সম্প্রতি ব্যবসায় বিনিয়োগ করে টাকা ফেরত না পেয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহনন করেন মারা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. আনিসুর রহমান গাজী। সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা সবস্ব বিক্রয়ের মাধ্যমে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। কিন্তু বিনিয়োগকৃত অর্থ ফিরে না পাওয়া তিনি হতাশায় পড়ে যান। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিজের শরীরে নিজেই আগুন ধরিয়ে দেন প্রকাশ্যে।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় মঙ্গলবার (৫ জুলাই) সকাল সোয়া ৬টায় তিনি মারা যান।
জানা গেছে, হ্যানোলাক্স কোম্পানির কাছে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা পাওনার দাবি নিয়ে গত ২ মাস আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন করেছিলেন আনিস। এরপর করেন সংবাদ সম্মেলন। বিভিন্ন সময়ে পাওনা টাকা ফেরত চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দেন তিনি। টাকা ফেরত না দেয়ায় বিচারের দাবি জানান হেনোলাক্সের মালিক মো. নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের।
এর আগে গত ৩১ মে টাকা ফেরত চেয়ে স্ট্যাটাস দেন আনিস। তার স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরা হলো।
প্রিয় শুভাকাঙ্ক্ষী ভাই বোন বন্ধু। আমি মো. আনিসুর রহমান(গাজী আনিস)একজন কবিতা প্রেমিক মানুষ। নিজে হয়তো ভালো কবিতা লিখতে পারি না কিন্তু আমি ভীষণভাবে কবিতা ভালবাসি।
আমি একজন ব্যবসায়ী এবং আমার জীবনে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছি। আমি আমার উপার্জনের বেশিরভাগ স্থানীয় স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ এবং অসহায় নিঃস্ব মানুষদের জন্য উত্সর্গ করেছি, পাশাপাশি একটি সুখী, আরামদায়ক এবং সৎ জীবনযাপন করেছি। আমি তিন মেয়ের বাবা। আমার বড় মেয়ে মেধা রহমান আঁচল এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। মেঝা মেয়ে প্রতিভা রহমান অহনা এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং ছোট মেয়ে জয়িতা রহমান অবনী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।
২০১৬ সাথে হেনোলাক্স গ্রুপের কর্ণধার মো. নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাদের সাথে আমার সখ্যতা এবং আন্তরিকতা গড়ে উঠে। আমি কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেছি এবং কুষ্টিয়া শহরেই বসবাস করি।
তবে প্রতি মাসে যখন নিজের প্রয়োজনে ঢাকায় আসি, তখন তাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতাম ও আমরা উপহার বিনিময় করতাম এবং ভালো রেস্টুরেন্টে একসঙ্গে খেতাম এবং বিভিন্ন জায়গায় যেতাম। যেহেতু আমি আরামদায়ক জীবনযাপনে অভ্যস্ত এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী, তাই আমি সবসময় আমার নিজের গাড়িতে ভ্রমণ করি। নুরুল আমিন ও ফাতেমা আমিনের সাথে নিজ খরচে একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণ করেছি।
২০১৮ সালে কলকাতার হোটেল বালাজিতে একসঙ্গে থাকার সময় তারা আমাকে বলেছিল যে হেনোল্যাক্স গ্রুপে বিনিয়োগ করার এবং যথেষ্ট লাভ করার সুযোগ রয়েছে। আমি প্রথমে দ্বিমত পোষণ করলেও পরে রাজি হয়েছি এবং প্রথমে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। আমি পরে তাদের পীড়াপীড়িতে আরও ২৬ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম (অধিকাংশ টাকা আত্মীয় এবং বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করা হয়েছিল)।
স্ট্যাটাসে তিনি আরও বলেন, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থার কারণে এবং বিনিয়োগের সময় তাদের অনুরোধে চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তি করা হয়নি, তবে প্রাথমিক চুক্তি করা হয়েছিল। আমরা বিনিয়োগের পরে চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তি সম্পাদনের জন্য বারবার অনুরোধ করি কিন্তু তারা দেরি করে চলেছে। এক পর্যায়ে তারা প্রতি মাসে লভ্যাংশ দেওয়া বন্ধ করে দেয় এবং বেশ কয়েকবার তারা তাদের লোকজনের দ্বারা আমাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করেন। বর্তমানে লভ্যাংশসহ আমার ন্যায্য পাওনা তিনকোটি টাকার অধিক।
তিনি বলেন, “আমি তাদের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া আমলী আদালতে দুটি মামলা করেছি যা বিচারাধীন রয়েছে। গত ২৯ মে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে সকল কাগজপত্র সম্মানিত সাংবাদিকদের কাছে পেশ করি।” তুহিন আহমেদ মোবাইল ও রাজু হামিদের মাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।