয়কর রিটার্নে তা উল্লেখ না করেন এবং সরকার তা জানতে পারে, তাহলে তাকে বিদেশে সম্পদের সমপরিমাণ জরিমানা করা হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট করদাতার দেশের যেকোনো সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং জরিমানা আদায় করা হবে।
সূত্র জানায়, বিদেশে গোপন সম্পদের মালিক করদাতাদের জন্য এমন বিধান যুক্ত করে বুধবার জাতীয় সংসদে অর্থ আইন পাসের প্রস্তাব করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একই সঙ্গে আয়কর রিটার্নে বিদেশে সম্পদ প্রদর্শনের সুবিধা বাড়ানোরও প্রস্তাব করবেন তিনি। বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিদেশে থাকা অস্থাবর সম্পদ দেশে না এনে শুধু আয়কর রিটার্নে দেখালে ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। জানা গেছে, এই করের হার ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেউ বিদেশে সম্পদ না দেখিয়ে ট্যাক্স বা জরিমানা আদায় করলে তা খুঁজে বের করা খুবই কঠিন। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) একসঙ্গে কাজ করলে এটা অসম্ভব নয়। প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, করদাতারা তাদের আয়কর রিটার্নে ১৫ শতাংশ ট্যাক্স এবং স্থাবর সম্পত্তি ১০ শতাংশ করে বিদেশে তাদের স্থাবর সম্পদ জমা দিতে পারবেন।
আর কোনো করদাতা বিদেশ থেকে সম্পদ দেশে আনলে তাকে দিতে হবে মাত্র ৬ শতাংশ কর। করদাতা কীভাবে সেই সম্পদগুলি অর্জন করেছেন তা নিয়ে কর কর্তৃপক্ষসহ অন্য কোনও কর্তৃপক্ষ কোনও প্রশ্ন তুলবে না। সরকারের এই উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীসহ সব মহল। তারা বলছেন, এটি বিদেশে সম্পদ পাচার ও দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে। কারণ দেশে একজন ব্যক্তি করদাতার সর্বোচ্চ করের হার ২৫ শতাংশ। সে সম্পদ দেশে পাচার করলে তাকে দিতে হবে মাত্র ৭ শতাংশ কর। আবার সম্পদের উৎস প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই।
এদিকে বাজেটে প্রস্তাবিত কম হারে করপোরেট কর দেওয়ার শর্তও কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, কর্পোরেট ট্যাক্সের কম সুবিধা পেতে কোম্পানির নগদ লেনদেন বছরে সর্বোচ্চ ১২ লাখ টাকা হবে। জানা গেছে, এই শর্ত শিথিল করে নগদ লেনদেন বার্ষিক কমপক্ষে ৩৬ লাখ টাকা বা তার বেশি করার প্রস্তাব করবেন অর্থমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, কর ফাঁকি দেয়ার বিষয়ে সরকার শিথিলতা দেখিয়ে কালো টাকা সাদা করার জন্য নানা ধরনের সুযোগ দিয়ে থাকে সরকার। সরকার এবার বিদেশে যারা সম্পদের মালিক, এমন করদাতাদের জন্য সুবিধা প্রদানের চিন্তা-ভাবনা করছে। পরিশেষে বলা যায়, যারা নিয়মিত কর পরিশোধ করেন তাদের বিষয়ে সরকার নানা ধরনের সুবিধা ও রাখছে।