“বিএনপি যদি ক্ষমতায় যায়, তাহলে নিজেরা একা যাবে না”

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই দেশের রাজনৈতিক দলের নেতারা অনেকটা সরব হয়ে উঠছেন। এদিকে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি সরকারের বিভিন্ন ধরনের অক্ষমতা তুলে ধরে সমালোচনা করছে। দেশের রাজনৈতিক দলের নেতারা ক্ষমতাসীন দল আ.লীগের সমালোচনা করতে ছাড়ছে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও সকল সমালোচনার জবাব দিয়ে চলেছেন। এবার আন্দোলন নিয়ে দৃড় প্রতিজ্ঞার কথা জানালেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালে হয় মরব না হয় গণতন্ত্র বাঁচাবো।’ মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর বিএনপির পশ্চিমাঞ্চল উত্তরা-পশ্চিম থানার কামারপাড়া ব্রিজ এলাকায় আয়োজিত জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।

নজিরবিহীন জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, লোডশেডিং, গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে নূরে আলম, আবদুর রহিম ও শাওন হ”/ত্যার প্রতিবাদে গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে সমাবেশ করছে বিএনপি।

আজকের সমাবেশটি ছিল ৪র্থ জনসভা। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে বিএনপির আরও ১২টি স্পটে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, জনগণের পাশে থাকতে চাই। এরই মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে আমাদের তিন সন্তান মায়ের বুক খালি করেছে। কে দেবে উত্তর? ভোটের আগে আমরা মানুষের দ্বারে দ্বারে যাই, আশ্বাস দিই, ভোট চাই। আর আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনের আগে ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিল। তারা জনগণের ভোটে বিশ্বাস করে না। তারা চেষ্টা করে কিভাবে ষড়যন্ত্র করে বিদেশী শক্তির মদদে ক্ষমতায় আসা যায়।

তিনি বলেন, ‘সেই আশা চুরমার হয়ে গেছে। প্রতিবার এটা ২০১৪ হবে না, ২০১৮ হবে না। ২০২৩ সালে আমরা হয় মরব না হয় গণতন্ত্র রক্ষা করব।’

রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার কামারপাড়া ব্রিজ এলাকায় সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার পথে বাঁধার মুখে পড়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। সমাবেশে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের লাঠিসোঁটা দিয়ে পিটিয়ে ধাওয়া দেয়।

সমাবেশে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও অভিযোগ করে বলেন, এই সভায় আসার পর আওয়ামী দাঙ্গা বাহিনী আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হাম”লা চালায়, এতে আমাদের ২৫-৩০ জন ছেলের রক্ত ​​ঝরছে। টুকু এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী রাজারবাগে পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করেছিল। আমি সেদিন তাদের সঙ্গে ছিলাম। কিন্তু যখন দেখি ওই পুলিশ ভাইরা কথায় কথায় মানুষের ওপর গু”লি চালাচ্ছে, তখন আমাদের কষ্ট লাগে। এই পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। এই পুলিশ এখন মানুষের বুকে গু”লি করে র’/ক্তাক্ত করে ​​দেয়। কিন্তু আমি সব পুলিশ ভাইদের দোষ দিচ্ছি না। বেশিরভাগ পুলিশ বন্দুক তাক করতে চায় না। কিন্তু তারা চাকরির ভয়ে এটা করে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলন করছে জনগণের জন্য, বিএনপি আন্দোলন করছে গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য। জনগণের ভোটে বিএনপি ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেলে একা যাবে না। এখন যারা সংগ্রাম করছে তাদের নিয়ে সরকার গঠন করবে। নতুন বাংলাদেশ উপহার দেবে- এটাই আমাদের অঙ্গীকার।

খালেদা জিয়ার কাছ থেকে শেখার আহ্বান জানিয়ে সরকারের উদ্দেশে টুকু বলেন, “জনগণের ভাষা বুঝে গণতন্ত্রের জননী খালেদা জিয়া সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংযোজন করেছিলেন। সেই নির্বাচনে পরাজয় বরণ করে বিরোধী দলের আসনে বসেছিলেন। আপনারাও খালেদা জিয়ার কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারেন। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা মেনে নিয়ে নির্বাচন দিন। দেখেন কে হারে, কে জিতে।’

সমাবেশ শেষে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগসহ ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আমাদের নেতাকর্মীদের পথে পথে হামলা ও বাধা দেয়। সমাবেশে ২৫-৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়, তাদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন।অনেক বাধা সত্ত্বেও আমরা সমাবেশ সফল করেছি।

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির বক্তব্য ভিন্ন জানিয়েছে বিএনপি নির্বাচনে এলে শর্তসাপেক্ষে আসবে। নির্দলীয়, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান শুধুমাত্র নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে সম্ভব। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি নির্বাচনে আসবে এমনটাই জানিয়েছে দলটির নেতারা। অবশ্য আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।