আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহনের মাধ্যমে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর নির্বাচন কমিশন। এসবের ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সংগঠন ও সুশীল সমাজের সাথে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন। যদিও রাজনৈতিক সব দল এই বৈঠকে অংশ গ্রহন নেয়নি কিন্তু যারা অংশগ্রহন করেছে তাদের সাথে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানানো হয় নির্বাচন কমিশন পক্ষ থেকে। তবে বিরোধী দল বিএনপি নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না এমন বক্তব্যে ভিন্ন পরামর্শ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কাউকে ধরে বেঁধে নির্বাচনে আনবো না বলে মন্তব্য করে যা বললেন (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
দেশের রাজনীতিতে অন্যতম প্রধান দল বিএনপি। তাদের চাওয়ায় বাধা নেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি)।
দলের রাজনৈতিক কৌশলে হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ারও কমিশনের নেই। তাই তাদের ধরে বেঁধে নির্বাচনে আনতে যাবেন না প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সিইসি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা অংশগ্রহণমূলক চাই। সক্রিয় অংশগ্রহণমূলক চাই। ঢিমেতালে নয়। সক্রিয় প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হলে ভারসাম্য সৃষ্টি হয়। পার্টিরাই সারাবিশ্বে এই ভারসাম্য সৃষ্টি করে। সকলের প্রতি আন্তরিকভাবে উদাত্ত আহ্বান থাকবে আপনারা আসেন, সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখেন ও সহায়তা করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, বিএনপি অন্যতম প্রধান দল। তারা অংশগ্রহণ করলে নির্বাচন আরও অংশগ্রহণমূলক হবে। এখন বিএনপির যে রাজনৈতিক কৌশল, আমরা কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের কৌশলের ওপর হস্তক্ষেপ করবো না, করতে পারি না, সে এখতিয়ার আমাদের নেই। এখন বিএনপি যেটা চাচ্ছে, সে ব্যাপারের আমাদের কোনো রকম বাধা নেই। তবে আমাদের উপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে আমরা সেই পথেই এগিয়ে যাব। কালকে যদি আমাকে উচ্ছেদ করে দেন, হবে। সেটার জন্য আমি তো মর্মাহত হবো না।
তিনি আরও বলেন, আজ দুই পক্ষের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে। এই অর্থে সংলাপ শেষ হলো। সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করার জন্য আমি সংলাপ করেছি। সংলাপের পর আমরা লিখিত আকারে তাদের জানিয়েছি। ইভিএম নিয়ে বৈঠকও করেছি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ইভিএম নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা আমাদের নিজস্ব বিবেচনায় দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে ৩০০, ১০০, ১০ বা ২০টা নয়, আমরা একটা যৌক্তিকভাবে ব্যালট পেপারে ১৫০ আসন ও দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাদের লিখিত বক্তব্য আছে। আমি সেগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনেকেই বিশ্বাস করেন, অনেকে করেন না এই মেশিন নিয়ে।তবে আমাদের সিদ্ধান্ত আদৌ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কিনা; সেটা নির্ভর করবে এটা পাওয়া যাবে কিনা, তার ওপর। কারণ, এটার বেশিরভাগ পার্টস আসবে বিদেশ থেকে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সংলাপ থেকে আমরা শুধু দল নয়, সরকারকেও মতামত জানিয়েছি। কারণ সরকারকেও জানা উচিত দলগুলো কী বলছে। কিন্তু সরকার কোনো দলের নয়। সেই বিভাজনটাকে মাথায় রেখে আমরা সরকারকে জানিয়েছি।
বিরোধী দলগুলো চায় অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলোকে এমনটাই জানিয়েছে ইসি। আগামী মার্চে চূড়ান্তভাবে ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। দুই সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত রোডম্যাপ জানাতে পারবে নির্বাচন কমিশন।
ইভিএম নিয়েও ইসি খুঁটিনাটি কাজ করছে। ইভিএমের মধ্যে ওই ধরণের কারচুপি, কার্ডের মাধ্যমে ভোট সম্ভব কিনা খতিয়ে দেখছে কমিশন। কারচুপির বিষয় কিন্তু পাওয়া যায়নি। ব্যক্তি শনাক্তকরণের পর আঙ্গুলের ছাপ দিলেই ছবি ভেসে আসবে। এরপর ব্যালট ওপেন হবে। ৪০ সেকেন্ড থাকবে। এর মধ্যেই ভোট দিতে হবে বলে জানান সিইসি।
তিনি আরও বলেন, কেউ কেউ বুথে দাঁড়িয়ে থাকলে ইভিএমে ভোট নিতে অসুবিধা লক্ষ্য করেছেন। তিনি যদি ভোটারকে বলেন- আপনি যান, ভোটটা আমি দিয়ে দেব। সেই সংকট আমাদের মাথায় আছে। এজন্য আমরা সিসিটিভি ক্যামেরা দেব। আমরা প্রিজাইডিং অফিসারকে কঠিন দায়িত্ব অর্পণ করব। কেউ যদি বৈধ বা অবৈধভাবে ভোট বাধাগ্রস্ত করে তবে তাৎক্ষণিক ভোট বন্ধ করে ওই লোককে বের করে দেবেন। তিনি না পারলে পুলিশ ডেকে বের করে দেবেন। তিনিও পারলেন না, পুলিশও পারলেন না, তাহলে ভোট বন্ধ করে দেবেন। এছাড়া প্রিজাইডিং কর্মকর্তা যদি মাস্তানকে যদি অ্যালাউ করেন; তবে শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নতুন প্রকল্পে ইভিএম সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এটা আমাদের পরিকল্পনা। প্রকল্প যদি অনুমোদন হয়, বাস্তবায়ন যদি করতে না পারি তবে ব্যালটে নির্বাচন করবো।
দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ইসির একার পক্ষে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব নয়। দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। এটা একা ইসির হাতে ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে, যদিও আমরা চেষ্টা করব।
ইসির অধীনে স্বরাষ্ট্রসহ চার মন্ত্রণালয় নেওয়ার বিষয়ে সিইসি আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট সংস্থার ওপর ইসির কর্তৃত্ব আছে। এতদিন হয়তো প্রয়োগ করা হয়নি। মন্ত্রণালয় ন্যস্ত করার বিষয়টি এটা ইসির অধীনে হতে পারে না। এটা সংবিধানে বলা আছে। কাজেই কেউ যদি চায় আমরা মন্ত্রী হবো; এটা সংবিধান অ্যালাউ করবে না। যে ক্ষমতা আছে সেটাই প্রয়োগ করলে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করা সম্ভব বলেও জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
প্রসঙ্গত, নির্বাচনে সকল দলের অংগ্রহন গুরুত্বপূর্ন না হলে প্রশ্নবিদ্ধ হবে নির্বাচন বলে মন্তব্য করেন (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহনের জন্য ইসির পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে কিন্তু না আসলে আমাদের বাধ্য করার সুযোগ নেই।