২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে, কিন্তু এরপর অনেকটা একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবারও সেই ধরনের একতরফা নির্বাচনের করার ইঙ্গিত দিয়েছেন সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, যদি কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে না আসে সেই দায় তাদের নয়। আর যদি ভোট বিষয়ে কেউ বাধা প্রয়োগ করতে আসে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে সরকার। সেটা তাদের দায়িত্ব, আশা করি সরকার সেটা করবে।
রোববার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার না হলে ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন বয়কটের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, কোনো দল নির্বাচনে না এলে তার দায় আমাদের নয়। পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার পর সংবিধানে যে সময়ে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে- সেটা ২০২৩ সালের শেষের দিকে হোক বা ২০২৪ সালের শুরুতে- যখন নির্বাচন হবে, আমরা আশা করি সবাই তাতে অংশগ্রহণ করবে।”
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে একটি রিট আবেদনের শুনানির পর ২০১১ সালের প্রথম প্রান্তিকে হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করলে আওয়ামী লীগ সরকার ওই বছর নির্বাচিত সরকারের অধীনে ভোট ব্যবস্থা ফেরায়।
এর প্রতিবাদে ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। একই সঙ্গে আন্দোলনে বানচাল হয় নির্বাচন। তবে বিরোধীদের বাদ দিয়ে একতরফা নির্বাচনে ক্ষমতায় ফিরেছে আওয়ামী লীগ।
জাতীয় পার্টি ও বিএনপি একতরফা নির্বাচন করেছে। কিন্তু তাদের সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। জাতীয় পার্টির সরকার ১৯৮৮ সালে এক বছরের কিছু বেশি সময় ধরে এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটের পর বিএনপি সরকার টিকে থাকে কয়েক মাস।
তবে আওয়ামী লীগ সরকার মেয়াদ পূর্তি করে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন দেয়। সেই নির্বাচনের আগে আবার আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও বিএনপি এতে অংশ নেয়। ২০ দলীয় জোটের পাশাপাশি গঠিত হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে আরেকটি জোট।
তবে সেই নির্বাচনে আগের রাতেই ভোট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনে আবার তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ফিরে গেছে। আর আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দলের এই দাবি নাকচ করে আলোচনায় না বসার কথাও বলেছে। তারা বলছেন, হাইকোর্ট ও জাতীয় সংসদ উভয়েই তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু নিষ্পত্তি করেছে। সেটি ফেরার আর সুযোগ নেই।
বিএনপি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে পিছিয়ে গিয়ে বলছে, না হলে দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে আবারো সরকারের শক্ত অবস্থান তুলে ধরেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। শেখ হাসিনার সরকার গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের শিকড় মজবুত করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। গণতন্ত্রের বর্তমান উন্নয়ন হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে। তাই আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, এই সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর। এরপর সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে।
কারণ এটি একটি গণতান্ত্রিক দেশ। গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তাই সঠিক সময়ে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
সরকার ও বিরোধী দলগুলো এ অবস্থানে থাকলে ২০১৩-১৪ ও ২০১৫ সালের মতো সং”ঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবার ফিরে আসে কি না, সেই আশঙ্কার কথাও বলাবলি হচ্ছে।
এ আশ”ঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘গত নির্বাচনের আগে দেখেছি মাঠে সুষ্ঠু রাজনৈতিক ব্যবস্থা নেই। আমরা আগুন স”/ন্ত্রাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপকর্ম প্রত্যক্ষ করেছি।
দেশের জনগণের প্রতি আমাদের একটি বড় ধরনের দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমরা দেশের উন্নয়নের জন্য দেশের জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আমরা সেই মত অর্থাৎ প্রতিশ্রুতি মোতাবেক প্রতিশ্রুতি পূরণের চেষ্টা করছি। তবে কোন পক্ষ থেকে যদি জনগণের ভোটাধিকার খর্ব করার চেষ্টা করা হয় তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।