বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। এদিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার জন্য রাজনৈতিক পর্যায় থেকে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। তবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে এমনটা আশাবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি রাষ্ট্রদূতেরা। তবে বাংলাদেশের মানবাধিকার প্রশ্নে কিছুটা ভিন্ন মত প্রকাশ করেছে দু-একটি দেশের রাষ্ট্রদূতেরা।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলে আশা করছেন মার্কিন উপ-রাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি আর শেরম্যান। জবাবে আমি বলেছিলাম, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। তবে এটা নির্ভর করছে দল ও রাজনৈতিক ব্যক্তি, নির্বাচনে কে আসবেন বা আসবেন না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যেসব রাজনৈতিক দলগুলোর চালিকাশক্তি ও সঠিক নেতৃত্বের অভাব রয়েছে সেগুলো জনগণের কাছে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারে না। তাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারে না।
বৃহস্পতিবার নিজ মন্ত্রণালয়ের মুক্ত সম্মেলন কক্ষে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেটের সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে আমি বলেছি, আগের নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন কমিশন গঠনের সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সব স্টেকহোল্ডারকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়। কিন্তু কিছু গোষ্ঠী বা ব্যক্তি এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়নি। আমি স্পষ্ট বলেছি আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সম্মানের সঙ্গে তাদের সবকিছু জানিয়েছি। কিন্তু এর মানে এই নয় যে কেউ আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অবাধে হস্তক্ষেপ করবে। আমি এই সংবাদ সম্মেলনে আবারও বলছি, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তারা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) কতটুকু বলবে, এটি তাদের দেশে অবস্থানরত অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রদূতরা যতটুকু করতে পারেন, দয়া করে এর বাইরে যাবেন না। সেসব দেশে আমাদের রাষ্ট্রদূতরা তেমন বেশি কিছু বলতে পারেন না। আমরা অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রদূতদের আতিথেয়তা হিসাবে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দরজা খোলা রাখি, এর অপব্যবহার করবেন না। তা হলে আমাদের অন্য কিছু ভাবতে হবে।
বিএনপির মতো বড় দল নির্বাচনে না এলে তা কতটা গ্রহণযোগ্য হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার বলেন, গ্রহণযোগ্যতা ২০১৪ সালের নির্বাচনেও ছিল এবং আগামী দিনেও তা অব্যাহত থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ১১ অক্টোবর ২০২৩-২৫ মেয়াদে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য পদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ১৮৯ ভোটের মধ্যে ১৬০ ভোট পেয়ে ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ। এই ফলাফল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবাধিকারের উন্নয়ন ও সুরক্ষায় বাংলাদেশের অব্যাহত প্রচেষ্টা এবং অঙ্গীকারের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতির একটি অভিব্যক্তি। সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পেয়ে এই বিজয় অর্জনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যে মিথ্যা অপপ্রচার চলছে।
আমি ৭ অক্টোবর ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন উপ-রাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি আর শেরম্যানের সাথে দেখা করেছি। এলডিসি উত্তরণে বাংলাদেশের জন্য মার্কিন সহায়তা চাইছি। যত দ্রুত সম্ভব র্যাব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছি। এ সময় তিনি স’/ন্ত্রা’স ও সহিং”স উ’গ্রবা/’দের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার কথা জানান। ইউক্রেন যু”দ্ধ, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা এবং বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খু”নি রাশেদ চৌধুরী অবিলম্বে বাংলাদেশে প্রত্যাবাসনের আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে আন্দোলনে নামার জন্য সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম এবং ময়মনসিংহ সমাবেশ করেছে বিএনপি। বিএনপির দাবি, বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে হবে এবং সেই সাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে’।