সম্প্রতি বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদেশ গুলোর অবস্থান নিয়ে নতুন করে প্রশ্নে উঠেছে।কারণ তারা দীর্ঘ দিন ধরে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য চাপ দিয়ে আসছে।কিন্তু আওয়ামীলীগ সরকার আবারও ১৪ ও ১৮ সালের মতো আরেকটি একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করেছে।তবে তাদের দেওয়া নির্বাচন নিয়ে আগের বিবৃতি গুলোর সঙ্গে এখনকার অবস্থান নিয়ে প্রশ্নে ওঠেছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ গোলাম মাওলা রুন হুবহু পাঠকদের জন্য নিচে দেওয়া হলো।
ইদানীং আমার কী হয়েছে বলতে পারব না। আমার ওপর জিন-পরীর বদ আছর হয়েছে নাকি আমাকে কেউ বান মেরেছে, নাকি আমি আমার নফসে আম্মারায় প্রতারিত হচ্ছি স্পষ্ট বুঝতে পারছি না। তবে আমার ওপর যে শয়তানি আছর নেই তা আমি বিচক্ষণ হলফ করে বলতে পারি। শয়তান সম্পর্কে আমার যে গবেষণা তাতে আমি নিশ্চিত, কোনো শয়তান মরে গেলেও আমাকে যন্ত্রণা দিতে আসবে না। আমি আমার অতীত কর্মকাণ্ড এবং সাম্প্রতিক চিন্তা-চেতনা দিয়ে শয়তানের মনে এমন ভয় ধরিয়ে দিয়েছি যে, বিধাতার সেই সৃষ্টিটি নিরাপদ দূরত্বে থেকে সারাক্ষণ ভাবে আমি অতোসব শয়তানি বুদ্ধি পাই কোত্থেকে এবং আমার বুদ্ধির বাস্তব প্রয়োগ কিভাবে নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। আমি ক্রমেই নিজেকে বিস্তৃত করার যে অবিরত চেষ্টা চালাচ্ছি এবং যেভাবে সফলতা লাভ করছি তাতে মনে হচ্ছে আমেরিকা নামক দেশটি ভালো চলছে না- আমি যদি সেখানকার প্রেসিডেন্ট হই তবে দুনিয়ার যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটবে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার চিন্তা আমার মাথায় এমনি এমনি আসেনি। আমার মনে হয়েছে- আমার মতো পণ্ডিত বর্তমান জমানায় কেউ নেই- অতীতে ছিল না এবং আগামীতে আসবে না। আমার হাতের রয়েছে জাদুকরী ক্ষমতা। আমি যা স্পর্শ করি তা রাতারাতি রত্নে পরিণত হয়। দুনিয়ার যতসব ছাই ভস্ম, ফসিল কিংবা বর্জ্য সব কিছুই আমার স্পর্শে মহামূল্যবান হীরা-মণি-মুক্তা-জহরতে পরিণত হয়। ফলে আমি চিকিৎসা বিজ্ঞানের ‘চ’ না জেনেও মহান চিকিৎসক, কোনো মন্ত্রতন্ত্র না জেনেও মহাতান্ত্রিক এবং দেবত্বের উল্টোরথের যাত্রী হয়েও লোকজনের কাছে অলৌকিক ক্ষমতাধারী বলে বিবেচিত হয়ে আসছি।
আমার হস্ত-পদের ন্যায় আমার মুখখানি বিশেষ করে আমার জিহ্বা ও ঠোঁটের ক্ষমতা রীতিমতো বিস্ময়কর সাড়া জাগিয়েছে। আমার মুখনিঃসৃত সব কিছুই অমৃত। আমার হাঁকই আইন। আমার ক্রোধ অন্যের মনে মৃত্যুভয় সৃষ্টি করে এবং আমার হাসিতে চার দিকে বসন্তের আমেজ সৃষ্টি হয়ে যায়। আমি যা বলি সবই ইতিহাস হয়ে যায় এবং আমার বাণী সঙ্কলনের জন্য তাবৎ জ্ঞানী-গুণীরা মশি হাতে দিবানিশি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। আমার জবান সত্য ও মিথ্যার নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করে। আমি যা বলি তাই সত্যি এবং আমার জবানের বিরুদ্ধের সব কিছুই মিথ্যা। আমার হুকুম আমার হুঙ্কার আমার গীত-সঙ্গীত সবাই শুনতে বাধ্য এবং আমার মুখনিঃসৃত যে কোনো শব্দের বিরোধিতা আমার রাজ্যে অমার্জনীয় অপরাধ।
আমার মস্তিষ্ক নিয়ে আমি নিজেই মাঝে মধ্যে আশ্চর্য হয়ে যাই। আমার কাছে মনে হয় কেন আমার জন্ম শত বছর আগে হলো না এবং কেন আমি আরো শত বছরের দীর্ঘায়ু পাবো না। আমার এই আফসোসের মূল কারণ আমার মস্তিষ্কের উর্বরতা, যা দিয়ে আমি তামাম মুলুক ওলটপালট করে ফেলতে পারি। আমি মরুভূমিতে ফুল ফোটাতে পারি, নদী সাগরে তুফানের বিপরীতে নৌকা চালিয়ে প্রশান্ত আটলান্টিক পাড়ি দিতে পারি এবং হিমালয়ের চূড়ায় পৌঁছে বরফের ঘর বানিয়ে এস্কিমোদের মতো লম্ফঝম্ফ করতে পারি। সুতরাং আমেরিকার মতো একটি সুপার পাওয়ারের অধিকর্তা হলে আমি যে সারা দুনিয়ার ওপর একের পর এক চমক সৃষ্টি করতে পারব সেই আশা থেকেই দেশটির প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছি।
আপনারা হয়তো এতক্ষণে আমার প্রতি বিরাগ হয়ে মেজাজ নষ্ট করে ফেলেছেন আর বলছেন, ব্যাটা ফাজলামোর আর জায়গা পাও না। আমেরিকা কী তোমার বাপের দেশ-নাকি উগান্ডা বুগান্ডার মতো সভ্যতা বিবর্জিত ভূখণ্ড। সেখানে কি ইহজন্মে রাতের ভোট, বিনা ভোট, ভোট জালজালিয়াতির ইলেকশন হয় যে, তুমি ফুট করে ফুটে উঠবা আর টুস করে প্রেসিডেন্টের গদিতে বইস্যা পড়বা। অথবা আমেরিকা কী এমন একটি ভূ-খণ্ড যেখানে তোমার নবম নৌবহর পাঠিয়ে নৌকার মাঝিদের হাতিয়ার দিয়ে কলম্বাসের মতো ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ক্ষমতা দখল করে নিবা।
আমি জানি যে, আপনাদের যদি বলার সুযোগ দিই তবে আপনারা আমার চৌদ্দগোষ্ঠী তুলে তুই তুকারি শুরু করবেন, যাচ্ছেতাই বলবেন এবং সেই কারণেই আমি বাকস্বাধীনতা বলতে কেবল নিজের বাক্যের স্বাধীনতাকে বুঝি। সুতরাং আপনাদের আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়ে কী করব তা বলার আগে বলে নিই কিভাবে আমি সেখানকার প্রেসিডেন্ট হবো। এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করছি না। কারণ আমার মস্তিষ্কের জটিলতা এবং ইহজগতে ক্ষমতা লাভের ছলচাতুরী অনুভব করার ক্ষমতা আপনাদের নেই। অন্য দিকে, আপনারা যেহেতু আমার সব কথা মানতে বাধ্য এবং আমার হুকুম তামিলের জন্যই আপনারা বেঁচে আছেন সেহেতু এত ব্যাখ্যা বিবৃতিতে না গিয়ে ফটাফট আসল কথায় চলে যাই।
আমেরিকার প্রেসিডেন্টরূপে যেদিন শপথ নেবো সেদিন আমি এমন সাজুগুজু করব যা দেখে বিশ্ববাসী হতভম্ব হয়ে যাবে। মার্কিন ঐতিহ্য ভঙ্গ করে আমি শপথগ্রহণের অনুষ্ঠান মিশিগান অঙ্গরাজ্যের এমন একটি গঞ্জে নিয়ে যাবো যা দুনিয়াবাসীর কল্পনাতেও থাকবে না। আমেরিকার যতগুলো নভোযান যতগুলো নৌবহর এবং যতগুলো কৃত্রিম উপগ্রহ রয়েছে সব স্থানে পটকা ফুটিয়ে, লেজাররশ্মির বিকিরণ ঘটিয়ে এমন আতশবাজির খেলা শুরু করব যা দেখে দুনিয়াবাসীর অন্তরাত্মা কেঁপে উঠবে। প্রাচীন মিসরীয় রাজদরবারে ফেরাউন দ্বিতীয় আমেন হোতেপ অথবা ফেরাউন প্রথম সেতির রাজ্যাভিষেকে যেমন জাঁকজমক ছিল তদ্রুপ জাঁকজমকসহকারে আমার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করব।
শপথ নেয়ার পর আমি মোটর শোভাযাত্রা নিয়ে মিশিগান থেকে সড়কপথে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে আসব। ১০ হাজার গাড়ির বিরাট রাজকীয় বহর নিয়ে আমি যেসব সড়ক অতিক্রম করব সেই সকল সড়কে ২৪ ঘণ্টা সাধারণ জনগণের হাঁটাচলা ব্যক্তিগত যানবাহন ও গণপরিবহন নিষিদ্ধ থাকবে। কেউ নির্দেশ অমান্য করলে তাকে বা তার বাহনটিকে ক্ষেপণাস্ত্র মেরে উড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। আমার চলাচল নিরাপদ, আনন্দময় ও জাঁকজমকপূর্ণ করার জন্য রাস্তার দুই পাশে এমন আলোকসজ্জার ব্যবস্থা হবে যা এর আগে কেউ কখনো দেখেনি কিংবা শোনেনি। আমার গাড়ির বহরের সমান্তরালে আকাশে মার্কিন জঙ্গিবিমান হেলিকপ্টার এবং ড্রোনগুলো ত্রিমাত্রিক ফ্লাইং শো করতে থাকবে। রাস্তার দুই পাশে সেনাবাহিনীর জওয়ানরা প্যারেড করতে থাকবে এবং দুই মাইল পরপর আমার জন্য বিরাট বিরাট তোরণ নির্মাণ করা হবে।
রাজধানীতে পৌঁছে আমার প্রথম কাজ হবে একটি অনুগত মন্ত্রিপরিষদ গঠন করা। আমার বিশ্বস্ত ও অনুগত লোকদের মধ্যে যারা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের জন্য ইতোমধ্যেই অন্ধ বধির বোবা হয়ে হাঁটা-চলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে তাদের নিয়ে একটি যুতসই মন্ত্রিপরিষদ গঠন করব। যারা আমার সামনে কথা বলে না, আমার বাণী ছাড়া কিছু শ্রবণ করে না এবং আমার হুকুমের বাইরে কোনো কিছু চিন্তা করে না এমন অনুগত লোকদের যে লম্বা তালিকা আমি প্রস্তুত করেছি সেখান থেকে সেইসব জ্ঞানপাপীদের মনোনীত করব যারা ক্ষমতার লোভে এবং আমার পদ লেহনের লালসায় সব জ্ঞান-গরিমা বুদ্ধি-শুদ্ধি বিবেক বোধ মানবতা ইত্যাদি জলাশয়ে নিক্ষেপ করেছে এবং আমার রঙে রঞ্জিত হয়ে ধেই ধেই করে নাচছে।
মন্ত্রিপরিষদ গঠনের পর আমি সেনাবাহিনী নৌবাহিনী বিমানবাহিনী, পুলিশ এফবিআই-সিআইএ প্রভৃতি সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পরিবর্তন আনব। যাদের পেট, কোমর এবং নিতম্বে প্রচুর চর্বি জমা হয়েছে এবং গাল দুটো ফুলে টুসটুসে হয়েছে অমন অথর্বদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাব। তারপর বাহিনীগুলোতে নিয়মিত অনুশীলন শরীর চর্চা এবং শৃঙ্খলা রক্ষার বিধান শিথিল করে নিয়মিত পানাহার গান বাজনার আয়োজন করব। সবাইকে অস্ত্র চালনার পাশাপাশি, সারিন্দা, দোতারা, একতারা এবং হারমোনিয়াম বাজানোর তালিম বাধ্যতামূলক করব। তাদের মধ্যে যারা তবলা ও বেহালা নিখুঁতভাবে বাজাতে পারবে তাদের দ্রুত পদোন্নতির ব্যবস্থা করব। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট এবং মাখন পনির খাইয়ে একেকজনকে এমন বানাব যে, জাপানি সুমো কুস্তিগিররা পর্যন্ত ভয় পেয়ে যাবে।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর আমেরিকার বিচার বিভাগের ওপর কড়া নজর রাখব; বিশেষ করে ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস ফেডারেল কোর্ট এবং মার্শাল ল কোর্টগুলোকে আমার আস্তিনবদ্ধ করার জন্য দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাব। তারপর অদ্ভুত একটি নাম দিয়ে নতুন একটি বাহিনী তৈরি করব যারা আমার হুকুমে অভদ্র লোকদের ভদ্রতা শেখাবে, বেয়াদবকে আদব শেখাবে এবং আমার হুকুম আহকাম ইচ্ছা অনিচ্ছা স্বপ্নের পথে বিঘ্ন সৃষ্টিকারীদের দাঁত গাল, পিঠ ও পশ্চাৎদেশের ওপর বিশেষ থেরাপি প্রয়োগ করবে।
একটি অনুগত সাংবাদিক লীগ তৈরির মানসে সিএনএন, ফক্স প্রভৃতি ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এবং নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট প্রভৃতি সংবাদপত্রের ওপর রাষ্ট্রশক্তি প্রয়োগ করে সেখান থেকে অনুগত মণি মাণিক্য বের করে আনব। তারপর নিজের অভিলাষগুলো সেই সব সোনার ছেলে-মেয়েদের মাধ্যমে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেবো। মার্কিন ঐতিহ্য বাদ দিয়ে নিজের ঐতিহ্য বলবৎ করার জন্য আমি হোয়াইট হাউজকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করব। একটি বিদেশী রাষ্ট্রের দেয়া বাড়িতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকতে পারে না- এই অজুহাতে হোয়াইট হাউজের পরিবর্তে আমার জন্য নতুন একটি সুরম্য প্রাসাদ তৈরি করব। স্পেনের আল হামরা প্রাসাদ, দিল্লি ও আগ্রা দুর্গ এবং সুলতান সুলেমানের প্রাসাদের সমন্বয় করে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ও ব্যয়বহুল রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করব।
মার্কিন বুদ্ধিজীবী মহল মানবাধিকার সংস্থা, এনজিও, ব্যবসায়ী সংগঠনের ওপর নিজের প্রভাব প্রতিষ্ঠার জন্য আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা ও সফলতার প্রতীকগুলোকে ওদের ওপর বসিয়ে দেবো। হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্টকে চা-সিঙ্গারা ছমুচার মূল্য নিয়ন্ত্রণ শিক্ষা দেবো। ইয়েল-কর্নেল জন হপকিনস প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট এবং ফ্যাকাল্টি প্রধানদের খিচুড়ি রান্না, হা ডু ডু খেলা, লুডু খেলা এবং কচুরিপানা দিয়ে বার্গার তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। বড় বড় মানবাধিকারের প্রবক্তাদের এমন থেরাপি দেয়া হবে যে, তারা সবাই আমার ভাষায় কথা বলবে- আমার দৃষ্টিতে দুনিয়া দেখবে এবং আমার ইচ্ছা-অনিচ্ছায় প্রাত্যহিক জীবন পরিচালনা করবে।
উল্লেখিত কর্মগুলো আমি শপথ নেয়ার নব্বই দিনের মধ্যেই নিষ্পন্ন করব। তারপর বিশ্বভ্রমণে বের হবো এবং আমার অভিনব চিন্তাচেতনা ও কর্ম দিয়ে দুনিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি করে দেবো।