নতুন দলে যোগদান এবং নির্বাচনের আগে পুরনো দল ত্যাগ করার প্রথা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন নয়। তা নিয়ে তৈরি হয় নানা সমস্যা। ঠিক এমনই গুঞ্জন শুরু হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে। শুধু তাই নয়, কয়েকদিন পর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সম্প্রতি দেশের বর্তমান রাজনীতির সমসাময়িক বিষয় নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়েছেন। সেখানে দলের অভ্যন্তরীণ অনেক বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন সাবেক এই সংসদ সদস্য।
এ সময় উপস্থাপক ব্যারিস্টার রুমিনের কাছে জানতে চান, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, তিনি নতুন দল করছেন না, দলে সংস্কার চেয়েছেন। তবে তিনি তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন দলকে সংস্কার করুন। এভাবে রাজনৈতিক দল চলে না। খালেদা জিয়া যতদিন সুস্থ ছিলেন দলে কোনো সমস্য হয়নি। তার অনেক কথায় ফুটে উঠেছে তারেক রহমানের কারণে দলে অসন্তোষ, ফলে দলটি ভাঙার পথে?
জবাবে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, গত পাঁচ বছর থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অত্যন্ত নিষ্ঠা, দক্ষতা ও অত্যন্ত সুশৃঙ্খল সংগঠন পরিচালনা করে আসছেন। সেই কারণেই আমি এই ভয়ঙ্কর সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে পেরেছি।
সরকার বিএনপিকে ভাঙতে কাজ করছে, এটা কি সম্পূর্ণ সত্য?
প্রশ্নের জবাবে রুমিন বলেন, সরকার দল ভাঙার লক্ষ্যে গত ১৭ বছর ধরে বিএনপির ওপর পরিকল্পিত দমন-পী”ড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। সেটি এমনভাবে রিপ্রেসন চলেছে যেটি, একটি দলের বিরুদ্ধে আরেকটি দলের রিপ্রেসন না। একটি দলের বিরুদ্ধে পুরো রাষ্ট্রের রিপ্রেসন। সেটিকে মোকাবিলা করে যেহেতু বিএনপি টিকে আছে। সরকার বারংবার চেষ্টা সত্ত্বেও ভাঙা তো দূরেই থাক, এখন পর্যন্ত সরকার বিএনপির জনপ্রিয় কোনো ব্যক্তিকে সরাতে পেরেছে?
আমরা দেখেছি, একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী যখন বিএনপি ছেড়ে নতুন বিকল্পধারা তৈরি করেন, শেষ পর্যন্ত তা টিকেনি। তার ব্যক্তিগত প্রোফাইল উজ্জ্বল কম ছিল না, তার পরও টিকতে পারেননি।
কর্নেল অলিকেও একই পরিণতি বয়ে বেড়াতে হয়েছে। তিনি এলডিপির নেতা। কিন্তু সেই এলডিপি এখন বিএনপি জোটের সঙ্গে। আরও পেছনে গেলে দেখা যাবে মান্নান ভূঁইয়াও রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারেননি। নো বডি হয়েই তাকে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হয়েছে। তারও আগে যদি যাই, বিএনপি যখন আশির দশকে, সেই সময় বিএনপি ভাঙার একটা প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। কিন্তু সফল হয়নি।
রুমিন আরও বলেন, তাই বিএনপি ছেড়ে অতীতে কেউ ভালো কিছু করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য, কেউ আওয়ামী লীগ ছেড়ে বড় কিছু করার নজির নেই। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বিএনপির ভাঙার কোনো সম্ভাব না আছে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না।
তবে একই সঙ্গে বলতে চাই— এতবড় একটি দল, সেখানে নানা মত থাকবে, ব্যক্তিগত অসন্তোষ থাকতে পারে, ব্যক্তিগত সন্তুষ্টি থাকতে পারে, ব্যক্তিগত মতামত থাকতে পারে, সেটি যে কেউ দিতে পারে।
প্রশ্ন হতে পারে মেজর হাফিজ কেন সংবাদ সম্মেলন করলেন? একজন তুচ্ছ রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার মনে হয়, তিনি সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ তথ্যমন্ত্রী তার সম্পর্কে আগেই কথা বলেছেন। সে কথা ভেসে বেড়াচ্ছিল। তখন হয়তো সাংবাদিকরা আলাদাভাবে যোগাযোগ করছিলেন। এজন্য সবাইকে ডেকেছেন তিনি। সেখানে মেজর হাফিজ স্পষ্টভাবে বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে গেলে ওই দল থেকে নির্বাচনে যাওয়া উচিত এবং বিএনপির হয়েই নির্বাচনে অংশ নেবেন।