Saturday , November 23 2024
Breaking News
Home / Countrywide / বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদ: বিধবা সোনিয়ার টার্গেট বয়স্কদের শেষ জীবনের সঞ্চয়

বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদ: বিধবা সোনিয়ার টার্গেট বয়স্কদের শেষ জীবনের সঞ্চয়

কানাডার নাগরিক। সুন্দরী বিধবা সতী পাত্রীর জন্য বয়স্ক পুরুষ চাই’। পত্রিকায় এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদ পেতেন শামীমা রহমান খান সোনিয়া (৩০)। এরপর বিজ্ঞাপনে দেওয়া মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করতেন অনেকে। সোনিয়ার পক্ষ থেকে তার পিএস তুষার কল রিসিভ করতেন। পাত্র পক্ষকে তুষার বলতেন- ‘ম্যাডার সরাসরি কারও ফোন রিসিভ করেন না। আপনার জীবনবৃত্তান্ত ইমেল করুন. যদি ম্যাডাম পছন্দ করেন, আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করব। সমাজের উচ্চপর্যায়ের মানুষকে বোঝানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিয়ের নামে প্রতারণা করে আসছে সোনিয়া ও তার দল।

উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের আব্দুল আজিজ খান নামে এক ব্যবসায়ী সর্বশেষ তার চক্রের মধ্যে পড়েন। বিয়ের পর কানাডায় নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার কাছ থেকে ১৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা নেন সোনিয়া। প্রতারকদের কবলে পড়েছে বুঝতে পেরে উত্তরা পূর্ব থানায় সোনিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই ব্যবসায়ী। এরপর রোববার উত্তরা এলাকা থেকে সোনিয়াকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডিসি মোরশেদ আলম বলেন, সোনিয়ার কানাডার কোনো নাগরিকত্ব নেই। সে কিছু নথি জাল করে এই প্রতারনার ফাঁদ তৈরি করেছে। একজন বয়স্ক ধনী ব্যক্তিকে পেলে তিনি তার সাথে যোগাযোগ করতেন। চার তারকা বা পাঁচ তারকা হোটেলে বসে বিয়ের কথা বলতেন। এরপর ভিসা, কাবিন ও বিয়ের জন্য কেনা কাটি করার কথা বলে লাখ লাখ টাকা আদায় করতেন। যখন তিনি বুঝতে পারলেন যে টাকা সংগ্রহ করা আর সম্ভব নয়, তখন তিনি সমস্ত মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন এবং কয়েকদিন আড়ালে থাকেন। পরে আবার নতুন সিম কার্ডের বিজ্ঞাপন দিয়ে অন্য কারো সাথে প্রতারণার চেষ্টা করত।

প্রতারিত ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ খান মামলার জবানবন্দিতে বলেন, ২০০৫ সালে স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি একাই বসবাস করছিলেন। ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দেখে তিনি সোনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।  কিন্তু ফোনের উত্তর দেয় অন্যরা এবং জীবনবৃত্তান্ত পাঠাতে ই-মেইল নম্বর দেয়। জীবনবৃত্তান্ত পাঠানোর কয়েকদিন পর কনে ফোনে কথা বলত। কয়েকদিন পর ওয়েস্টিন হোটেলে দেখা হয় তাদের।

তখন কনে বলল- সে কানাডার অটোয়াতে থাকে। বিয়ে করতে ঢাকায় এসেছেন। বারিধারা ডিওএইচএসকে জানান, তিনি এক মামার বাড়িতে থাকেন। দুজনের মধ্যে আলোচনার পর বিয়ের তারিখও ঠিক করা হয়। প্রথম স্ত্রীর ব্যবহৃত চেইন ও কানের দুলও দেওয়া হয় সোনিয়াকে। এ ছাড়া কিছু নতুন গহনা ও জামাকাপড় কিনে তাকে উপহার দেওয়া হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিয়ে সম্পন্ন হয়। ওইদিন কেবিন থেকে নগদ ২ লাখ টাকা নেন সোনিয়া। বিয়ের পর শারীরিক সমস্যার কারণে বাড়িতে না এসে ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে থাকতে শুরু করেন সোনিয়া। তবে কানাডায় টিকিট, ভিসা প্রসেসিংসহ অন্যান্য খরচের কথা বলে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় ১৪ লাখ টাকা আত্মসাত করেন এই নারী। এরপর ২৭ মে থেকে সব মোবাইল নম্বর বন্ধ করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

পুলিশের উত্তরা বিভাগের এডিসি বদরুল হাসান জানান, সোনিয়া নামের ওই নারী মূলত বয়স্ক ও ধনী পুরুষদের শেষ জীবনের সঞ্চয়কে টার্গেট করেন। তিনি মূলত অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। মায়ের সঙ্গে থাকেন মিরপুরে। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে অনেক আগেই। ওই পরিবারে একটি শিশুও রয়েছে। অনেক দিন ধরে বিয়ের ফাঁদ পেতে অনেককে নিঃস্ব করে তুলছিলেন।

About Babu

Check Also

সংস্কারের নামে ভয়াবহ দুর্নীতি-লুটপাট

সংস্কার ও উন্নয়নের নামে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় দেখিয়ে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *