ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে এক বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে অভিযুক্ত খুনি হারুন অর রশিদকে কুপিয়ে হত্যার সময় উল্লাস করছে। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে উপজেলার গোয়েশপুর বাজারে হারুনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর আসামি রুবেল মিয়াকে মারধর করা হয়।
হ্যাকিংয়ের ভাইরাল ভিডিওতে হারুনকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। অভিযুক্ত রুবেল তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। তারপর হাত তুলে আনন্দ প্রকাশ করলেন। তারপর আরো দুইটা ল্যাপ দিল।
হারুন পাইথল ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার বাড়ি গফরগাঁও উপজেলার পাইথল ইউনিয়নের গোলবার গ্রামে। তিনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হিসেবে গোয়েশপুর বাজারে একটি মেডিকেল সেন্টার চালাতেন। খুনের আসামি রুবেল মিয়ার বাড়ি একই ইউনিয়নের নেওকা গ্রামে। রুবেল মিয়া গ্রামে নিয়মিত থাকতেন না। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত রুবেল মিয়া মানসিক ভারসাম্যহীন। এ ছাড়া সে এলাকায় মাদকসেবী ও সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত।
এ ঘটনায় রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার বাদীর ছেলে ফেরদৌস আহমেদ দীপ্ত বলেন, সন্ত্রাসী গোয়েশপুর বাজারে রুবেল কেটে উল্লাস করে আমার বাবাকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। খুনির ফাঁসি চাই। তিনি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে অন্য কোনো ঘটনা আছে কিনা তা দাবি করেন।
পিঠোল ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম জানান, নিহত হারুন অর রশিদ ওই ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। সে গোয়ালবার গ্রামের মৃত খুরশেদ আলমের ছেলে। ঘাতক রুবেল মিয়া একই ইউনিয়নের নেওকা গ্রামের পল্লী চিকিৎসক শাহাব উদ্দিনের ছেলে।
পুলিশ জানায়, রুবেল মিয়ার মা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এ হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া গেলেও তারা এখনই তা প্রকাশ করবে না। রুবেল মিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হচ্ছে না। যার কারণে হত্যার সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এটি একটি উদ্দীপনামূলক ঘটনা বলে মনে হচ্ছে।
আওয়ামী ফ্যাসিবাদী পৈশাচিকতা-বিএনপির আরেকটি বর্বর উদাহরণ: হারুন অর রশিদকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ময়মনসিংহের পাগলা থানা পাইথল ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. একই সঙ্গে হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে দলটি। সোমবার এক বিবৃতিতে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ আহ্বান জানিয়ে বলেন, হারুন অর রশিদকে হ্যাকিং সারাদেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী পৈশাচিকতার আরেকটি বর্বর উদাহরণ। আওয়ামী লীগ যে একটি মানবিকতাবোধহীন রাজনৈতিক দল, তা পৈশাচিকভাবে তাকে হত্যার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। আওয়ামী লীগ খুন-গুমের সংস্কৃতি তৈরি করে অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। রক্তাক্ত জনপদ ছাড়া দেশের মানুষকে তারা কিছুই দিতে পারেনি।
তিনি বলেন, ‘একতরফাভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জোর করে ক্ষমতায় বসতে আন্দোলনরত জনগণকে ভয় দেখানোর জন্য গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-নগরে রক্ত ঝরাচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিএনপিসহ গণতন্ত্রপন্থী বিরোধী দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করা আওয়ামী লীগের অন্যতম এজেন্ডা। ভোটারবিহীন নির্বাচন তাদের ফ্যাসিবাদী চেহারাকে আরও সহিংস করে তুলেছে। সর্বশেষ শিকার হলেন আওয়ামী সন্ত্রাসী রুবেল ডা. হারুন অর রশিদ হত্যা। তবে আওয়ামী লীগ এ ধরনের হত্যা-নির্যাতন চালিয়ে টিকতে পারবে না, প্রতিটি বর্বরতা ও হত্যার মূল্য জনগণই একদিন দিতে হবে।