পদ্মা সেতু তৈরী করা নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হয় দেশে ও দেশের বাহিরে। তবে কোন বাধাকে পাত্তা না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাহসি উদ্যোগে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তে আজ স্বপ্নের সেতু প্রকল্প বাস্তবে রুপ লাভ করেছে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের বিশাল পরিবর্তন হবে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী। এবার পদ্মা সেতু নিয়ে বিদেশীদের সম্পর্কে যে মন্তব্য করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বিদেশিদের কথায় অনেকে লাফালাফি করেন। তবে বিদেশিদের কথায় কখনো লাফানো উচিত নয়।
তারা প্রায়শই নিজেদের সুবিধার জন্য কৌশল উদ্ভাবন করে।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) পদ্মা সেতু উদ্বোধন শেষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিদেশ থেকে কার্যত প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আলোচনায় ড. এ কে আব্দুল মোমেন বিশ্বব্যাংককে বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে সেই সময় কোনো কোনো বিদেশি সংস্থার লোকজন সেতু আদৌও হবে কিনা সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। আর তাদের কথায় সেসময় দেশের মধ্যেও কিছু লোক লাফালাফি করেন। তবে পদ্মা সেতু তৈরির মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করেছি, আমরা চাইলেই করতে পারি। বিদেশিরা অনেক সময় নিজেদের স্বার্থে ফন্দি ফিকির করেন। তারা নিষেধাজ্ঞা দেয়। বিদেশিদের কথায় কখনো লাফানো উচিত নয়।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের পরিচয়। আমাদের আত্মবিশ্বাস। বঙ্গবন্ধুর বাণী আরও একবার প্রমাণ করল বাঙালিকে কেউ চাইলেই দমাতে পারবে না।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জন্য একটি গর্বের অধ্যায়। তবে এই সেতু নির্মাণের সময় মিথ্যা অভিযোগ এনে অপমানিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত প্রমাণ হলো প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই সঠিক।
বিশেষ অতিথি প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলেই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।এলডিসিভুক্ত অনেক দেশই বিদেশি সংস্থার ঋণের বেড়াজালে পড়েছে । পদ্মা সেতু নির্মাণে আমাদেরও এই ফাঁদে পড়তে হয়েছে। তবে সবগুলো বেড়া ভেঙে সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতুর ৪১টি স্প্যান। তবে আমি মনে করি স্প্যানটি একটি। তিনি হলেন শেখ হাসিনা। অনেকেই পদ্মা সেতুর সমালোচনা করেছেন। তবে সেতুটি উদ্বোধনের পর এখন আর সেই সমালোচনা নেই।
বিশেষ অতিথি প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মশিউর রহমান বলেন, যেকোনো বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সাহস ও জনকল্যাণ প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর সাহস ও জনকল্যাণমূলক প্রচেষ্টা ছিল। তা ছাড়া এ প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হতো না।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, পদ্মার বাস্তবায়ন একটি লিটমাস টেস্ট। তাতেই উত্তীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু এখন নতুন বাংলাদেশের পরিচয়। পদ্মা সেতু এখন নতুন ব্র্যান্ডিংয়ের নাম।
জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, সঠিক তথ্য না জেনে অনেকেই ওই সময় টকশোতে পদ্মা সেতু ষড়যন্ত্রের কথা বলেছিলেন। বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানও উড়ন্ত চিঠিতে বিশ্বাস করে। তারা আর্থিক সাহায্য থেকে দূরে সরে গেছে। অনেক কিছুই হয়েছে। তবে যারা সেতুর বিরোধিতা করেছিল তারা এখন খুশি।
বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তের ফসল। এটা একটি মেগা ফিজিক্যাল স্ট্রাকচার। এখন আমাদের প্রয়োজন মেগা সোশ্যাল স্ট্রাকচার বাস্তবায়ন। সেটা সম্ভব হলে দেশের মানুষ আরও সুফল পাবে।
আলোচনা সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল কিন্তু কোন বাধাকে পাত্তা না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আজ পদ্মা সেতু বাস্তব রুপ লাভ করেছে। পদ্মা সেতু মাধ্যমে বাংলাদেশের নতুন এক পরিচয়ে পরিচিত হয়েছে বিশ্বের বুকে।