দেশের বাইরে পাচার হওয়া অর্থের ৮০ শতাংশই ব্যাংকের মাধ্যমে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪ হাজার 106টি সন্দেহজনক লেনদেনের খবর পাওয়া গেছে। এসব লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২২ লাখ ৮৫ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি। একই অর্থ বছরে মানি লন্ডারিংয়ের ৫৯টি মামলা হয়েছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএফআইইউর প্রধান কর্মকর্তা মো. মাসুদ বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন উপপ্রধান মো. রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মো. সারোয়ার হোসেনসহ বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা। বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ৮০ শতাংশ অর্থ পাচার হয় ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংক বন্ধে সহযোগিতা না করলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। কারণ একবার টাকা পাচার হয়ে গেলে তা ফেরত আনা যায় না। এ সময় তিনি বলেন, পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে ১০টি দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকগুলো মোট ৩ কোটি ৮৬ লাখ নগদ লেনদেন জমা দিয়েছে। এসব লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২২ লাখ ৮৫ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ২১০ কোটি টাকার ১ হাজার ২৩৮টি নগদ লেনদেনের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
প্রকাশিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, এক বছরের ব্যবধানে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৬৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ ৫ হাজার ৫৩৫টি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ ধরনের লেনদেনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ১০৬টিতে। এসব সন্দেহজনক লেনদেনের মধ্যে ১২ হাজার ৮০৯টি হয়েছে ব্যাংকের মাধ্যমে, ৯০১টি মানি রেমিটারে এবং ১২১টি ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে (এনবিএফআই) হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৮ হাজার ৫৭১টি। বিএফআইইউর প্রধান বলেন, সব সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) অপরাধ নয়। লেনদেন সন্দেহজনক হলে তদন্ত করি। যদি কোনো অপরাধের তথ্য-প্রমাণ?মিলে তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই। এ সময় তিনি জানান, বিএফআইইউর তথ্যের ভিত্তিতে অর্থ পাচারের মামলা হয়েছে ৫৯টি। এর মধ্যে দুদক মামলা করেছে ৪৭টি, সিআইডি ১০টি এবং এনবিআরের বিশেষ সেল ২টি। এগুলো এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিএফআইইউয়ের কাছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), পুলিশের বিভিন্ন দফতর, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ১ হাজার ৭৫ বার আর্থিক তথ্য পাওয়ার আবেদন করেছে। মুদ্রা পাচারের মতো সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য দেওয়ার হারও বেড়েছে। গত অর্থবছরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কাছে ৯০ বার তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ।