রাজধানীসহ সারাদেশকে অস্থিতিশীল করতে সম্প্রতি ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পাঁচ নেতার তত্ত্বাবধানে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে দলটি। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পাওয়া পাঁচ নেতা হলেন সজিব ওয়াজেদ জয়, সালমান এফ রহমান, হাসান মাহমুদ, বাহাউদ্দিন নাসিম ও মাহবুবুল আলম হানিফ। আওয়ামী লীগের এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মূল টার্গেট হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।
গোপনীয়তা রক্ষা করে ছদ্ম পরিচয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপধর্মবিষয়ক সম্পাদক আমীর হামজার সাথে কথা বলে জানা যায়, সারা দেশে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে গোপনীয়তা রক্ষা করে হামলার নির্দেশ আছে বিদেশে পলাতক নেতাদের কাছ থেকে। আশ্বাসও আসছে বড় পুরস্কারের।
ছাত্রলীগ নেতা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ যেহেতু এখন মাঠে নামার কোনো ইস্যু ও সাহস পাচ্ছে না সেহেতু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়ে ইস্যু তৈরি করার চেষ্টা চলছে। এ কারণে পদবিহীন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের যুব কর্মীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। পুরাতন বিভিন্ন সময়ের বড় সমাগমের সাথে আওয়ামী লীগের স্লোগানজুড়ে দিয়ে চালানো হচ্ছে ভার্চুয়াল গুজব। এর জন্য খরচ করা হচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ।
আমির হামজার কাছ থেকে আরও জানা গেছে, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলার পরিকল্পনা সফল হলে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে আওয়ামীপন্থী বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও সুশীল সমাজের লোকজনকে মাঠে নামানো হবে। অজ্ঞাত আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা ধীরে ধীরে সেখানে যোগ দেবে। সমাবেশ অব্যাহত রাখতে পারলে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ধীরে ধীরে সারাদেশে নেতাকর্মীদের মাঠে নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।
রাজধানীর কাঁটাবন এলাকার স্বচ্ছসেবক লীগের আরেক নেতার কাছ থেকে জানা গেছে, সংখ্যালঘুদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজ ও বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে কাজ করছেন ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী। এ কাজের জন্য সংখ্যালঘু ও সুশীল সমাজের কিছু ব্যক্তির কাছে টাকা পৌঁছে দিতে জয়দেব নন্দীকে অর্থ দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো: আব্দুর রাজ্জাক। আব্দুর রাজ্জাক ২০১২ সালে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে ১৩ জন নিহতের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত। তথ্য দাতা এ নেতা আব্দুর রাজ্জাকের অনুসারী।
আওয়ামী লীগের এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রাজধানীর শাহবাগে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দাবিতে গত শুক্র ও শনিবার শাহবাগে জড়ো হয় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সহ-সভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিবের নেতৃত্বে একটি দল। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, আসন্ন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল স্থপতি ইকবাল হাবিবের। এমনকি সারা দেশে সহিংসতা করতে যে হাজার কোটি টাকার পরিকল্পনা করা হয়েছে তার অর্ধেকটাই বরাদ্দ পেয়েছে বাপা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাপার এক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যখন গণহত্যা চলেছে তখন বাপা ও বাপার কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে কথা বলেননি। অতীতেও কোনো গুম, খুন ও নির্যাতন নিয়ে বাপা কথা বলেনি। এটা বাপার কাজও না। এবারই প্রথম বাপাকে এসব নিয়ে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইকবাল হাবিব বাপার অনেক কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়ে এ কাজে যুক্ত করেছেন। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি ডিএম জোবায়ের ও তার ভাই দুবাই প্রবাসী ব্যবসায়ী আবদুল কাইয়ুমের তত্ত্বাবধানে বাজেটের তৃতীয় অংশ ঢাকায় এসব সমন্বয়কারীর কাছে পৌঁছেছে। গত দুই-তিন দিনের মধ্যে সালমান এফ রহমানের এপিএস শফিকুল ইসলামের মাধ্যমে কিছু অর্থ স্থপতি ইকবাল হাবিবের কাছে পৌঁছেছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এরই মধ্যে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতার কাছে এ প্রকল্পের অর্থ পৌঁছে দিয়েছে যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ মিরপুর বিআরটিএর নিয়ন্ত্রক ও শেওড়াপাড়া আওয়ামী লীগ নেতা শামীম। ৬ আগস্টের পর থেকে গোপালগঞ্জে অবস্থান করছে শামীম। এ টাকার সংস্থান করেছে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও গাইবান্ধা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদ হাসান রিপন। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলে নেতাকর্মীদের মাঠে নামাতেও টাকার মজুদ পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব রয়েছে এ নেতার ওপর।
এদিকে রাজধানীর শাহবাগ চত্বরকে টার্গেট করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে মাঠে নামানোর চেষ্টা করছে দলটি। এসব সামাজিক সংগঠনে জনবল সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে। অর্থের বিনিময়ে এসব কর্মসূচিতে রাজধানী ও আশপাশের এলাকা থেকে স্বল্প পরিচিত ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের এনে এসব কর্মসূচিতে দাঁড় করাচ্ছেন সম্্রাট।