বিএনপি নির্বাচনে না এলে জাতীয় পার্টির অবস্থান কী হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। এ বিষয়ে করণীয় কি তা ঠিক করতে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানী কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যরা এক যৌথ বৈঠকে বসেন।
সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান কী হবে সেটা এখনই খোলাসা করবে না জাপা। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তাগিদ; দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেবে দলটি।
তবে বিদেশিদের দাবি উপেক্ষা করে সরকার বিএনপি ছাড়া নির্বাচনে গেলে আসন বাড়ানোই হবে দলটির লক্ষ্য।
দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সভাপতিত্বে চার ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নির্বাচনের তফসিল না হওয়া পর্যন্ত জাপা যেমন আছে তেমনই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। বক্তৃতা-বিবৃতিতে সরকারের সমালোচনা করলেও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যাওয়া যাবে না। আলোচনায় থাকতে বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মিসভা করবে দলটি। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে যৌথসভা থেকে জি এম কাদেরকে দেওয়া হয়েছে একক ক্ষমতা।
সভায় ৫১ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ৩৮ জন সংসদ সদস্য অংশ নেন। বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও তার ছেলে রংপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য রাহগীর আল মাহি এরশাদ সাদকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বৈঠকে অংশ নেননি। বাকি ১১ জন অসুস্থতা, ব্যস্ততা ও বিদেশে থাকায় আসতে পারেননি বলে জানিয়েছেন জাপা নেতারা। সভায় বক্তব্য রাখেন ৩৫ জন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সবাই একবাক্যে বলেছেন, আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী হবে তা ঠিক করার পরিবেশ ও সময় হয়নি।
দলটির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক চুন্নু গণমাধ্যমকে বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ভোটের এখনও তিন মাস বাকি। রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে জাতীয় পার্টি। নির্বাচনে অংশ নিলে কারও সঙ্গে জোট হবে কিনা– এ সিদ্ধান্তও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর নেওয়া হবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও জোট সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার একক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পার্টির চেয়ারম্যানকে।
জাপা সূত্রে জানা গেছে, দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদসহ সিনিয়র নেতারা বৈঠকে বলেন, আওয়ামী লীগের অবস্থান এখনো শক্ত। সরকার বিদ্যমান ব্যবস্থা অর্থাৎ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অনড়। বিএনপির আন্দোলন সরকারকে নাড়াতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানালেও কোনো বড় ধরনের হস্তক্ষেপ করেনি। ফলে বিকল্প চিন্তা করার সুযোগ নেই জাতীয় পার্টির। রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকতে হবে। তা না হলে আগামী সংসদে নিজেদের জায়গা হারাবেন বলে বৈঠকে জানিয়েছেন জাপার একাধিক সংসদ সদস্য।